চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামের দুই ল্যাবে সাড়ে ৩ হাজার নমুনার স্তুপ

ইমাম হোসাইন রাজু

৮ জুন, ২০২০ | ৫:১২ অপরাহ্ণ

করোনায় আক্রান্ত টেলিভিশনে কর্মরত চট্টগ্রামের এক সংবাদকর্মী ১৪ দিন পর দ্বিতীয় নমুনা জমা দেন গত ৩১ মে। উপসর্গ থাকায় সাথে স্ত্রীর নমুনাও জমাদেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সে নমুনার ফলাফল পাওয়া যায়নি আজও। এতে গেল সাতদিনের কথা। ১৪ দিন আগে নমুনা জমা দেয়া জাতীয় দৈনিকের আরেক সংবাদকর্মীর স্ত্রী ও পিতার নমুনার ফলাফলের খবর আজও জানতে পারেননি তিনি। বারবার ল্যাব ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের পর ব্যর্থ দু’জনেই।

শুধু কি এ দুই সংবাদ কর্মী! নমুনা দেয়ার পর সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়া আরও একাধিক সংবাদকর্মীর অবস্থাও একই। শুধু সংবাদকর্মীই নয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবের তথ্যই বলে সপ্তাহখানেক আগে যারা নমুনা দিয়েছেন তাদের সকলের অবস্থা এক। যেখানে গত মে মাসের ৩১ তারিখে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার কাজ গত শনিবারও শেষ করতে পারেনি। যার একমাত্র কারণ, জনবল সংকট ও আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নমুনা জমা হচ্ছে ল্যাবে।

শুধু চমেকের এ ল্যাবের চিত্রই এমন নয়। চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করা প্রথম পরীক্ষাগার ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল ল্যাবের চিত্রও এক। যেখানেও নমুনার জটে নাকাল ল্যাব কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রথম দিনে মাত্র সাতটি নমুনা দিয়ে পরীক্ষার কাজ শুরু করে বিআইটিআইডির ল্যাব। এছাড়া চমেক হাসপাতাল ল্যাবটিও মাত্র ৯টি নমুনা দিয়ে তাদের পরীক্ষার কাজ শুরু করে। কিন্তু দিন গড়াতেই বর্তমানে এ দুটি ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশ নমুনা পরীক্ষার কাজ চলমান আছে। একই সাথে বিআইটিআইডির নমুনা পরীক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ও (সিভাসু) । সক্ষমতার মধ্যে সব মিলিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রামে গড়ে ৫শ’ নমুনা পরীক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এ তিন ল্যাব। কিন্তু বিপরীতে নমুনা সংগ্রহ আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি।

তথ্য বলছে, ঈদের কয়েকদিন আগেও মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হতো ১২০ থেকে ১৩০ জনের। আর নগরের জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, চমেক হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে নমুনা সংগ্রহ হয় গড়ে ১৫০ জনের। এরবাইরে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা ও ফেনী অঞ্চলেরও কিছু নমুনা আসতো বিআইটিআইডি ও সিভাসুর ল্যাবে। সবমিলিয়ে তখন গড়ে ২৫০ জনের নমুনা জমা হতো দুই ল্যাবে। কিন্তু বর্তমান চিত্র তার উল্টো। যেখানে নগরীতে পূর্বে ১৫০ নমুনা সংগ্রহ করা হতো, বর্তমানে ৫ অধিক নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরবাইরে ১৪ উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে আরও ৪ শতাধিক। চট্টগ্রাম ছাড়া প্রতিদিন তিন পার্বত্য জেলা থেকে জমা পড়ছে আরও কয়েকশ।

গতকাল রবিবার বিআইটিআইডি ও চমেক ল্যাবের তথ্য অনুসারে, দুই ল্যাবেই নমুনা জমা আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। তারমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পড়ে আছে ২ হাজার ২৫০ জনের নমুনা। আর ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে আছে আরও প্রায় সাড়ে ১২শ নমুনা। কিন্তু এ দুই ল্যাবে পরীক্ষার সক্ষমতা দুই শতাধিক থাকলেও গড়ে তিন’শর উপরেই পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এরমধ্যে বিআইটিআইডি থেকে প্রতিদিন প্রক্রিয়াজাত করে সিভাসুতে পরীক্ষা করা হয় আরও দেড় শতাধিক। সব মিলিয়ে ৫শ’র মতো নমুনা পরীক্ষা করা হলেও সংগ্রহ চারগুণ বেশি হওয়ায় জটে হিমশিম খাচ্ছে ল্যাবগুলো।

চমেক ল্যাবে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, আগে নমুনা শতাধিক আসলেও বর্তমানে ৫শর মতো নমুনা আসে। কিন্তু সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেও পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তারমধ্যে নেই জনবলও। এতে করে প্রায় ২হাজার ২৫০ নমুনা পড়ে আছে। যা সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়ে আগামী একসপ্তাহ পর্যন্ত পরীক্ষা করা করেও সম্ভব হবে না। বর্তমানে সংগ্রহের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ল্যাব ও জনবল বৃদ্ধি করা। তাহলে পরীক্ষা সহজ হবে।

একই বক্তব্য ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমদের। এ প্রসঙ্গে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগে যেখানে পুরো বিভাগ থেকে ল্যাবে নমুনা আসতো সর্বোচ্চ ৩শ। সেখানে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরী থেকেই আসছে প্রায় ৫শ কাছাকাছি। এরমধ্যে নেই জনবল। তাহলে কি করে এত নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি পরীক্ষাগার বাড়ানো না হয়, তাহলে কিছুদিন পর ফলাফল পেতে মাসও পেরিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট