চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোভিড-১৯ ভাইরাসে একশ শয্যার একটি হাসপাতালের রূপরেখা

২২ এপ্রিল, ২০২০ | ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

(যা প্রয়োজনে পরিমার্জিত ও পরিবর্তিত করা যেতে পারে)

কোভিড সেন্টার স্থাপন :

১। প্রধান গেটের কাছে একটা সাময়িক ‘‘মেইকশিফট রুম’’ করতে হবে যেখানে আগত রোগীদের দুই ভাগে ভাগ করতে হবে।
ক) জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট /ইনফ্লুয়েঞ্জার মত রোগ
খ) উপরে উল্লেখিত লক্ষণ যাদের নেই তাদেরকে অন্য নন-কোভিড জেনারেল হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

২। হাসপাতালকে দুটো সেকশনে ভাগ করতে হবে:
ক) “সাসপেক্ট কেইস” সেকশন
খ) “কনফার্মড কেইস” সেকশন

এই দুটো সেকশন আলাদা “ইয়ার মার্ক” করা থাকবে। এদের “প্রবেশ ও বের হওয়ার” গেট আলাদা হতে হবে। এদেরকে কোনভাবে একত্র করা যাবে না। “সাসপেক্ট কেইস” সেকশন : দুই ভাগ করতে হবে।

লেভেল ১ :
শুধুমাত্র জ¦র , কাশি, গলা ব্যথা কিন্তু শ^াসকষ্ট নেই (মৃদু বা মাইল্ড কেইস) যারা বিগত ১৪ দিনের মধ্যে কোভিড ক্লাস্টার জোনে গেছেন অথবা কোভিড রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন।
অতীব ঝুঁকিপূর্ণ রোগী (ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্ট ও ফুসফুসের রোগী, লিভার ও কিডনির রোগী) হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার।
লেভেল ২ :
যাদের জ¦র বেশি (১০৪ ডিগ্রির উপরে ), শ^াসকষ্ট আছে (মাঝারি বা মডারেট কেইস) যারা এআরডিএস অথবা সেপসিস অথবা মাল্টিঅর্গান ফেইলিউর রোগে ভুগছেন (তীব্র বা সিভিয়ার কেইস) আলোচ্য এই দুটাকে দুই ব্লকে ভাগ করে রাখতে হবে। দরকার হলে নীল ও সবুজ রং দিয়ে পৃথক ভাগ করে রাখা যেতে পারে। “কনফার্মড কেইস” সেকশান : দুই ভাগ করতে হবে
লেভেল ৩ :
লেভেল ১ এর টেস্ট + কনফার্মড কেইসগুলি শিফট হবে। লেভেল ১ এর টেস্ট নেগেটিভ কেইসগুলি ডিসচার্জ করা যাবে।
লেভেল ৪ :
লেভেল ১ এর অতীব ঝুঁকিপূর্ণ রোগী ও সিভিয়ার কেইসগুলির টেস্ট + কনফার্মড কেইসগুলি থাকবে। এখানে আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস সুবিধা থাকতে হবে। স্লেড ডায়ালাইসিস থাকলে ভাল হয়। লেভেল ২ এর টেস্ট নেগেটিভ কেইসগুলো আবার ৫ দিন পরে টেস্ট করতে হবে, নেগেটিভ হলে তখন তাদের ছেড়ে দেয়া যাবে। লেভেল ৩ ও ৪-কে হলুদ ও লাল রং দিয়ে মার্ক করে আলাদা করা যেতে পারে।
৩। সাসপেক্ট কেইস আলাদা-আলাদা রুমে রাখতে পারলে ভাল। আর তা না হলে একটা বড় রুমে এক বেড থেকে এক বেডের দূরত্ব ১ মিটার রাখতে হবে। প্রতি ২০০০ বর্গফুটে ১০টা বেড রাখা যাবে।
৪। লেভেল ৩ ও ৪ এর সকল রোগীকে অবশ্যই তিন লেয়ারের সার্জিকেল মাস্ক সবসময় পরে থাকতে হবে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন অথবা প্রতি রুমে যথাযথ অক্সিজেন থাকতে হবে। সাসপেক্ট সেকশন ও কনফার্মড সেকশনের জন্য লিফ্ট ও সিঁড়ি আলাদা হতে হবে।
৫। পিপিই ও লিনেন-আইসোলেশন রুমের বাইরে একটা আলাদা ট্রলিতে রাখতে হবে। আইসোলেশন রুম থেকে বের হওয়ার সময় পিপিই আইসোলেশন রুমের ভিতর আলাদা রুমে ছেড়ে আসতে হবে। বদলি রুমে দরকারি জিনিসপত্রের একটা চেকলিস্ট রাখতে হবে। লেভেল ৩ ও ৪-এর ডাক্তার ও নার্সরা এবং যে সব স্টাফ ক্লিনিং ও ডিসইনফেকশানের সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই ফুল পিপিই (এন ৯৫ মাস্ক সহ) ব্যবহার করতে হবে।
৬। অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র বের করে দিতে হবে। রোগীদের নিজস্ব জিনিস যত কম রাখা যায় তত ভাল। স্টেথেস্কোপ, থার্মোমিটার, ব্লাডপ্রেসার মেশিন প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা আলাদা হলে ভাল।
৭। রুমগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে ভাল। এমনভাবে সেট করতে হবে যাতে প্রতি ঘণ্টায় ১২ বার বাতাস পরিবর্তন হয়। যদি নেবুলাইজেশনের প্রয়োজন হয়, ওইসব রুমে নেগেটিভ প্রেসার ভেন্টিলেশন, না পারলে কয়েকটা এগজস্ট ফ্যানের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮। ভিজিটরস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিটা রুমে ও গেটে ফোন থাকবে, ওখান থেকেই যাতে সিস্টারদের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
৯। প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা পোর্টেবল এক্সরে এবং আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকতে হবে।
১০। রোগীদের এক রুম থেকে আরেক রুমে নেওয়ার সময় শরীর ঢেকে নিতে হবে
১১। দুই সেকশনের জন্য আলাদা প্যাথলজি রুম রাখতে পারলে ভাল।
নি¤œলিখিত টেস্টিং সুবিধা রাখতে হবে:
সিবিসি, এবিজি, পালস অক্সিমেট্রি, সিরাম ফেরিটিন, বায়োকেমিস্ট্রি ভাইরোলজি টেস্টিং একদিন পর পর।
১২। চেকলিস্ট, গগলস, ফেসশিল্ড, গ্লাভস পুনঃব্যবহারযোগ্য রাবার গ্লাভস ( ক্লিনারদের জন্য) , লেটেক্স গ্লাভস, মাথার ক্যাপ, এন ৯৫, এফএফপি ২ ও সার্জিকেল মাস্ক, গাউন ও রেইনকোট, এলকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব, সাবান ও পেপার টাওয়েল, কন্টেইনার ও প্লাস্টিক ব্যাগ, ওয়াস্ট, লিনেন ও কালেকশান কন্টেইনার ডিটারজেন্ট, স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল (হাত ধোয়া, স্যাম্পল লেকশান, রোগির চিকিৎসা সংক্রান্ত, পিপিই ব্যবহারের নিয়মাবলী)
১৩। বেড ডিস্ট্রিবিউশন :
লেভেল ১= ৩০
লেভেল ২= ১৫
লেভেল ৩= ২৫
লেভেল ৪= ননআইসিউ ১৮ + আইসিউ ১২ (পরিবর্তন যোগ্য)

সুপারিশ সমূহ
হ হাসপাতালে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা
হ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য শয্যা বরাদ্দ রাখতে হবে
হ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ
হ চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং ক্লিনারদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ
হ থাকতে হবে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম
হ করোনা টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করতে হবে
হ চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্যদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে
হ চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে
হ চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
হ সুদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে
হ রোগীর খাবার সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
হ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
হ আধুনিক স্ট্রেরিলাইজেশনের
সুবিধা (অটোক্লেভসহ)
হ ওষুদের পর্যাপ্ত মজুদ

১৪ স্টাফ :
নং পদবী সংখ্যা (প্রতি ১০০ বেডে)
১ তত্ত্বাবধায়ক ১
২ সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ২
৩ বিশেষজ্ঞ (মেডিসিন/বক্ষব্যাধি) ৬
৪ মেডিকেল অফিসার (শিশু) ৪
৫ জেনারেল (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্র
অথবা সিনিয়র) ১২
৬ সিস্টার ইনচার্জ ৮
৭ স্টাফ নার্স প্রতি ৪ বেডে একজন
৮ ফার্মাসিস্ট ৪
৯ টেকনিশিয়ান(ল্যাব) ৪
১০ টেকনিশিয়ান (রেডিওলজী) ৪
১১ টেকনিশিয়ান (ডায়ালাইসিস) ৪
১২ সিকিউরিটি গেটে প্রতি শিফটে ২ জন
১৩ ক্লিনিং প্রতি ১০ বেডের জন্য ৩ জন
১৫ আইসিইউ স্টাফ :
নং পদবী সংখ্যা
১ মেডিকেল অফিসার ৮
২ নার্স ১৬
৩ টেকনিশিয়ান ৮
৪ এসিস্ট্যান্ট ৮
৫ ক্লিনিং ৮

প্রতিবেদক : ইফতেখারুল ইসলাম ও ইমাম হোসেন রাজু

প্রতিবেদনটি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তৈরি করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র :
১. ডাইরেক্টোরেট অব হেলথ সার্ভিসেস, নয়াদিল্লি, ভারত
২. ডকুমেন্ট : ইএমআর বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ভারত
৩. কৌশলগত পরিকল্পনা, পশ্চিমবঙ্গ
৪. ম্যানেজমেন্ট প্রটোকল, কোভিড-১৯, পশ্চিমবঙ্গ
৫. প্রফেসর সৌমিত্র ঘোষ, কোভিড-১৯

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট