চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

বেপরোয়া সেই ট্যাক্সি সিন্ডিকেট

বেপরোয়া সেই ট্যাক্সি সিন্ডিকেট

ইফতেখারুল ইসলাম

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:১১ অপরাহ্ণ

কেইস স্টাডি-১ঃ নগরীর শুলকবহর এলাকার বাসিন্দা আহমেদ অনন্য আদিব গত ২ সেপ্টেম্বর বিকালে জরুরি কাজে নাজিরহাট যাচ্ছিলেন। তিনি তার গন্তব্যস্থলে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য বিআরটিএ সংলগ্ন নতুন পাড়া থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি ট্যাক্সি রিজার্ভ করেন। কাজ যেহেতু জরুরি চালককে দ্রুত টান দিতে বলেন। শুরুতেই বাধে বিপত্তি। কয়েকজন চালক এসে ট্যাক্সির সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের একটাই কথা এই ট্যাক্সি যেতে পারবে না। যাত্রীদের নেমে যেতে বলেন এবং চালককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন তারা। এসময় উত্তেজিত চালক এবং লাইন্সম্যান যাত্রীদের নির্দেশ দেন, ‘আপনারা অন্য ট্যাক্সিতে যাবেন’। তাদের মারমুখী আচরণে তিনি এবং তার সঙ্গী তখন ওই ট্যাক্সি থেকে নেমে জানতে চান তারা কোন ট্যাক্সিতে যাবেন, এসময় উত্তেজিত চালকরা তাদের একটি ট্যাক্সি ডেকে দেন। কিন্তু ভাড়া ৫০ টাকা বেশি দিতে হবে। তখন বেশি ভাড়া দেয়ার বিষয়ে আপত্তি করনে যাত্রীদ্বয়। এক পর্যায়ে যাত্রীদ্বয়ও ওই মারমুখী চালকদের সাথে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন এবং আগে ভাড়া করা ট্যাক্সিতে উঠে বসেন। এসময় উত্তেজিত চালকরা ওই ট্যাক্সিতে লাথি মারতে থাকে। চালককে প্রচণ্ড গালিগালাজ করে। এসব করতে গিয়ে ওই যাত্রীদের প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। পরে অপর এক লাইন্সম্যানের মধ্যস্থতায় তারা প্রথমে ভাড়া করা ট্যাক্সিতেই নাজিরহাট যান। কিন্তু মারমুখী চালক এবং লাইন্সম্যানদের সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার সেই কাজ আর হয়নি।

কেইস স্টাডি-২ ঃ গতকাল (শুক্রবার) সকালে ফটিকছড়ি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বাদুরতলা আরাকান সোসাইটি এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম। তিনি শহরের একটি ট্যাক্সি নিয়ে বিআরটিএ সংলগ্ন নতুন পাড়া সিএনজি স্ট্যান্ডে যান। সেখানে পা ফেলতেই মৌমাছির মত তাকে ঘিরে ধরে অসংখ্য চালক। সবাই শুধু জানতে চান কোথায় যাবেন? প্রথমে তিনি কাউকে কোন উত্তর না দিয়ে ট্যাক্সি থেকে ব্যাগ নামিয়ে একটি ট্যাক্সি রিজার্ভ নেয়ার জন্য এক চালকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। এসময় লাঠি হাতে একজন এসে জিজ্ঞেস করেন, কোথায় যাবেন? এসময় নুরুল আলম কিছুটা বিরক্ত হন। তখন ওই লাঠিওয়ালা নিজেকে লাইন্সম্যান পরিচয় দিয়ে বলেন, এখান থেকে যেখানেই যান, আমরা যে গাড়ি দিব, তাতেই যেতে হবে। আপনার গাড়ি পছন্দ করার সুযোগ নেই। এমনকি ভাড়া নিয়েও তর্ক করার সুযোগ নেই। আমাদের অনুমতি ছাড়া কেউ এখান থেকে গাড়িতে যাত্রী উঠাতে পারবে না।

একাধিক যাত্রী এবং নিরীহ চালকের সাথে আলাপকালে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে কিছু ব্যক্তি সমিতির নাম দিয়ে চালক এবং যাত্রী উভয়কেই জিম্মি করেছে। নতুনপাড়া থেকে যাত্রী নিলে ট্যাক্সি প্রতি ২০ টাকা দিতে হয়। অপরদিকে, যাত্রীরা যদি রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে কোথাও যেতে চায়, তাদের সরবরাহকৃত গাড়িতে তাদের নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে হবে। কোন চালক ন্যায্য ভাড়ায় কোথাও রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে গেলে তারা তাকে গালিগালাজ এমনকি মারধর পর্যন্ত করে। গাড়ির চাবি নিয়ে জিম্মি করে রাখে। মূলত অক্সিজেন মোড়ে যারা যাত্রী এবং নিরীহ চালকদের জিম্মি করতো, তারাই শহরের বাইরে এসে আরো বেশি মারমুখী হয়ে গেছে। তারা সড়কের পাশে ছোট একটি ঘর করে অফিসও করেছে। গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে ওই অফিসে রেখে দেয়া হয়। নিরীহ চালকদের গায়ে অহরহ হাত তুলছে। যাত্রীদেরকেও হেনস্থা করছে। গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। এচিত্র নিত্যদিনের। এনিয়ে প্রশাসনের কোন মাথাব্যথা নেই।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক পূর্বকোণকে বলেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। কাউকে যাত্রী হয়রানি করার সুযোগ কিংবা বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেয়া হবে না।

সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মিলন মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখবেন। তবে যেখানে স্ট্যান্ডের অবস্থান সেটি জেলা পুলিশ দেখে। তবুও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন উল্লেখ করে বলেন, কোন যাত্রীকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য করা হলে তিনি অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।

একসময় নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে উত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি এবং মানিকছড়ির ট্যাক্সিগুলো ছাড়া হত। সেখানে সমিতির নামে একটি শক্ত সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করতো। তবে সেখানে যাত্রী হয়রানি তেমন হত না। যাত্রীরা তাদের পছন্দের সিএনজি ট্যাক্সির ভাড়া দরদাম করে যেতে পারতো। অক্সিজেন এলাকার যানজট কমানোর লক্ষ্যে স্ট্যান্ডটি বিআরটিএ সংলগ্ন নতুনপাড়া এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওই সিন্ডিকেট।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট