চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

কবে সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে নারী পুরুষ!
কবে সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে নারী পুরুষ!

কবে সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে নারী পুরুষ!

ডেইজী মউদুদ

৮ মার্চ, ২০২০ | ২:০১ পূর্বাহ্ণ

বেগম রোকেয়ার প্রদর্শিত পথ ধরে আমাদের নারী সমাজ এগিয়েছে বহুদূর। নারীর যে সমঅধিকার, মর্যাদা আর সম্মানের জন্য তিনি সংগ্রাম করেছিলেন, তা কিছুটা অর্জিত হয়েছে। নারী আজ সচেতন হয়েছে, তার অধিকারটা আসলে কি, তা বুঝতে শিখেছে। অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে চার দেয়াল থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসলেও আজ কিন্তু হারিয়েছে তার যোগ্য সম্মান ও ন্যায্য মর্যাদা। আজ নারীর মর্যাদা ও সম্মান একবারে ধূলায় ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আজ আমরা এমন এক সময়ে নারী দিবস পালন করছি, যেখানে নারী তার সম্মান আর মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা তো দূরের কথা, নানামুখী নির্যাতনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে প্রতিনিয়ত। ধর্ষণ , হত্যা, খুন , পাচার ছাড়াও কতভাবেই নারীকে নির্যাতন করে চলেছে। অন্যদিকে অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে নেতিবাচক তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নারীর জীবন আর স্বাভাবিক নেই, এক উদ্ভট ও অদ্ভুত জীবন ধারা নারীর স্বাভাবিক এবং সহজাত প্রবৃত্তিকে যেন দংশন করে চলছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে গণ পরিবহনে ধর্ষণ এবং হত্যা। তবে নারীর এই অধঃপতনে নষ্ট সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী অতি অল্প নারী-ই দায়ী। আবার এই নষ্ট সমাজও কিন্তু পরিচালিত, নেতিবাচক কিছু মানুষরূপী হায়েনা কর্র্তৃক । আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর আমরা দিবসটি পালন করি অনেক ঘটা করে। কয়েক দশক ধরেই পালন করছি। দিবসটির প্রেক্ষাপট আর ইতিহাস আজ সকলেরই জানা। প্রতি বছর জাতিসংঘ একএকটি প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমি এই সমতার প্রজন্ম : নারীর অধিকার উপলব্ধি করি’। হ্যাঁ, আমরা আমাদের প্রজন্মকে কি শেখাতে পেরেছি, তাদের সমঅধিকার কি, তাদের প্রাপ্য সম্মান আর মর্যাদা কি? আর পারিনি বলেই প্রজন্ম আজ মা বোন তথা নারী জাতির মর্যাদা দেয়া তো দূরের কথা, এই প্রজন্মের হাতে নারীর মর্যাদা আর সম্মান বলতে কিছুই থাকলো না।

আমাদের দেশের আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত যে নারীরা খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও হামলার শিকার হচ্ছেন তাদের জন্য এবারের বিশ্ব নারী দিবসে আমরা কি সান্ত¡না দেব? সেই কত আগে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্রী ইতি চাকমাকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। কক্সবাজারে নাহিদা আক্তার নামে এক ছাত্রীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে এক বখাটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উঠেছে যৌন হয়রানির অভিযোগ। তাই প্রশ্ন জাগে, কোথায় নিরাপদ নারী? জন্মের আগেই কন্যাশিশুর ভ্রূণকে হত্যা করা হয়। জন্মের পর মেয়ে জন্ম দেওয়ার অভিযোগে মাকে তালাক তো ঘটছে হরহামেশা। এমনকি কন্যাশিশুকে মেরে ফেলাও হচ্ছে । আর না হলে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে উঠছে সে। আর পারিবারিক নির্যাতন, স্বামী ও শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়দের হাতে খুন এগুলো তো কোনো বিষয়ই না। পথে ঘাটে যৌন হয়রানি, খুন ধর্ষণ, অপহরণ চলছে তো চলছেই। কে রুখবে বখাটেদের?

প্রতিনিয়ত খুন ধর্ষণের শিকার আদিবাসী, বাঙালি, পাহাড়ি, সমতলবাসী, সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু সকল নারীর কাছে যেদিন সমঅধিকারের বার্তা পৌঁছাবে, সেদিন আর কত দূরে জানি না। আর সেইসঙ্গে দেশের প্রতিটি পুরুষ কবে নারী-পুরুষ সকলের অধিকার নিয়ে সচেতন হবে, নিজের পুরুষতন্ত্রের খোলস ছিঁড়ে মানুষ হয়ে উঠবে জানি না। কবে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্রহননে ব্যস্ত না হয়ে সম্মিলিতভাবে ধর্ষকের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হবে জানি না।
১৯১০ সালে ক্লারা জেৎকিন যে নারী দিবসের ঘোষণা করেছিলেন, জানি না আর কত শতাব্দী পরে তা সমানাধিকারের, বৈষম্যহীনতার আলোয় সার্থক হবে, উজ্জ্বল হবে। এই লড়াইতে শুধু নারী নয়, সামিল হবে সকল বিবেকবান পুরুষ। নারীর মুক্তি, নারীর অধিকার মানবাধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হোক নারীর অধিকার, প্রতিষ্ঠিত হোক সকল নাগরিকের মানবিক অধিকার। বৈষম্যহীন বিশ্বের পথে সফল হোক নারীর অগ্রযাত্রা। সবাইকে নারী দিবসের অগ্রিম সংগ্রামী অভিবাদন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট