চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

মেয়াদ শেষ, শেষ হয়নি ৫ প্রকল্প

সিডিএ’র ১৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ছয় প্রকল্প,৫ টি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রাণালয়ে , বাকলিয়া এক্সেস রোডের কাজ ভবন নিয়ে জটিলতার কারণে শেষ করা যাচ্ছে না।

ইমরান বিন ছবুর

২৩ মার্চ, ২০২০ | ৪:০৫ অপরাহ্ণ

নগরীতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রায় ১৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ছয় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও এই ছয় প্রকল্পের একটিরও কাজ শেষ হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় একদিকে যেমন প্রকল্পের অর্থ ও মেয়াদ বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। ছয় মেগা প্রকল্পের মধ্যে পাঁচ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।   এই ছয় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পতেঙ্গা থেকে ফৌজহারহাট চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড, বায়েজিদ বাইপাস সড়ক (লুপ রোড),  কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত আউটার রিং রোড ও সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত বাকলিয়া এক্সেস রোড।

জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সিডিএ’র ছয় মেগা প্রকল্পের মধ্যে পাঁচ মেগা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলো শেষ করা যায়নি।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প : চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খান পুনঃখনন, সম্প্রসারণ,  সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় জুলাই ২০১৭ থেকে ২০২০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ জুন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ২৩টি খালের পাড়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ কি. মি. রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাঁচটি রেগুলেটরের কাজ শুরু এবং ৪০টি কালভার্ট/ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সিডিএ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ৩৬টি খালে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে ৩ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত মোট ১৬ কি. মি. দৈর্ঘ্যরে ফ্লাইওভারের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে ২৪ শতাংশ।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইওভারের মধ্যে বর্তমানে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সি-বিচ পর্যন্ত ৬ কি. মি. অংশে কাজ চলমান আছে। অবশিষ্ট ১০ কি. মি. এর মধ্যে সল্টগোল ক্রসিং থেকে সিমেন্টক্রসিং পর্যন্ত ৩ কি. মি. অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে। বন্দর ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আপত্তির প্রেক্ষিতে বিকল্প সড়ক হিসেবে সিডিএ’র নির্মাণাধীন সিটি আউটার রিং রোডের কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এ অংশে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, বারিক বিল্ডিং থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) রিং রোড এবং এক্সেস ও পিসি রোড নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের আপত্তির কারণে উক্ত অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক এবং ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদন পায়।

সিটি আউটার রিং রোড : প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় জানুয়ারি ২০১১ থেকে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত। তৃতীয় বারের মত সংশোধিত হয়ে এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে ক্রমপুঞ্জিত ভৌত অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস জানান, প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১ বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব সহকারে প্রণীত ৩য় সংশোধিত ডিপিপি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যা বর্তমানে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ফিডার রোড-১ এর ক্ষতিগ্রস্ত জমি ও বাড়ির ক্ষতিপূরণ মামলার কারণে ডিসি অফিস হতে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় জমি দখল নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে হাইকোর্টে মামলা শেষ হয়েছে এবং লোয়ার কোর্টে মামলা থাকায় ডিসি অফিস কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।

বায়েজিদ বাইপাস সড়ক : ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির অগ্রগতি বর্তমানে ৯২ শতাংশ। মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি ২০২০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মামলার কারণে তা অনিশ্চত ।

প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ১০ কোটি টাকার মামলার কারণে বর্তমানে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। পাহাড় কর্তনের অভিযোগ এনে পরিবেশ অধিদপ্তর সিডিএকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি পূরণের আদেশ দেয়। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

আউটার রিং রোড : দুই হাজার ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে সিডিএ। জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদকাল ধরা হলেও বর্তমানে কাজ হয়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ। প্রকল্পটি জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব মন্ত্রালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পে ৮টি রেগুলেটর/স্লুইস গেট এবং বাঁধের মাটি ভরাটের কাজ চলমান আছে।

বাকলিয়া এক্সেস রোড : নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত বাকলিয়া এক্সেস রোডের মোট অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। ২২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। বাবে ইউসুফ ভবন প্রকাশ ‘কর্ণেল ভবন’ নিয়ে জটিলতা থাকায় সড়কের কাজ শেষ করতে পারছে না সিডিএ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট