চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে বেশি ঝুঁকি স্বাস্থ্য বিভাগে

মোহাম্মদ আলী

২১ জুন, ২০২০ | ৬:০৫ অপরাহ্ণ

করোনাকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ ৯টি সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ বিভাগে প্রতি ২৭ জনের মধ্যে (চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী) একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর দ্বিতীয় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন পুলিশ। সিএমপি পুলিশের প্রতি ২৮ সদস্যের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৫৫ কাউন্সিলরের মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত হলেও তুলনামূলক ভাল অবস্থানে রয়েছেন চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে ৯ হাজার ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ২জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রামে শনিবার পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫৯০ জন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ নগরীর এবং অবশিষ্ট ৩২ শতাংশ উপজেলাসমূহে।’
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে একবারে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক ও নার্স। এ কারণে তারা তুলনামূলক আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন দুই হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স ও ৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেখানে গড়ে ২৬ জনের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত।
সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৭ হাজার চিকিৎসক কর্মরত। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭জন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে চারজনের করোনা পজেটিভ ছিল। অপর তিনজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের সেবা দিয়েছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৭২০ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন। সেখানে প্রতি ৪০ জনে একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সিএমপি পুলিশের ৭ হাজার সদস্যের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫২ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন তিনজন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮৮ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন অফিসের দুই হাজার ৯৪ জন চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ জন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৫৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মাজহারুল ইসলাম নামে একজন কাউন্সিলর মারা গেছেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠানের ৯ হাজার ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ২জন। এর মধ্যে একজন সুস্থ হয়েছেন। চসিকের সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৬ হাজার। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৮জন।
সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসায় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৬৫০ জন। এর মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ করোনা আক্রান্ত হলেও পরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং অপর একজনও সুস্থ হয়েছেন। ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২২০ জন। এর মধ্যে মাত্র একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কর্ণফুলী গ্যাসে স্থায়ী ও অস্থায়ী দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে মোট লোকবলের সংখ্যা ১২২ জন। এর মধ্যে কারো করোনা পজেটিভ না হলেও উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ রয়েছেন মাত্র একজন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট