চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শপিং মল খোলার অনুমতি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ব্যবসায়ীরা

ইফতেখারুল ইসলাম

৭ মে, ২০২০ | ৫:৪৫ অপরাহ্ণ

  •  মার্কেটের গলির প্রশস্ততা নেই,সামাজিক দূরত্ব মানা সহজ নয়
  •  নগরীর কোন মার্কেটই জাতীয় বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ হয়নি
  •  ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ক্রেতা সমাগম হবে না।

চার শর্তে দোকান-পাট, শপিং মল খোলার অনুমতি দিলেও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী এই মুহূর্তে দোকান না খোলার পক্ষে। তাদের অভিমত দেশে প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই মুহূর্তে দোকান খুললে ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে।এতে তারা এবং তাদের পরিবারও ঝুঁকিতে পড়বে।
মূলত তিনটি কারণে অনেক ব্যবসায়ী এই মুহূর্তে দোকান না খোলার পক্ষে। ইতিমধ্যে ঢাকার বসুন্ধরা সিটিসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঈদের আগে না খোলার ঘোষণা দিয়েছে। চট্টগ্রামেও কিছু মার্কেট না খোলার ঘোষণা দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
মার্কেট খুলতে না চাওয়ার কারণ সমূহ হল, রমজান মাসের অর্ধেক দিন পার হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে দোকান খুললে কর্মচারিদের সম্পূর্ণ বেতন, বোনাস এবং বখশিস দিতে হবে। রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে খরচ। প্রতিদিন সাধারণ মানুষের হাত-পা এবং গাড়ি জীবাণূমুক্ত করতে গিয়ে বড় ধরনের খরচ গুণতে হবে। দ্বিতীয়ত করোনা ভাইরাসের ভয়ে ক্রেতা সমাগম নাও হতে পারে। বিক্রি না হলেও খরচ ঠিকই হবে, কিন্তু সরকার যে কম সুদে প্রণোদনা কিংবা ব্যাংক সুদ মওকুফের কথা বলছে সেসব সুযোগ হাত ছাড়া হতে পারে। ঈদের বাজার করতে শপিং মলে না যেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে প্রচারণা চলছে তাতে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা এবার মার্কেট খুললেও ক্রেতা সমাগম হবে না। অনেক ক্রেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিচ্ছেন ঈদের নতুন জামার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে এবার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। যা ঈদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৃতীয়ত নিজেদেরও মৃত্যুর ভয় আছে। পরিবার-পরিজন আছে। ব্যবসা করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত করে ফেললে বিপদ আরো বাড়বে। বিশেষ করে কাপড় এবং প্রসাধনীর দোকানে ক্রেতারা একাধিক দোকানে অসংখ্য পণ্য দেখে একটি পছন্দ করে। এর মধ্যে যদি একজনও করোনা আক্রান্ত থাকেন তাহলে সবাই আক্রান্ত হয়ে যাবেন।
রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহাবুবুল আলম সওদাগর পূর্বকোণকে বলেন, সরকার মার্কেট খোলার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাকে সম্মান জানাই। কিন্তু তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরে বলেন, সরকার জনস্বার্থে মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও এই মুহূর্তে দোকান খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মহামারির বড় ধরনের বিপর্যয় সামাল দেয়ার মত সামর্থ আমাদের নেই। তাই এক বছর ঈদের জামা-কাপড় না কিনলে কিছুই হবে না। বরং লাভ হবে। বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে অসহায়দের দান করা যাবে। তিনি বলেন, বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে ঈদ এবং ঈদের বাজার অনেকবার করার সুযোগ মিলবে। তাই এখন বেঁচে থাকা এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই জরুরি।
আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কোন মার্কেটই জাতীয় বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়নি। গলি আছে এমন একটি মার্কেটও এই শহরে নেই। টেরিবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার তামাকুম-ি লেন, গোলাম রসুল মার্কেটের অবস্থা সবচেয়ে করুন। এসব মার্কেটে কিছু গলি আছে যা দিয়ে এক ব্যক্তি কোনভাবে পার হতে পারে। দুইজন গেলে অবশ্যই একজনের গায়ের সাথে অপরজন লাগবেই। সবচেয়ে আধুনিক শপিং মলগুলোতেও দোকানের সামনে যে হাঁটার জায়গা রাখা হয়েছে তাতে দুইদিক থেকে দুইজন হেঁটে যাওয়ার সময় একজনের গায়ের সাথে অপরজন ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর মানুষ ঈদের বাজার করতে যায় পরিবার-পরিজন নিয়ে। মানুষ মার্কেটে গেলেই লিফট, স্কেলেটর ব্যবহার করবে। শপিং মলগুলোতে স্কেলেটর এবং লিফট আছে সীমিত সংখ্যক। সেখানেও ঠাসাঠাসি করে মানুষ চলাচল করবে।
বিশিষ্ট নগরবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া পূর্বকোণকে বলেন, মার্কেটসমূহে মানুষ গেলে একজনের গায়ের সাথে অপরজনের ধাক্কা লাগবেই। যেখানে দোকানের মালিক এবং কর্মচারিরা নিজেদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে না সেখানে ক্রেতার সাথে কিভাবে দূরত্ব রাখবে? কারণ মার্কেটসমূহে সে পরিমাণ খালি স্পেস নেই। তাই এই মুহূর্তে দোকান খোলার অনুমতি দেয়া ঠিক হয়নি। যেহেতু সরকার দিয়েছে ক্রেতাদের উচিত হবে কেনাকাটা করতে না যাওয়া।
কনজুমার এসোসিয়েশন বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে জানান, বেঁচে থাকলে জীবনে অনেকবার ঈদ করা যাবে। তাই মার্কেট খুলে দিলেও ক্রেতারা এবার কেনাকাটা করতে যাবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট