চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্ব পাচ্ছে আর্মড পুলিশ

নাজিম মুহাম্মদ

২৪ জুন, ২০২০ | ৬:২৭ অপরাহ্ণ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)। আগামী ১ জুলাই থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করবে এপিবিএন। এ জন্য এপিবিএন এর ১৪ ও ১৬ ইউনিটকে প্রস্তুুত করা হয়েছে। দুইজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রায় ১৫’শ এপিবিএন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক আগেই একাধিক বিশেষায়িত ইউনিট গঠন এবং ভিন্ন থানা ও একাধিক পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া ও এ সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য ক্যাম্প এলাকায় অস্থায়ী আদালত স্থাপনের প্রস্তাবনাও রয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের কথা ছিল। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও ছিল। এজন্য টেকনাফ ও উখিয়া কেন্দ্রিক ক্যাম্পগুলো ঘিরে আগের নিরাপত্তা পরিকল্পনা কিছুটা থেমে যায় কিন্তু প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তর না হওয়ায় ক্যাম্পগুলো ঘিরে নতুন করে নিরাপত্তা কার্যক্রম সাজাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর’র হিসেব মতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিত শরণার্থী সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ২৪৩ জন। তার বাইরে আরও কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে কক্সবাজার সদর ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়।
এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ,সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। আগে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অধীনে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করত। এখন থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের থেকে আলাদা করে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ২০১৭ সালের আগস্টের শেষ দিক থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর দমন অভিযানের মধ্যে সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল শুরু হয়। তাদের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৪টি নিবন্ধিত ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগে দেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছিল দুইটি। আর তার পরে নতুন করে আরও ৩২টি ক্যাম্প তৈরি করা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য ২০১৮ সালে এপিবিএন ১৪ নামে নতুন ইউনিট ও গত বছর ডিসেম্বর ১৬ ইউনিট চালু করা হয়। যারা জেলা পুলিশের সহযোগী হিসেবে ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন।তবে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দুই ইউনিটে আলাদা করে সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। দুই জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা ইউনিট দুইটির অধিনায়কের দায়িত্বে আছেন।
এপিবিএন-১৪ এর অধিনায়ক আতিকুর রহমান জানান, ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে এপিবিএন। আর মামলা সংক্রান্ত অন্যান্য কাজগুলো করবে জেলা পুলিশ। আগামী ১ জুলাই থেকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নেবেন তারা।
জানা যায়, এপিবিএন-এর দুইটি ইউনিটে পুলিশ সুপারের পাশাপাশি দুই জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিনজন করে সহকারী পুলিশ সুপার পদায়ন করা হয়েছে। ১৪ ইউনিটে ৫৮৮ ও ১৬ ইউনিটে ৬৮৮ জন সদস্য থাকবে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ সদস্য পদায়নের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাদি তাদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুইটি ইউনিটের অধীনে ১০টি ফাঁড়ি থাকবে। একজন করে পরিদর্শক ফাঁড়িগুলোর দায়িত্বে থাকবেন। এপিবিএন-১৬ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা জানান,রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এতদিন জেলা পুলিশের অধীনে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতেন। জেলা পুলিশের সদস্যদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ৩০ জুনের মধ্যে তারা নিজেদের ইউনিটে চলে যাবে। ১ জুলাই থেকে কাম্পের অভ্যন্তরে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি জানান, ক্যাম্প এলাকায় আগে যে পুলিশ ফাঁড়িগুলো ছিল সেগুলোতে এখন এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি নতুন করে আরও কিছু স্থায়ী ফাঁড়ি নির্মাণ হচ্ছে। এপিবিএন ১৬ এর অধীনে ১৩টি ও ১৪ এর অধীনে ২১ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থাকবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্বরত গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পে বসবাসকারীদের বিশাল অংশ অলস সময় কাটাচ্ছে। যাদের বড় একটি অংশ নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পের ভেতর নিজেদের মধ্যে হানাহানি ছাড়াও অপহরণ, হত্যা ও ইয়াবার মতো মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে তারা। এর বাইরে প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একাধিক গ্রুপ হত্যা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে গেছে, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রোহিঙ্গাদের অসহিষ্ণু আচরণ ও উগ্র মনোভাবের কারণে ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।ক্যাম্পগুলোতে নিয়মিত অপরাধ কর্মকা-ের পাশাপাশি নতুন নতুন অপরাধের সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে অবাধে যাতায়াত করছে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধেও রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছে এবং নানা অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ ধরা পড়ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট