চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রুট নিয়ন্ত্রণে ইয়াবা ডন মাস্টার মুন্না

বান্দরবানে ২০ পয়েন্টে ঢুকছে ইয়াবা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে ঢুকছে নগরীতে

নাজিম মুহাম্মদ

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৭:২৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের বিশ পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা। রোহিঙ্গা শরণার্থী রফিক ওরফে মাস্টার মুন্না সীমান্তের পাহাড়ি এ ইয়াবা পাচার রুটের নিয়ন্ত্রক। সাগর পথে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা হয়ে ইয়াবার চালান পৌঁছে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। ইয়াবা বিক্রির টাকায় কিনছে স্বর্ণ।

অবাধে ইয়াবা পাচার করতে মুন্না গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সশস্ত্র গ্রুপ। মুন্নার ভয়ে তটস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরণার্থীরা। শুধু মুন্না নয়। তার তিনভাই ইয়াবা পাচারে জড়িত। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে শরণার্থী মুন্নার চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে। মুন্নার ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ইয়াবা পাচার ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-১৪ এর অধিনায়ক আতিকুর রহমান জানান, মাস্টার মুন্নার বিষয়ে আমার তেমন বেশি কিছু জানা নেই। বান্দরবান সীমান্তে কিছু এলাকা দিয়ে মিয়ানমার দিয়ে ইয়াবা পাচারের কথা আমি শুনেছি। তবে সেখানে কখনো আমার যাওয়া হয়নি।

শরণার্থী মুন্না যেভাবে ইয়াবা ডন : মুন্নার আসল নাম রফিক। তিনি নিজেকে কখনো মুন্না কখনো আবদুল আজিজ আবার কখনো মাস্টার মুন্না পরিচয় দেয়। তার বাবার নাম মৃত দিল মোহাম্মদ। উখিয়া মরকজ পাহাড়ের দুই নম্বর ওয়েস্ট ক্যাম্পের ডি/৪ ব্লকে থাকেন। বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমারের মংডু থানার উত্তর নাগপুরা গ্রামে বসবাস করতেন। বিয়ে করেছেন তিনটি। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার বড় মুন্না আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সদস্য ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে তার আসা যাওয়া রয়েছে। মিয়ানমারে থাকাকালীন সময়ে খুচরা ইয়াবা ব্যবসা করতেন। বাংলাদেশ আসার পর ইয়াবা পাচারের পরিধির সীমানা বড় করে মুন্না। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী ঢলের সময় বাংলাদেশে এসে স্থায়ীভাবে শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছে। মুন্নার অন্য তিনভাই হলেন, মাহমুদুল্লাহ ওরফে গিয়াস (৩৬), ফরিদুল আলম (৩০) ও ওমর ফারুক (২৫)। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে শরণার্থীদের নিবন্ধনের তালিকা করেছে। তবে সেই তাালিকায় ইয়াবা পাচারকারী আরসা নেতা মুন্না কিংবা তার পরিবারের তথ্য নেই।

বিশ পয়েন্টে আসছে ইয়াবা : বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ ও উখিয়ার সাগর পথে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সীমান্তের বান্দরবান জেলার বিশটি পাহাড়ি পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে আনা ইয়াবা মজুদ করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। পরবর্তীতে সেই সব ইয়াবা সাগর ও সড়ক পথে ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বান্দরবানের যে সব পয়েন্ট দিয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা ঢুকছে তা হলো, সীমান্তের ৭৩ নম্বর পিলারের থানচির তিন্দুর তুইখ্যা মুরংপাড়া, ৭০ নম্বর পিলারের হেডম্যান পাড়া, পুনিয়া পাড়া, চবাইজ মগপাড়া, ৬৮ নম্বর পিলারের সাপছড়া, অংরাই পাড়া উচিয়া, ৬৬ নম্বর পিলারের রুমা মানিকছড়ির চালুয়া, ৬৪ নম্বর পিলারের রুমা ডলুপাড়া আংটালং মুরং পাড়া, ৬২ নম্বর পিলারের আলি কদমের রুহিতং নাগাহান এলাকা, ৫৮ নম্বর পিলারের আলিকদম পোয়া মুহুরি টাইটং পাহাড়, ছেদাবুরং পাড়া, ৫৬নম্বর পিলারের আলিকদম বুচিঢং তাংরামুরং পাড়া, নাইক্ষংছড়ির ৫১ নম্বর পিলারের দৌছড়ি নেরেখাইং, ৫০ নম্বর পিলারের লেমুছড়ি আমতলা, ৪৬ নম্বর পিলারের ফুলতলী অংথ্রাবে, ৪৩ নম্বর পিলারের নিকুছড়ি, চাকঢালা অংজাইং, ৪২ নম্বর পিলারের রেজুপাড়া আমতলি নারাই চং, ৪০ নম্বর পিলারের রেজু আমতলি নারাই চং, নাইক্ষংছড়ির ৩৭ নম্বর পিলারের তুমব্রু, বাইরশারি, আমবাগান কোকোডিংগা, ৩৪ নম্বর পিলারের পশ্চিম কুল, ডেকবুনিয়া, উত্তর পাড়া, ৩৩ নম্বর পিলারের পশ্চিমকুল, ৩২ নম্বর পিলারের ঘুনধুম কলাবাগান, পশ্চিমকূল ও ফকিরপাড়া এবং ৩১ নম্বর পিলারের ডেকবুনিয়া এলাকা। সীমান্তের এসব এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত মিয়ানামার থেকে পানির স্রোতের মতো ইয়াবা ঢুকছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

উখিয়ার ওসি মর্জিনা আক্তার জানান, মাস্টার মুন্না ও তার ভাই মাহমুদুল্লার থানার তালিকাভুক্ত মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। ইয়াবা পাচার, গোলাগুলি এমন কাজ নেই তারা করেনা। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করার কারণে মুন্নাকে আইনের আওতায় আনা অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট