চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সন্দ্বীপে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণি, দেখার নেই কেউ

সন্দ্বীপে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণি, দেখার নেই কেউ

সন্দ্বীপ সংবাদদাতা

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৯:৪২ অপরাহ্ণ

দুইযুগ আগেও নদী বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ ছিল বিভিন্ন বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য। বিলুপ্ত প্রজাতির বিভিন্ন ছোট-মাঝারি ধরনের বন্যপ্রাণি রীতিমত চোখে পড়তো। অসচেতনতার কারণে হত্যা ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ না থাকায় দিনদিন তা বিলুপ্তির পথে হাটছে।

সাগরের বুক চিড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর সন্দ্বীপে একসময় শিয়াল, মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম ও সাপ, ঘুঘু, প্যাঁচা, সাদা বক, পানকৌড়ি, পাতিহাস, চিলসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও পাখপাখালির নিরাপদ আশ্রয়স্থান হিসাবে পরিচিত ছিল। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ছিল চোখে পড়ার মত।মানুষের সচেতনতা ও বন বিভাগের অবহেলার কারনে এসব বন্যপ্রাণির সংখ্যা এখন শূন্যের কোঠার দিকে এগিয়ে চলছে।

সন্দ্বীপে প্রতিবছর নির্বিচারে পিটিয়ে মারা হচ্ছে মেছোবাঘ। গত ৭ সেপ্টেম্বর মাইটভাঙ্গা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘা মার্কেট এলাকার পাশে জমির পাশ থেকে এলাকার কয়েকজন মিলে একটি মা মেছোবাঘকে পিটিয়ে হত্যা করে। এর আগে ১৮ জুলাই শনিবার পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সংবাদকর্মী কাউছার মোহাম্মদ দিদারের বাড়ির পাশে স্থানীয় লোকজন একটি মেছোবাঘ পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাস করে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে। এভাবে প্রতিবছর সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ১০-১৫ টি মেছোবাঘ পিটিয়ে হত্যা করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন ধান চাষের জমিতে ফাদ পেতে ও বিষাক্ত খাদ্যের টোপ দিয়ে প্রতিবছর কয়েকশ’ বক শিকার করা হয়। সেগুলো আবার প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি বক এক থেকে দেড়শ’ টাকা করে বিক্রি করা হয়। শিকার করা বক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এমন পরিবারও রয়েছে সন্দ্বীপে। প্রায় একযুগ ধরে প্রতিবছর শীতকালে একদল পাচারকারী সন্দ্বীপ থেকে গুইসাপ ধরে নিয়ে যায়। বরিশাল, রংপুর, ফরিদপুর থেকে তিন-চারটি দল সন্দ্বীপ এসে কাছিম শিকার করে পাচার করে নেয়। এরা এখানে বাসা ভাড়া করে থেকে বছরে প্রায় ৯ মাস পুকুর ও খালবিল থেকে কাছিম ধরে। দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণি শিকার ও হত্যার মত অপরাধ ঘটতে থাকলেও নিশ্চুপ উপকূলীয় বন বিভাগের লোকজন। এসব বন্যপ্রাণির হত্যা ও শিকার করার কথা তাদের জানালেও এ পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
এনাম নাহার মোড়ের জুয়েলারি ব্যবসায়ী বিজয় বণিক জানান, গত দুই বছর ধরে কাছিম বিক্রেতাদের থেকে আমি প্রায় ৫০ টি কাছিম কিনে আমার পুকুরে ছেড়ে বাঁচিয়ে দিয়েছি।

মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্ধ্ব আবদুল বাতেন বলেন, বাঘডাশা বা মেছোবাঘ মানুষের হাস-মুরগি, ছাগল ও ভেড়ার বাচ্চা খেয়ে ফেলে। অনেক সময় মানুষের উপর হামলা করে নখ দিয়ে আঁচড় দেয়। তাই বাগডাশ (মেছোবাঘ) দেখলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানা না থাকায় মানুষ বন্যপ্রাণি হত্যা করছে বলে মন্তব্য করছেন সচেতনমহল। মাইটভাঙ্গা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর জানান, বন বিভাগ থেকে সন্দ্বীপের প্রতিটি এলাকায় মাইকিং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও হাটবাজারে হ্যান্ডবিলের মাধ্যমে বন্যপ্রাণি হত্যা বন্ধ করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা করলে এবং মানুষকে বন্যপ্রাণি হত্যার কারণে কি ধরনের শাস্তি রয়েছে তা জানিয়ে দিলে বন্যপ্রাণি হত্যার প্রবণতা ও হার অনেক কমে যাবে।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বন কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত আমি বন্যপ্রাণি হত্যার সঠিক কোন তথ্য-প্রমাণ পাইনি। কিছুদিন আগে একটা মেছোবাঘ পিটিয়ে হত্যার খবর শুনে আমি লোক পাঠালে তার কোনো সত্যতা মিলেনি।
বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কথা স্বীকার করে জানান, আমি উপজেলা পরিষদের মিটিংগুলোতে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ করার প্রচারণার কথা বলেছি। আসলে আমাদের লোকজন কম তাই এসব দেখাশোনা করতে পারছি না।

তবে আমানউল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত চৌধুরী বলেন, বন কর্মকর্তার বাড়ি সন্দ্বীপ হলেও তিনি সন্দ্বীপ পোস্টিং নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামে। তিনি কিভাবে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ করবেন?

 

 

 

 

পূর্বকোণ/নরোত্তম-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট