চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিধি লঙ্ঘন করেই সুপারভাইজার!

রায়হান উদ্দিন

২০ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:২৪ অপরাহ্ণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষক পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হলে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের সুপারভাইজার হতে পারবেন না। কিন্তু সেই বিধি লঙ্ঘন করেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদের বিরুদ্ধে সুপারভাইজার হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

১২ বছর আগে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে শাস্তি দেন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট। এরপরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন সুপারভাইজার থাকার বিষয়টিকে বেআইনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ^বিদ্যালয়ের এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের গবেষণার নীতিমালার ১১নং ধারার (চ)-তে উল্লেখ আছে, একাডেমিক এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি করার দায়ে যে সকল শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় চাকুরি থেকে অপসারণ/বরখাস্ত করা হয় বা বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় অথবা চাকুরিরত অবস্থায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সে সকল শিক্ষক এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের সুপারভাইজার, যুগ্ম সুপারভাইজার, পরীক্ষা কমিটির কনভেনর বা পরীক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজে নিয়োজিত থাকলে তাদেরকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ৪৫০তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবহির্ভূত কাজ করা, বিভাগের একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে পরীক্ষা সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম থেকে ৫ বছরের জন্য অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে ড. ফরিদ উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০১২ সালের ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ৪৮২তম সিন্ডিকেট সভায় (সিদ্ধান্ত-৭২) ৫ বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ থেকে বিরত রাখার শাস্তি ২০১২ সালের ১৫ মার্চ থেকে অবশিষ্ট সময়কাল (মার্চ/১৩ পর্যন্ত) রহিত করে তাঁকে পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ করার সুযোগ দেয়। কিন্তু ওই সিন্ডিকেট এমফিল ও পিইচডি’র সুপারভাইজার হওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহামেদের অধীনে একজন গবেষক এমফিল ও তিনজন পিএইচডি করছেন। এর মধ্যে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া রেহানা এমফিল ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাজরীন-এ-জাকিয়া ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস পিএইচডি করছেন। অন্যজন হচ্ছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনা বেগম। যার পিএইচডির কো-সুপারভাইজার হিসেবেও রয়েছেন ড. ফরিদ উদ্দিন।

সাজাপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষক সুপারভাইজার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তদানুয়াযী শাস্তি পান, তাহলে ওই শিক্ষক এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের আজীবন সুপারভাইজার হতে পারবেন না। তাহলে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন কিভাবে সুপারভাইজার হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান।’

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের কেউ একবার সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন। তবে কোনো শিক্ষক যদি আইন বহির্ভূত কাজ করে থাকেন তাহলে আমরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখবো এবং সে অনুয়াযী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ মুঠোফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট