চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

শবে বরাতে আল্লাহ পাক যেন করোনামুক্ত বাংলাদেশ দেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

  • রোগী ফিরিয়ে দেওয়া ডাক্তারদের কড়া বার্তা
  • মাঠে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পুরস্কার ও বীমা
  • যারা কষ্টে আছে তাদের তালিকা করার নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শবে বরাতে চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঘরে বসে নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবাই দোয়া করবেন। এবারের শবে বরাতে আল্লাহ পাক যেন লেখেন যে, করোনা থেকে আমরা মুক্তি পাই। আল্ল­াহ অন্তত বাংলাদেশটা যেন রক্ষা করে।’ গতকাল মঙ্গলবার সকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন তিনি। দেশে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেসব চিকিৎসক প্রত্যক্ষভাবে জনগণের সেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসেননি তাদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন না, ভবিষ্যতে তারা চাকরি করতে পাবেন কিনা, তা ভাবা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ত্রাণ বিতরণে যুক্ত অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এটা তাদের জন্যই করব যারা এই করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ করেছেন। অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে শুরু। মূলত মার্চ মাস থেকে এটা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। এই মার্চ মাসে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন এই প্রণোদনাটুকু তাদের জন্য। আর যারা কাজ করেন নাই, যারা নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়েছেন, যেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি, অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পায়নি। তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়। তারা এটা পাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি মনে করেন, আমাদেরকে শর্ত দেন যে, আমাদেরকে সেটা দিলে আমরা আসব, আমি বলব যে সেটা দিতে হলে আগামীতে কীভাবে কাজ করেনৃ এই দুঃসময় যে যাবে তা আমরা অবর্জাভেশনে রাখব। অন্তত এই তিন মাস তাদের কাজ দেখব। সেখানে দেখব কেউ সত্যিকারভাবে মানুষের সেবা দেন কিনা। তারপরে তাদের কথা আমরা চিন্তা করব। কিন্তু শর্ত দিয়ে কাউকে আমি কাজে আনব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের মধ্যে এই মানবতাবোধটুকু নেই, তাদের জন্য প্রনোদনা দিয়ে আনার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদি বাংলাদেশে এমন দুর্দিন আসে, প্রয়োজনে আমরা বাইরে থেকে ডাক্তার নিয়ে আসব, বাইরে থেকে নার্স নিয়ে আসব। কিন্তু এই ধরনের দুর্বল মানসিকতা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না, এটা হল বাস্তবতা। কাজ না করা চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তারা এখন যতই মিটিং করুক, শর্ত দিক, ওই শর্ত দিয়ে আমার কিছু আসে না। বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তা করতে হবে। ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মানসিকতা থাকবে কেন? মানবতাবোধ হারাবে কেন?”
শেখ হাসিনা বলেন, “একজন রোগী আসলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। অ্যাপ্রন পড়ে নেন, মাস্ক লাগান, গ্লাভস দেন, অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, হাত ধোন, রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবে? আর একজন রোগী দৌড়াদৌড়ি করে, ঘুরে সেই রোগী কেন মারা যাবে?” প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক, নার্স নিয়ে আসার কথাও বলেন তিনি।
চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন মক্কা ও মদিনা শরীফ এখন বন্ধ। সেখানে কারফিউ দেওয়া হয়েছে। মক্কা ও মদিনা শরীফেই যখন এ অবস্থা, সেখানে মসজিদে গিয়ে অনেক লোক একসঙ্গে জমায়েত হওয়ায় সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে শবে বরাত। সবাই যাতে ঘরে বসে ইবাদত করে। মসজিদে ভিড় না করে। আল্ল­াহকে যেকোনো জায়গা থেকেই ডাকা যায়। সবাই আল্ল­াহকে ডাকুন। এবারের শবে বরাতে আল্লাহ যেন লেখেন যে, করোনা থেকে মুক্তি পাই। সবাই সে দোয়াটা চাইবেন। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি এ আহ্বান জানাই। আল্ল­াহ অন্তত বাংলাদেশটা যেন রক্ষা করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে আর যাতে কারও এটা না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বাইরে থেকে যারাই আসে, এসেছে-তাদের যেন ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয়।
ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রমের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) এ পর্যন্ত ১৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তারা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডিসি আরও বলেন, আপনার দেয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে। একজন লোকও যাতে ক্ষুধার্ত থাকবে না। আমরা সেই লক্ষ্যে ৭২ হাজার ৪৮৭টি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু নিয়ে আশ্বাস দিলে মেয়র নাছির
চট্টগ্রাম শহরে ডেঙ্গু মশার বিস্তাররোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন মেয়র।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আশ্বস্থ করছি, গত বছর দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দয়ায় এবং আমরা যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণে চট্টগ্রামে সেটি হয়নি। এ বছরও আমরা আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি- অলরেডি আমি মিটিং করেছি, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি। মশক নিধনে ৩ দিন আগে থেকে ওষুধ ছিটাচ্ছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই এটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
আ জ ম নাছির বলেন, ৪১ টি ওয়ার্ডে আরবান হেলথ সেন্টারগুলোতে ১৫৬ জন ডাক্তার আছেন। তাদের আমি আগে থেকে নির্দেশ দিয়েছি, সবাই যেন আরবান সেন্টারে উপস্থিত থাকে। সেবা নিতে আসা রোগীদের সেবা দেয়।
সমন্বিতভাবে কাজ করছি : শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ। আপনি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন, বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে, অত্যন্ত দৃততার সঙ্গে জরুরি উপকরণসহ বিআইটিআইডিতে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করেছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ১২ আউলিয়ার পণ্যভূমি। স্থানীয় প্রশাসন, বিত্তশালী, রাজনৈতিক নেতা এবং আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন সবাই সমন্বয় করে কাজ করছে। সব কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
ব্যারিস্টার নওফেল আরও বলেন, চট্টগ্রামে যে দুইজন করোনার পেশেন্ট রয়েছেন, তারা আমার সংসদীয় আসনের। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫টি জায়গা ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, চট্টগ্রামে আর করোনা রোগী আমরা পাবো না। আমরা সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করছি। আমরা সবাই আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে করোনা ঝুঁকি মোকাবিলা করবো।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় ভিডিও কনফারেন্সে আরও বক্তব্য দেন সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আজাদ, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট