চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠায় চবি শিক্ষার্থীরা

রায়হান উদ্দিন, চবি

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:১৩ অপরাহ্ণ

করোনা সংক্রমণরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গত ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বিভাগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আটকে থাকা ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি খুলে দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া শুরু করেছে। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেয়ার দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিলেও পরীক্ষা নিয়ে এখনই ভাবছে না প্রশাসন।
জানা যায়, করোনাকালীন সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা পুরোদমে চলমান ছিল। এরমধ্যে বেশিরভাগ বিভাগ সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করলেও কিছু বিভাগ অর্ধেক পরীক্ষা শেষ করে আটকে যায়। এসব বিভাগের মধ্য আছে অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব ও আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা, রাজনীতি বিভাগের ৩য় ও ৪র্থ বর্ষ, লোক প্রশাসন ও সংস্কৃত বিভাগের মাস্টার্স, হিসাববিজ্ঞান ও মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুটি ব্যাচের ইন্টারশিপের মৌখিক পরীক্ষা, ফার্মেসি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের তিনটি ব্যবহারিক পরীক্ষা, গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষ ও ২য় বর্ষের ব্যবহারিক, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২য় বর্ষের মৌখিক ও ব্যবহারিক, ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অষ্টম সেমিস্টার, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের ২য় ও ৩য় বর্ষ, ওশোনোগ্রাফি বিভাগের ৩য় ও ৪র্থ বর্ষ ও ফিশারিজ বিভাগের ২য় বর্ষের পরীক্ষা অর্ধেকের মধ্যে আটকে আছে। এরমধ্যে বেশি বিপাকে পড়ছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। যারা শুধুমাত্র একটি বা দুটি পরীক্ষা বাকি থাকায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না।
সমাজতত্ত্ব বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফাহিম পূর্বকোণকে বলেন, সেশনজটে আটকা পড়ে ইতোমধ্যে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়েছি আমরা। আবার করোনা সংকটে শুধুমাত্র দুটি পরীক্ষা বাকি থাকায় বিভিন্ন চাকরির আবেদন করা যাচ্ছে না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আটকে থাকা বাকি পরীক্ষাগুলো নিয়ে আমাদেরকে চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে পারে।
পরীক্ষা নিয়ে নিজের উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম সাজ্জাত বলেন, প্রথমদিকে ভেবেছিলাম হয়তো কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেখতে দেখতে ছয় মাস পার হয়ে গেছে। এই কারণে দীর্ঘসময় ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, যখন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র খুলে দেয়া হয়েছে, সবকিছু স্বাভাবিক, এখন কি আমাদের মতো ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করা যায় না ?
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলাহ বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকবে, তা হতে পারে না। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষার্থীদের যাদের একটি বা দুটি পরীক্ষা বাকি আছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত তাদের পরীক্ষা নেয়া যায় কিনা, সেই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে আমি কথা বলবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান পূর্বকোণকে বলেন, আমরাও পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। কিন্তু আমরা পরীক্ষা নিলে এতগুলো শিক্ষার্থী থাকবে কোথায় ? যে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থী তারপক্ষে হয়তো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তখন এর দায়ভার কে নিবে ?
তিনি বলেন, তবে সবকিছু মাথায় রেখে আমরা চারটি সাব-কমিটি গঠন করেছি। আপাতত আমরা অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা যাচাই করছি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে উপাচার্য, ডিনবৃন্দ ও বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে কথা বলে আটকে থাকা পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট