চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৯০ শতাংশ শয্যাই খালি আইসোলেশন সেন্টারে

নাজিম মুহাম্মদ

১৩ জুলাই, ২০২০ | ৪:৩৫ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাস ঠেকাতে গড়ে উঠা নগরীর ও জেলার আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে ৯০ শতাংশ শয্যা খালি পড়ে আছে। চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাড়ে ১১ হাজার রোগীর মধ্যে এখনো সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো অসুস্থ দেখানো হচ্ছে। অথচ সবগুলো আইসোলেশন মিলে ১০০ রোগীও নেই। ফলে এসব আইসোলেশন সেন্টারের মোট ১ হাজার শয্যার ৯০ শতাংশ শয্যা শুরু থেকেই খালি পড়ে আছে। কেবল আইসোলেশন সেন্টারই নয়-চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের ৬৫৭টি করোনা শয্যার মধ্যে বর্তমানে রোগী আছেন মাত্র ৩১১ জন। অন্য শয্যাগুলো খালি। আইসোলেশন সেন্টারে রোগী না গেলেও নিয়ম অনুযায়ী সেখানে রাখতে হচ্ছে ডাক্তার, নার্স ও আয়াসহ একটি সার্বক্ষণিক কর্মীবাহিনী। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেবা দিচ্ছেন। ফলে তাদেরও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হচ্ছে। এ এক বড় বিড়ম্বনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে শনাক্ত হওয়া রোগীদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। আর সংশ্লিষ্ট বাড়িটি ১৪ দিনের জন্য লকডাউন করে রাখা হতো। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। চিকিৎসা প্রশাসনই এখন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে চলেছে। স্বয়ং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনই এই ধরনের চিকিৎসার পক্ষে মত দিয়েছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টারের সংখ্যা ১১টি। সব মিলিয়ে শয্যা সংখ্যা এক হাজারের মতো। অথচ সব আইসোলেশন সেন্টার মিলে ১০০ রোগীও নেই। তিনি বলেন, রোগীরা এখন আগের চেয়ে সচেতন। তাই তারা বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকে চিকিৎসা নিতে বাসা থেকে বের হতেও চাচ্ছেন না। ফলে আইসোলেশন সেন্টারগুলো খালি থাকছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরীর বড়পোল এলাকায় গত ২১ জুন চালু হওয়া ২৫০ শয্যার এই আইসোলেশনে গতকাল রবিবার রোগী ভর্তি ছিলেন ২৪ জন। আর গত ২০ দিনে সব মিলিয়ে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ জন রোগী। এদের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪৬জন। আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সংকটাপন্ন হওয়া ১৫ জনকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান চসিকের আইসোলেশন সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুশান্ত বড়ুয়া।

চট্টগ্রামে প্রথম চালু হওয়া ফিল্ড হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪ জন। তবে হাসপাতালটিতে মোট ১৪০১ রোগী এ পর্যন্ত সেবা পেয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্যোগে নগরীর হালিশহরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম আইসোলেশন সেন্টারে গতকাল পর্যন্ত ৩৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এখানকার অন্যতম উদ্যোক্তা নাজিম উদ্দিন মাহমুদ শিমুল বলেন, গত ১২ জুন থেকে যাত্রা শুরু হওয়া ১০০ শয্যার এই আইসোলেশন সেন্টারে প্রায় ২০০ রোগী সেবা নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ আইসোলেশন সেন্টার বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠায় এগুলোর সঙ্গে চিকিৎসা প্রশাসনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ফলে এগুলো দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাছাড়া আইসোলেশনে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকসহ জনবল, খাবার সরবরাহ, চিকিৎসকদের ব্যবহৃত পিপিইসহ বিভিন্ন সরঞ্জামকে জীবাণুমুক্ত করা একটি ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।

ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা গেছে। সাতকানিয়া ও রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে দুইটি আইসোলেশন সেন্টার করোনা পরিস্থিতি শেষ হলে হাসপাতালেরই অংশ হয়ে যাবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। এর বাইরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে যে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করেছে, সেটিও একটি কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করার কথা বলেছেন উদ্যোক্তারা। নগরীর হালিশহরে আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হাসপাতালটিও শেষ পর্যন্ত কোভিড হাসপাতাল হিসেবেই থাকবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জমির।

বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠা এইসব আইসোলেশনের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, কোরবানি ঈদের পর আমরা বসব। একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এগুলোর ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ কমছে। বেশিরভাগ বাসায় আইসোলেশনে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট