চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিষেধ, তবুও ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি

হাটহাজারী সংবাদদাতা

৩ মে, ২০২০ | ৮:২২ অপরাহ্ণ

ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোন তোয়াক্কাই করছে না মাটিখেকোরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় মুনাফালোভীদের কাজে লাগিয়ে ভাটা মালিকরা ‘ইট ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভায়। উপজেলার পশ্চিম আলমপুর আনিস খালের পাড়সহ ফসলি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাটি খেকোরা এর কোনও তোয়াক্কাই করছে না।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানিয় চিহ্নিত একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মাটিখেকো সিন্ডিকেট চক্র পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম আলমপুর এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। পাশাপাশি ফসলি জমিও বাদ পড়ছেনা মাটি খেকো এ সিন্ডিকেট থেকে। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে এলাকার কথিত কিছু নেতাদের ছত্র-ছায়ায় কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি করছে দেদারছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। আর এসব মাটি ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায় ও বসতভিটা ভরাটের জন্য। মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায় এবং স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের (টপ সয়েল) এসব মাটি কেটে নিয়ে যায়। যার কারণে ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন যখন ব্যস্ত এই মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্রটি ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আনিস খালের পাড় কেটে ও ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে (টপ সয়েল ) নিয়ে বিক্রি করছে। পাঁচটি ড্রাম ট্রাকে করে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক মাটি ব্রিকফিল্ডসহ বিভিন্নস্থানে নিয়ে যায়। এ সিন্ডিকেটের লোকজন শুধু বর্ষার মৌসুম ছাড়া পুরো বছর এ ভাবে পৌরসভার পাহাড়ি এলাকা ও ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে চলছে প্রকাশ্যে।

কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এক কানি বা চল্লিশ শতক জমিতে এক ফুট গভীর গর্ত করে মাটি তুললে ১০০ ট্রাক মাটি পাওয়া যায়। এই মাটির দাম ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু তাৎক্ষণিক লাভ হলেও এতে কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। মাটি কেটে নেয়ার পর জমি প্রায় দুই বছর জমি নিষ্ফলা থাকে। এরপর পুনরায় চাষ করতে গেলে প্রচুর সার ব্যবহার করতে হয়। কোনো জমি থেকে এক ফুট এক থেকে দেড় ফুট, আবার কোনো জমি থেকে ছয় থেকে আট ইঞ্চি গভীর করে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে ওই জমির পাশাপাশি পাশের জমিরও উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ উল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট