চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিভাসুতেও হবে করোনার পরীক্ষা

ইমাম হোসাইন রাজু

১৩ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

  • ১২টি মেশিনে সহস্্রাধিক নমুনা পরীক্ষা সম্ভব প্রতিদিন
  • নিরাপত্তার বিশেষ সরঞ্জাম প্রদানসহ ঠিক থাকলে যে কোন মুহূর্তেই চালু

এবার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়েও (সিভাসু) কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যাচাই করে সেখানে পরীক্ষা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ জারি করা হয়েছে। যদিও পূর্ব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকদের দলটিও নমুনা সংগ্রহসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে, চিকিৎসসকসহ ল্যাব সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা সরঞ্জামাধি স্বাস্থ্য বিভাগ সরবরাহ করলে যে কোন মুহূর্তেই চট্টগ্রামে এ বিশ^বিদ্যালয়টিতে করোনার পরীক্ষার কাজ শুরু করতে পারবে বলেও জানান কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান বকাউলের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে করোনাভাইরাস রোগ শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিবকে। তাই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যাচাই করে এই গবেষণাগারগুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু করা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভেটেরিনারি এনিমেল সায়েন্স বিশ^বিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে করোনা পরীক্ষার মতো আধুনিকমানে ১২টি পলিমার চেইন রিএ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন রয়েছে। যাতে নমুনা সংগ্রহের পর অটোমেটিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দ্রুত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিন একটি মেশিনে কমপক্ষে একশ’টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। হিসেব করলে বিশ^বিদ্যালয়ের আধুনিক এ ল্যাবটিতে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। যা বিশ^বিদ্যালয়ের মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের একটি দল রয়েছে। তারাই এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি করবে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা পাওয়ার আগেই ল্যাবটিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এরমধ্যে চট্টগ্রামে আগ থেকেই ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও সক্ষমতার মধ্যেই কাজ চালিয়ে নিতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের। তবে নতুন করে সিভাসুর ল্যাবটি চালু করা হলে বিআইটিআইডি হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত হৃাস পাওয়ার পাশাপাশি সংক্রমণ ছাড়ানোর ঝুঁকিও কমে আসবে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগেও নতুন করে একটি ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। যাতেও সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের যে কোন দিন থেকেই নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে চমেকের চিকিৎসক টিম।
এদিকে, নতুন দু’টিসহ তিনটি ল্যাবে একযোগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে পারলে দ্রুত সময়ের মধ্যে করোন রোগী শনাক্ত করার পাশাপাশি সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিআইটিআইডি হাসপাতালে ল্যাব চালু করার সময় সিভাসুতে সরেজমিনে যাওয়া হয়েছে। তাদের গবেষণাগারটি অত্যাধুনিক। এরমধ্যে বিআইটিআইডি হাসপাতালে এমন ল্যাব থাকলেও সেটি মূল শহর থেকে দূরে। যাতে করে কোন আক্রান্ত রোগী শহর থেকে সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করাটা পুরোপুরিই ঝুঁকি। শহরের মধ্যে চমেকে একটি ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। নতুন করে সিভাসুতে এ কার্যক্রম চালানো হলে, এমন পরিস্থিতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।’
এ প্রসঙ্গে ভেটেরিনারি এনিমেল সায়েন্স বিশ^বিদ্যালয়ের (সিভাসু) জনসংযোগ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও পূর্ব থেকেই আমাদের ল্যাবসহ টিম প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার বিশেষ সরঞ্জাম সরবরাহ না করলে এটি চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু পিপিই দিলেই হবে না, বরং যারা নমুনা সংগ্রহ করবেন, তাদের সকল বিষয়ে ভাবতে হবে। তাহলে প্রতিদিন একটি মেশিনে কমপক্ষে একশটি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট