চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ডিম ছাড়ার মৌসুমেও হালদায় দাপটে চলছে যান্ত্রিক নৌযান

হুমকির মুখে মা মাছ ও জীব বৈচিত্র্য

রাউজান সংবাদদাতা

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ২:০০ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলাচল করছে যান্ত্রিক নৌযান। এ নদীতে গত কয়েকমাস ধরে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবীর সোহাগ, হাটাহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন মাছ শিকার করার সময় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্ধার করেছিল। তারপরও থেমে নেই নদীতে মাছ শিকার। হালদা নদীতে রাতে ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন, ঘেরজাল, বড়শী, হাত জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার। হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করা হয়। হালদা নদীর রেণু থেকে মাছ চাষী, মৎস্য খামারীরা তাদের পুকুর জলাশয়, মৎস্য প্রকল্পে মাছের চাষ করার পর মাছ বিক্রয় করে লাভবান হয় বেশি। বর্তমানে হালদা নদীর মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলছে। মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে নদীতে মা মাছ কবে ডিম ছাড়বে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করার জন্য রাউজান ও হাটহাজারী কয়েকশ ডিম সংগ্রহকারী প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন। ইতিমধ্যে অনেক ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। অনেক ডিম সংগ্রহকারী হালদা নদীর তীরে মাটির কুয়া খনন করে ডিম ফুটানোর জন্য তৈরী করে রেখেছে। হালদা নদীর মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে রাউজানের মোবারকখীল পাকা হ্যাচারিটি ও মেরামত কাজ করে সচল করা হয়েছে বলে রাউজান উপজেলা মৎস্য অফিসের ফিল্ড অফিসার পিযুষ প্রভাকর জানিয়েছেন। হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদীর নাজির হাট থেকে কালুর ঘাট হালদা নদীর মোহনা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীতে সারাবছর মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খাল তেলপারই, সর্তা, কাগতিয়া, সোনাইর খাল, মগদাই, কাঠালভাঙ্গা, বইজ্যাখালী, বুড়ি সর্তা, হাটহাজারীর বোয়ালিয়া, খন্দকিয়া, পোড়ালী, মাদারী খালসহ সকল খালে ছয়মাস মা মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে সকল যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
তারপরও কিছু অসাধু ব্যাক্তি মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় বড়শি, হাত জাল, ঘের জাল দিয়ে করছে মাছ শিকার। হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় হালদা নদীর বালু মহল ইজারা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বন্ধ করে দিলেও রাতে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার ও পাওয়ার পাম্প বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। নদী থেকে উত্তোলন করা বালু যান্ত্রিক নৌযান ভর্তি করে রাতে হালদা নদী দিয়ে চলাচল করছে। হালদা নদীর তীরে রাউজানের পশ্চিম আবুরখীল, মোকামী পাড়া, নগরীর মোহরা এলাকায় গড়ে উঠা ইটের ভাটায় যান্ত্রিক নৌযান দিয়ে ইট পরিবহন, জ্বালানী কাঠ পরিবহন করছে। হালদা নদী ও কর্ণফুলী নদীতে জেগে উঠা হালদার চর ও ছায়ার চর থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি খনন করছে। জেগে উঠা চর থেকে ড্রেজার দিয়ে কাটা মাটি যান্ত্রিক নৌযান দিয়ে হালদা নদী দিয়ে ইটের ভাটায় ও বিভিন্ন এলাকার জায়গা ভরাট কাজে বিক্রয় করছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ কারণে নদীতে মাছ শিকার ও যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের ফলে হালদা নদী মা মাছসহ জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। যান্ত্রিক নৌযান ও ড্রেজার চলাচলের ফলে ড্রেজার এবং যান্ত্রিক নৌযানের ইঞ্জিনের আঘাতে হালদা নদীতে ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যায়। যান্ত্রিক নৌযান ও ড্রেজার চলাচলের ফলে ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌযানের ইঞ্জিনের আঘাতে হালদা নদীতে ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাওয়ার পর নদী পরিদর্শন করে বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট দেয় মন্ত্রণালয়ে।
এদিকে রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা ডেইরি ফার্ম, পোল্টি ফার্ম, কারখানা ও হাটহাজারী উপজেলা নগরীর মোহরায় গড়ে উঠা কলকারখানা, ডেইরি, ফার্ম, পোল্টি ফার্ম, ইটের ভাটার বিষাক্ত বর্জ্য হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালে ফেলা হয়। হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালের পানি দিয়ে বিষাক্ত বর্জ্য হালদার পানির সাথে মিলিত হয়ে পানি দূষণ হওয়ায় হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে বলে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে হালদা তীরের বাসিন্দারা জানান। হালদা নদী রক্ষায় সভা সেমিনার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। রাঘব বোয়ালেরা হালদা নদী থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনাকারী রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে কখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাউজান-হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় হালদা নদীতে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন করার সময়ে বালু উত্তোলন কাজে রাঘব বোয়ালদের নিয়োগ করা দিনমজুরদের ধরে জরিমানা আদায় ও দ- প্রদান করলেও বালু উত্তোলনকারী রাঘব বোয়ালেরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
রাউজান পৌরসভার কাউন্সিলর ও হালদা নদী সুরক্ষা কমিটির আহবায়ক আলমগীর আলী সাংবাদিকদের বলেন, হালদা নদীর তীরে ও হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালের তীরে গড়ে উঠা ইট ভাটার বিষাক্ত বর্জ্য, ডেইরি ফার্ম পোল্টি ফার্মের বিষাক্ত বর্জ্য হালদা নদীতে এসে হালদা নদীর পানি দূষিত হয়ে মা মাছের প্রজননের জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে।’
রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন ক্ষতি হলে তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় রাউজান ও হাটাজারী উপজেলা প্রশাসন নদীতে অভিযান পরিচালনা করে মাছ শিকার করার সময়ে বিপুল পরিমান জাল উদ্ধার করেেেছ। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকায় গত ১৫ দিন ধরে হালদা নদীতে অভিযান করা হয়নি। করেনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হলে হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় জোরালো অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট