চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘরে ফেরানো যাচ্ছে না কিছুতেই

আল-আমিন সিকদার

৫ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

  • অলিগলির চায়ের দোকানে করোনা বিষয়ক আড্ডা
  • সেনাবাহিনী পুলিশ দেখতে সড়কে উৎসুক জনতার ভিড়
  • অলিগলির মাঠে ক্রিকেট ফুটবলে ব্যস্ত তরুণেরা

হঠাৎ পুরো বিশ্বকে থমকে দিয়েছে একটি ভাইরাস। করোনাভাইরাস নামক এই রোগটি এরইমধ্যে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের প্রাণ। পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১১ লাখের বেশি মানুষ। চীনের উহান শহরে জন্ম নেয়া এই ছোঁয়াছে রোগটিকে অন্যান্য দেশগুলোর মত মহামারী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।

সরকারি ছুটি ঘোষণা করার পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনুরোধ জানানো হচ্ছে ঘরে থেকে নিরাপদ থাকার। যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাশসনের পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যে রোগটির ভয়াবহতার কাছে হার মেনে সৃষ্টিকর্তার দয়া কামনা করছে। সেখানে এ রোগটি যেন বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিয়ে এসেছে ‘উৎসব আর আনন্দঘন মুহূর্ত’। এই বাক্যটি বলার যথাযত কারণও রয়েছে।
হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে সরকার টানা ছুটি ঘোষণা করলেও তা মানছেন না সাধারণ মানুষ। পুলিশ, সেনাবাহিনীর ভয়ে সড়কে না গেলেও অলিগলিতে আড্ডায় মেতেছেন তারা। শুধু কি আড্ডা, ছোট ছোট খেলার মাঠগুলোতেও ক্রিকেট-ফুটবল খেলতে দেখা গেছে তরুণদের। আড্ডা চলছে দলবেঁধে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খোলা রাখা অলিগলির চা-দোকানগুলোতে বসে চলছে করোনা বিষয়ক নানান আলোচনা সমালোচনা। অনেকেতো আবার বের হয়েছেন সেনাবাহিনী গলিতে আসছে কি না তা দেখার জন্য। বলছেন ঘরে বসে ছুটি কাটাতে ভালো না লাগার কথা। আর এমন চিত্র শহরের প্রতিটি অলিগলিতে। অলিগলিতে ঘোরাফেরা করা এসব মানুষগুলোকে ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগরীর ইপিজেড এলাকার শহীদ নুরুজ্জামান সড়ক। শ্রমজীবী মানুষের বসবাস হওয়ায় জনবহুল এই সড়কটি। কর্মঘণ্টার সময় নীরব থাকা এ সড়কের অলিগলিগুলোতে এখন যেন বইছে ঈদের আমেজ। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর এখানকার মানুষগুলো ঘর থেকে বেরিয়ে মেতে উঠেছেন আড্ডায়। খোলা রয়েছে সকল দোকানপাট। এই গলিরই একটি খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে এলাকার তরুণদের। চায়ের দোকানগুলোতেও দেখা গেছে মানুষের ভিড়।
মাঠে খেলতে আসা তরুণ অঙ্কন দাশের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ। এখানে যারা খেলছে সবাই ছাত্র। অনেকে চাকরিও করেন। সবাই ছুটি পাওয়ায় বিকেলে মাঠে আসে। তাই সবাই মিলে ক্রিকেট খেলি। পুলিশ আসছে শুনলে চলে যাই। সবাইতো ঘোরাঘুরি করছে আমরা খেললেই যত দোষ’।
এদিকে ওষুধের খালি প্যাকেট নিয়ে গলিতে সেনাবাহিনী আসার খবর পেয়ে বের হয়েছ রফিক নামে এক ব্যক্তি। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাসায় বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ সেনাবাহিনী আসছে বলে মানুষ দৌড়াচ্ছে। তাই পরিস্থিতি দেখতে বাইরে বের হয়েছি। সাথে মাস্ক ও ওষুধের প্যাকেট নিয়েছি, ধরলে বলবো ওষুধ কিনতে যাচ্ছি’।
অন্যদিকে চায়ের দোকানগুলোতে করোনা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গুজব নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছেন অনেকে। আর এদেরকেই আত্মঘাতী হিসেবে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগী রয়েছেন। এটি একটি ছোঁয়াছে রোগ। এমন সংবাদ জানার পরেও যারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন তারাই আত্মঘাতী। তাদের ঠেকানো না গেলে এই মহামারী রোগটিকেও ঠেকানো যাবে না’। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের জোড়ালো পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এদিকে অলিগলির এই জনসমাগম সামলাতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান ইপিজেড থানার ওসি মীর মো. নুরুল হুদা। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। আমরা প্রতিদিনই অলিগলিতে পুলিশের গাড়ি পাঠিয়ে জনসমাগম ঠেকানোর চেষ্টা করছি। তাদের ঘরে থাকার জন্য সতর্কতামূলক মাইকিং করছি। তবুও অলিগলির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পুলিশ যাওয়ার পরপর তারা আবার ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট