চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় বেড়েছে ধর্ম পালন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ এপ্রিল, ২০২০ | ৯:১৫ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে, অন্যদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ম পালন। বাইরে থেকে আসা মাত্র হাত-মুখ ধোয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘনঘন হাত ধোয়া ইত্যাদি।

অন্যদিকে ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ থাকলেও মানুষ ঘরে বসেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। জানা যায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জার প্রার্থনা সীমিত করা হয়েছে। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘করোনার ভয়ে’ একে অপর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেকটা স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে এটা সত্যি। তবে এই সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘরে থাকতে হবে। মানুষ এখন ঘনঘন হাত পরিষ্কার করছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে। এটা একটা ভালো দিক। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মানুষকে ঘরে থাকতে হবে।

জানতে চাইলে নগরীর পাথরঘাটার ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ খান জামে মসজিসের খতিব মো. জুলফিকার আহমেদ জানান, মানুষ বিপদে পড়লে স্বাভাবিক ভাবেই আল্লাহকে ভয় করে। আবার যখন বিপদমুক্ত হয়ে যায়, আবার আল্লাহকে ভুলে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মানুষ এখন বেশি বেশি আল্লাহকে স্বরণ করছে। মসজিদে না আসার জন্য সরকারি ঘোষণা দেওয়ার আগে আমরা দেখেছি মানুষ কি পরিমাণ মসজিদের দিকে ধাবিত হয়েছে। যারা নিয়মিত মুসল্লী তারা কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাসায় নামাজ আদায় করেছে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এরপরও মসজিদে চলে আসতো, পরে সরকার কঠোর হওয়ার পর তা বন্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, এই মহামারি করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষা। জ্ঞানী, ধার্মিক, বৃত্তবানসহ সবার এর থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে, যারা মনে করেছেন আমরা পৃথিবীর সবকিছু জানি, কিন্তু একটি ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করতে পারছেন না। ধার্মিকদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে, যারা মনে করেছেন, আমরা আল্লাহ্র মন জয় করেছি, তাদের এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বিত্তবানদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে, তারা মনে করেছে, অর্থ দিয়ে পৃথিবীতে সবকিছু করা যাবে। কিন্তু আজ সারা বিশ্ব অসহায়। সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তবে মানুষ যদি এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো হয়, তবে আলহামদুলিল্লাহ।

জানতে চাইলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ডায়োসিসের প্রধান (ধর্মপ্রদেশ) আর্চ বিশপ মজেস কস্তা বলেন, এখন মানুষ আগের চেয়ে তুলনামূলক অনেক ধর্মপরায়ণ হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী উপাসনালয়ের পরিবর্তে তারা যার যার ঘরে বসেই ধর্ম পালন করছে। আমাদের গির্জাতেও বাইরের কেউ আসার সুযোগ নেই। ফাদার ও সিস্টার মিলে প্রার্থনা করেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ধর্মীয় আলোচক অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী বলেন, সকল ধর্মের মূলমন্ত্র হলো শুদ্ধ আচরণ। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মেই নই সকল ধর্মে শুদ্ধ আচরণের উপর জোর দিয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সরকারের পক্ষ থেকে যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, হাত ধোয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, হাঁচি দেয়ার সময় কুনই দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, এসব অন্যান্য ধর্মের মত সনাতন ধর্মেও রয়েছে। তাই করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে এসব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আগে আমাদের সার্বজনীন যে সব মন্দিরে পূজার ব্যবস্থা করা হতো, তা বন্ধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট