চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পণ্যের মান ও দাম নিয়ে অভিযোগ বাড়ছে ভোক্তা অধিকারে

তাসনীম হাসান

১৭ অক্টোবর, ২০২০ | ১:০২ অপরাহ্ণ

পাহাড়তলী বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন। দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাছ তাকে ধরিয়ে দেয়া হয় তিন কেজি বলে। সন্দেহ হলে অন্য বাটখারায় মেপে নিশ্চিত হন তাঁকে ঠকানো হয়েছে। এরপর দোকানির কাছে গিয়েও লাভ হয়নি। পরে কোনো উপায় না দেখে তিনি অভিযোগ টুকে দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অভিযান চালিয়ে ওই মাছ ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এভাবে প্রায় প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ আসছে অধিদপ্তরে। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত চার অর্থবছরে ৮৭৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিপরীতে জরিমানা করা হয়েছে ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ চলে গেছে অভিযোগ করা গ্রাহকদের পকেটে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ১৮ ধারা অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২৮ জুন অধিদপ্তরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে তাঁদের কাছে অভিযোগ আসত বোতলজাত ও কোমল পানীয়ের দাম বেশি রাখা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির বিষয়ে। তবে এখন অভিযোগে এসেছে বৈচিত্র। ওজনে কারচুপি থেকে মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কার্যকর সেবা না পাওয়া, অনলাইনে ফরমাশ দিয়ে প্রতিশ্রুত পণ্য না পাওয়া কিংবা এপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংসহ অন্যান্য গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়েও অভিযোগ আসছে নিয়মিত।
কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করায় গ্রাহকেরা এ বিষয়ে সচেতন হয়েছেন। পাশাপাশি অভিযোগের ভিত্তিতে জরিমানা কিংবা নতুন পণ্য পাওয়ার বিষয়টিও অধিকভাবে প্রচার হ্ওয়ায় গ্রাহকেরা বুঝতে পেরেছেন; অভিযোগ দিলে কাজ হয়। এ ছাড়া অভিযোগের সত্যতা পেলে জরিমানার ২৫ শতাংশ পেয়ে যাওয়াও গ্রাহকদের আগ্রহী করে তুলেছে।

তবে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির রীতি থাকলেও লোকবল সংকটের কারণে এক একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে ১ মাস লেগে যাচ্ছে। এই দীর্ঘসূত্রিতা না কাটলে গ্রাহকেরা আস্থা হারাতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগের পরিমাণ : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের অধীনে জেলায় পরিচালিত বাজার তদারকিমূলক কার্যক্রমের চার বছরের চিত্রের তালিকা পাওয়া গেছে। সেটি ঘেটে দেখা গেছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র ৩৬ জন গ্রাহক অভিযোগ করেছিলেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অভিযোগের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। ওই অর্থবছরে ১৫৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। তার বিপরীতে ৭ লাখ ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২৮৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে ৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৯২জন গ্রাহক অভিযোগ করেন। এর বিপরীতে ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অভিযোগের প্রমাণ মেলায় চার বছরে ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেখান থেকে অভিযোগ করা গ্রাহকেরা পেয়েছেন ৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৫০টাকা।

অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, দুইভাবে এসব অভিযোগ করেছেন গ্রাহকেরা। মেইল অথবা ডাকের মাধ্যমে তো আছেই। এর পাশাপাশি সরাসরি ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়েও তাঁরা অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কখনো সরাসরি অভিযান পরিচালনা করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শুনানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
লোকবল সংকটের কারণে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সময় লাগছে বলে জানান মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জেলা কার্যালয়ে তিন জন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও আছেন শুধু তিনি। এছাড়া গাড়িসহ নানা সংকটের কারণেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের।
অভিযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার না পেলে গ্রাহকেরা আগ্রাহ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছেন ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ভোক্তা অধিকার ও প্রতারণা নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তাই উপজেলা পর্যায়েও অধিদপ্তরের লোকবল বাড়ানো দরকার। এতে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে গতি আসবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট