চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আনোয়ারায় সাগরপাড়ে লাশবাহী এম্বুলেন্স আটকা

আনোয়ারায় সাগরপাড়ে লাশবাহী এম্বুলেন্স আটকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুলাই, ২০২০ | ৯:০৭ অপরাহ্ণ

মাস্টার নুরুল ইসলাম (৮০)। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রাতে হালিশহরে মেয়ের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রাতেই পরিবারের সদস্যরা মৃতের লাশ নিয়ে দাফনের জন্য আনোয়ারা উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা হোন। রাত ১টার দিকে এম্বুলেন্সটি উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাইঘ্যার ঘাট আসার পর বালিতে (সাগর পাড়ে) আটকে যায়। এলাকার প্রায় ৩০-৪০ জন স্থানীয় লোক দুইঘণ্টা চেষ্টার পর এম্বুলেন্স বালি থেকে তুলতে পারেননি তারা। পরে বাধ্য হয়েই এম্বুলেন্স থেকে লাশ খাটিয়ার তুলে বাড়ি নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।

মঙ্গলবার রাতে এম্বুলেন্সটি আটকে যাওয়ায় পরদিন তা জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে। এলাকাবাসীর সহায়তায় আজ বুধবার (২৯ জুলাই) সাম্পানের রশি ও টাক দিয়ে (প্লাস্টিকের ড্রাম) এম্বুলেন্সটি বালি থেকে তুলতে সক্ষম হয়। পরে তা মেরামতের জন্য গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

এ ঘটনার এলাকার বিভিন্ন মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে বেঁড়িবাধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হলেও দুর্নীতির কারণে এখনো বেঁড়িবাধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বর্ষার আগেই প্রতিবছর বেঁড়িবাধে ভাঙন শুরু হয় বলে জানান তারা। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর সাগরপাড় দিয়ে বিভিন্ন ভোগান্তি পোহায়ে যাতায়াত করতে হয়। গতকাল সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এম্বুলেন্স এর ছবি দিয়ে আনোয়ারা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য, তরুণ ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মরহুম মাস্টার নুরুল ইসলামের ছেলে ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের রায়পুর ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, ‘মঙ্গলবার রাতে বাবার লাশ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। বৃষ্টির কারণে বেঁড়িবাধে যাতায়াতের অবস্থা না থাকায় সাগর পাড় দিয়ে লাশ নিয়ে যাচ্ছিলাম। বাইঘ্যার ঘাট আসার পর রাত ১টার দিকে সাগর পাড়ের বালিতে গাড়ি আটকে যায়। প্রায় রাত ৩টা পর্যন্ত ৩০-৪০ জন মানুষ নিয়ে চেষ্টা করেও গাড়ি আর বালি থেকে তুলতে পারিনি। এরপর আমরা গাড়ি থেকে লাশ বের করে খাটিয়ার মাধ্যমে বাড়ি নিয়ে যায়। বাবার দাফন সম্পন্ন করে আবার গাড়ি উদ্ধার করতে আসি। গতকাল দুপুর ২টার দিকে আমরা গাড়িটি তুলতে সক্ষম হয়।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জোয়ারের পানি ভাসার ফলে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়েছে। সময় মত মানুষ সাহায্যের জন্য না এলে এম্বলেন্সটি জোয়ারের পানিতে সাগরে ভেসে যেত। আনোয়ারার মত একটি উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য ভালো কোন সড়ক নেই। সামান্য বৃষ্টি হলে মানুষ যাতায়াত করতে পারেন না। বছরের পর বছর এই এলাকার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

উঠান্নের ঘাটের মো. ওসমান গনি জানান, স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতির কারণে বারবার বেঁড়িবাধের কাজ আটকে যাচ্ছে। ফলে ইউনিয়নের ৬০ হাজার বাসিন্দা যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। কয়েকজন দুর্নীতিবাজ নেতার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

জানতে চাইলে ৩ নম্বর রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। আসলে বেঁড়িবাধের অবস্থা খারাপ থাকায় মানুষ সাগর পাড় দিয়ে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় এম্বুলেন্সটি বালিতে আটকে যায়। আজ তা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

 

 

পূর্বকোণ/ই-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট