চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

আইসিইউ পরিচালনা

প্রস্তুতির সময় এখনই

চট্টগ্রামে করোনা মোকাবিলা

ইফতেখারুল ইসলাম

৩০ মার্চ, ২০২০ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

  • চট্টগ্রামে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে
    আইসিইউ বেড আছে প্রায় ৯০টি।
  • এনেসথিওলজিস্ট আছেন প্রায় ৬০
    জন। এরমধ্যে প্রায় ৪০ জন সরকারি,
    বাকিরা বেসরকারি ও অবসরপ্রাপ্ত।

বিশ^জুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের মহামারী। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশগুলোও করোনার কাছে পরাস্ত হচ্ছে। চট্টগ্রামবাসীও আতঙ্কে আছেন। করোনা মহামারী হলেই আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রামের প্রস্তুতি এবং সীমাবদ্ধতা আছে বলে সচেতন মহল করছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি নির্ধারণে পর্যায়ে এপিডিমিওলজিস্টদের পরামর্শ খুবই জরুরি তারাই বুঝতে পারেন মহামারীর গতিধারা। এই ভাইরাস কতদিন থাকতে পারে এবং কখন সর্বোচ্চ আঘাত আনতে পারে, কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তার একটা ধারণা দিতে পারেন তারা। এখানে উল্লেখ্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন যে দুইজন পরামর্শ দিচ্ছেন দুই উপদেষ্টাই স্বনামধন্য এপিডিমিওলজিস্ট।
আমেরিকায় এক সপ্তাহ আগেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল। এখন তাদের আক্রান্তের সংখ্যা পৃথিবীর সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশও সীমিত আকারে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রামেও চলছে করোনা মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি। সরকারি হাসপাতালের বাইরে ইতিমধ্যে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ বেড ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এসব বেড ব্যবহার করতে দেয়ার সম্মতি দিয়ে পার্ক ভিউ কর্তৃপক্ষ প্রশংসনীয় কাজ করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাক্রান্ত রোগীর নিউমোনিয়া হলে অবস্থা জটিলতা দেখা দেয়। নিউমোনিয়াক্রান্ত রোগীর শ^াস-প্রশ^াস ঠিক রাখতে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। তা দিতে না পারলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। আইসিইউ পরিচালনা করতে প্রয়োজন হয় এনেসথিওলজিস্ট, চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। কিন্তু চট্টগ্রামে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে আইসিইউ বেড আছে প্রায় ৯০টি। আর এনেসথিওলজিস্ট আছেন প্রায় ৬০ জন। এরমধ্যে প্রায় ৪০ জন সরকারি, বাকিরা বেসরকারি এবং অবসরপ্রাপ্ত। এই অল্প ক’জন এনেসথিওলজিস্ট যোদ্ধাই পালাক্রমে ২৪ ঘন্টা আইসিইউ’তের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ’তে ১২টি বেডের জন্য নার্স আছেন ৩৯ জন। অর্থাৎ প্রতি বেডের অধীনে তিন জন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেড প্রতি তিনজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকলে মোট সংখ্যা হবে ২৭০ জন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক চিকিৎসকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, যেখানে ইউরোপ আমেরিকা মহামারীর রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইসিইউ’র ব্যবস্থা করতে পারছে না, সেই তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি অপ্রতুল হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের যা আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাকতে হবে। করোনার মহামারীর কারণে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে সার্জারি এক প্রকার বন্ধ এবং আইসিইউ’তেও রোগী নেই। তাই বেসরকারি হাসপাতালের এনেসথিওলজিস্ট, নার্স এবং সংশ্লিষ্টরা অনেকটা অবসর সময় কাটাচ্ছেন। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তাদের তালিকাভুক্ত এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রাখাটা খুবই জরুরি। উপজেলা পর্যায়ে এনেসথিওলজিস্টের পদ থাকলেও আইসিইউ বেড নেই। সেখানে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সময়ে আইসিইউ সেবায় নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন। চট্টগ্রামে আইসিইউ’র অভিজ্ঞতা নেই এমন এনেসথিওলজিস্ট এবং নার্সও অনেক আছেন। তাদেরকেও প্রস্তুত রাখা জরুরি।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথিওলজিস্ট চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম সামশুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামে স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ আইসিইউ’র রোগী থাকে তাদের জায়গা দেয়া সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথিওলজিস্ট চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও চমেক হাসপাতালের এই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রঞ্জন কুমার নাথ পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ৯০টি আইসিইউ বেড আছে। চট্টগ্রামের চাহিদার তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই তারা সেবা দিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট