চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় বাসা-বাড়িতেই এখন ঈদ বাজার

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৪ মে, ২০২০ | ৯:০৬ অপরাহ্ণ

কয়েক দিন পরেই আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু এবারের ঈদ যেন এক অন্য রকম ঈদ। যে ঈদে কারোই মধ্যে নেই কোনো উল্লাস ও প্রস্তুতি। কারণ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে স্তব্ধ আজ গোটা বিশ্ব। সেখানে দীর্ঘ ২ মাসেরও বেশি কর্মহীন দিন কাটাচ্ছে বাংলাদেশের অনেক কর্মজীবী মানুষ। তাই এবারের ঈদ শপিং নিয়ে কারো মধ্যে নেই কোনো প্রস্তুতি।
এদিকে মহামারীর থাবা থেকে বাঁচতে বন্ধ রয়েছে নগরীর সবগুলো নামি-দামি শপিংমল। তবে এমন পরিস্থিতিতে শপিংমলগুলো বন্ধ থাকলেও ব্যবসা করছে কিছু ভাসমান হকার। তারা এ মহামারীর মধ্যে ভ্যান সাজিয়ে বড়-ছোট, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের বাহারি পোশাকের সমাহার নিজে ঘুরছে নগরীর অলিগলিতে। সেই ভাসমান হকাররা রাস্তার মোড়ে, পাড়া-মহল্লায় হেটে বিক্রি করছে নানারকম পোশাক। আবার সেই পোশাক কিনতে পিছিয়ে নেই বাসা-বাড়ির নারী ক্রেতাও। চারদিকে মহামারীর এমন ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যেও সুযোগ বুঝে অনেকেই স্বল্প পরিসরে সন্তান ও নিজের জন্য কিনে নিচ্ছে পছন্দের পোশাক।
গতকাল সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তার মোড় ও আবাসিকের মুখে দেখা যায় ভাসমান হকাররা ভ্যানে করে বিক্রি করছে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীদের নানারকম পোশাক, জুতা, নারীদের প্রসাদনী সামগ্রীসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিসপত্র। হেঁটে হেঁটেই বিক্রি করছে এসব পণ্য। পাড়া-মহল্লার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের ডেকে এসব পণ্য কিনছে নারী ক্রেতারা। দুই নম্বর গেট এলাকার মেয়র গলিতে কাশেক নামের এক হকার ভ্যানে করে পোশাক নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে বসান আকলিমা বেগম, আফরোজা ও হাফসা। তাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আর অল্প কয়েক দিন পরেই ঈদ। এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদেরও কোনো প্রস্তুতি নেই। বাচ্ছাদের জন্যও কিছু কেনা হয়নি। কেনার সুযোগও নেই। তবে বাচ্ছারাতো ছোট তারাতো আর বুঝেনা অভাব-অনটন। তাই এখান দিয়ে ভ্যান সাজিয়ে বাচ্ছাদের পোশাক নিয়ে যাওয়ার সময় ওনাকে ডাক দিয়েছি। আর আমার মেয়ের জন্য একটা গোল জামা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি নিয়েছি। হাফসা নিজের জন্য একটি থ্রি-পিস কিনেছে। এছাড়া বাকিরা বিভিন্ন পোশাক নেড়েচেড়ে দেখছেন আর দরদাম করছে।
এবিষয়ে বিক্রেতা কাশেম মিয়া বলেন, আমি নারীদের থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, লুঙ্গি ও বিছানা চাদরসহ ঘরের পর্দা বিক্রি করছি। আমি অনেক দিন গাড়ি নিয়ে বাইরে হইনি। এর মধ্যে সংসারে অভাব দেখা দিয়েছে। আর কতদিন ঘরে বসে থাকবো। এভাবে ঘরে বসে থাকলে বউ, সন্তান নিয়ে করোনার আগে না খেয়েই মরবো। তাই কিছু নতুন পোশাক নিয়ে পাড়া-মহল্লায় হেঁটে হেঁটে বিক্রি করছি। তবে ব্যবসা নেই। সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মাত্র ৭২০ টাকা বিক্রি করেছি। এতে লাভ হয়েছে ৪শ টাকার মত। অথচ আগে রমজানের এ সময় প্রতিদিন হাজার দশেক টাকা নিয়ে ঘরে যেতাম। এমন ব্যবসা রমজানের ১৫ দিন আগে থেকে শুরু করে চাঁদ রাতের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতো। আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীরাও এ রমজানে লাখের বেশি টাকা আয় করে ঘরে যেত। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। এবারে খেয়ে বাঁচাও দায় হয়ে গেছে।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ভাসমান হকাররা ভ্যানে করে জুতা, নারীদের প্রসাদনী সামগ্রী, ঘর সাজানোর ফুল, বিছানার চাদর, পাপস, ছেলেদের শার্ট-পেন্ট, জুতা ও শিশু-কিশোরদের বাহারি পোশাক বিক্রি করতে দেখা যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট