চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

লাইলাতুল কদর রমজান মাসে হওয়ায় পুরো মাসের মর্যাদা বেড়েছে

রায়হান আজাদ

১৮ মে, ২০২০ | ৫:২৯ অপরাহ্ণ

লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত্রি হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত। ইসলামে এ রাত্রির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কুরআনুল কারীমে এ রাতের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক একটি ছোট্ট সূরা নাযিল করেছেন। লাইলাতুল কদর রমজান মাসে হওয়ায় পুরো মাসের মর্যাদা অনেকখানি বেড়েছে। সূরাতুল কদরে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘১. আমি একে (আল কুরআনকে) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। ২. হে নবী, আপনি কি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন? ৩. লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত। ৪. এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রুহ (জিব্রাইল আমীন) অবতীর্ণ হন তাঁর পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। ৫. এ রাতের প্রত্যেকটি বিষয়ে রয়েছে শান্তি ; ভোরের উদয় পর্যন্ত এ রজনী বিদ্যমান থাকে’।
এ সূরাটি নাযিলের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। একদা হযরত নবী করীম (সা.) সাহাবীদের কাছে বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদে মশগুল থাকেন। কখনো অলসতা পোষণ করেননি। মুসলমানগণ এ কথা শুনে বিস্মিত হলে সূরা কদর নাযিল হয়। অন্য একটি বর্ণনা মতে, বনী ইসরাইলের চারজন ইবাদতমগ্ন ব্যক্তি প্রত্যেকে ৮০ বছর ধরে সর্বক্ষণ আল্লাহ পাকের ধ্যানে কাটান। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বিস্ময় ও হতাশা ব্যক্ত করেন। কারণ তারা সে জামানার ইবাদতকারী লোকদের মত দীর্ঘ হায়াত লাভ করেন না। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন নাযিলের এ রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ঘোষণা দিয়ে আলোচ্য সূরাটি নাযিল করেন।
লাইলাতুল কদরে আল কুরআন নাযিল হওয়া প্রসঙ্গে একইভাবে আল কুরআনের সূরা দুখানে এসেছে, ‘হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয় আমি আল কোরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়’। ( সূরা আদ্ দুখান, আয়াত: ০১-০৪) আল কুরআন প্রথম নাযিল হয় ৬১০ সালে মক্কা নগরীর জবলে নূরের গারে হেরায়। সে থেকে মহানবীর ২৩ বছর নবুয়্যতী জিন্দেগীতে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে ধাপে ধাপে সমগ্র কুরআন নাযিল হয়।
লাইলাতুল কদর তথা ভাগ্য রজনীর শব্দগত তাৎপর্য নিয়ে দুটি মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে কদর অর্থ তাকদীর এবং আদেশ আর কেউ বলেছেন, কদর মানে মাহাত্ম ও সম্মান। দুটি অর্থই বিশ্লেষণ করে বলা যেতে পারে- যে ব্যক্তি ইতোপূর্বে ইবাদত বন্দেগী করে কদর বা সম্মানের অধিকারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে সে ব্যক্তি এ রাতে তাওবা- ইস্তিগফার-অনুশোচনা এবং ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক ইবাদত করলে কদর বা সম্মানের অধিকারী হতে পারবে। কদর শব্দের অর্থ তাকদীর বা আদেশ হয়ে থাকে। তা এজন্য যে, এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এতে বান্দার রিয্ক, বয়স, জন্ম-মৃত্যু-বৃষ্টি সবই লিখে দেয়া হয়। প্রধান প্রধান ফেরেশতাগণ এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। হযরত ইবনে আব্বাসের মতে- চারজন ফেরেশতাকে এসব কাজ সোপর্দ করা হয়। তারা হচ্ছেন- ইসরাফীল, মীকাঈল, আযরাঈল ও জিবরাঈল (আ.)। কদরের তৃতীয় আরেকটি অর্থ সংকীর্ণ হওয়া। এ রাতে পৃথিবীতে এত অসংখ্য ফেরেশতা আসেন যে পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা যেন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, এজন্য এ রাত্রকে কদর রাত্রি বলা হয়। এ রাত্রির গুরুত্ব ও মর্ম আমাদেরকে উপলদ্ধি করতে হবে এবং সেটি খোঁজার জন্য এ দশদিন অধিক ইবাদত করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট