চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চকরিয়া থেকে পুলিশের ১০ সদস্য প্রত্যাহার

মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে পুলিশি তাণ্ডব, স্ত্রী পুত্রসহ আহত ৭

নিজস্ব সংবাদদাতা, চকরিয়া

৬ মার্চ, ২০২০ | ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে হামলা, মারধর, লুটপাট ও ভাংচুর চালিয়েছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। খোয়া গেছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার। পুলিশের মারধরে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিসহ সাত সদস্য আহত হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মাঝিরঘাট পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
কোন কারণ ছাড়াই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে তা-ব চালানোর অভিযোগে পুলিশের ১০ সদস্যকে সন্ধ্যায় চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।
প্রত্যাহারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, এসআই কামরুল ইসলাস, এসআই মিজান, এসআই তুষ্ট লাল বিশ্বাস, এএসআই জেড রহমান ও ছয়জন কনস্টেবল।
আহতরা হলেন, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির স্ত্রী ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম (৬২), পুত্রবধূ চকরিয়া মহিলা কলেজের প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন (২৮), মোরশেদুল আলম শিফাত (২৮), তার স্ত্রী সাবানুর শাভা (১৯), পুত্রবধুূ শাহানা আক্তার শানু (৩২ ),
পুত্রবধূ ফাতেমা ইয়াসমিন, বাড়িতে আসা মেহমান হাসান আবুল কাশেম, নাতি আরশেনুল করিম সোহা (৯) ও নাতনি আনোয়ার মোস্তাফিজ (১৪)। তন্মধ্যে গুরুতর আহত মোরশেদুল আলম শিফাতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ মার্চ রাত ৯টার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের ওসান সিটি মার্কেটে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায় মো. সাগর নামের এক বখাটে। ওই হামলায় দুইজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ সাগরকে আটক করতে অভিযানে নামে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (গতকাল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মাঝির পাড়ার আবুল কালামের প্রকাশ ‘চোরা কালাম’র বাড়িতে তার ছেলে সাগরকে ধরতে অভিযানে যায় একদল পুলিশ। ওইসময় অভিযানিক দল সাগরকে আটক করতে চাইলে পুলিশের উপর হামলা চালায় সাগর ও তার পরিবারের সদস্যরা। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে বলে ওসি হাবিবুর রহমান দাবি করেন।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার (গতকাল) দুপুরে থানার এসআই কামরুল ইসলাম, তুষ্ট লাল বিশ্বাস, মিজান ও এএসআই জেড রহমানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি পুলিশ টিম তিনটি গাড়িতে করে সাগরের বাড়ির সামনে যায়। ওখানে গাড়িগুলো রেখে পুলিশ টিমের সদস্যরা প্রায় ৫০ গজ দূরে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে ঢুকে তা-ব চালায়। এসময় তারা মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়ির ভিতরের প্রতিটি রুমে ভাঙচুর ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধু ও নাতি-নাতনিদের মারধর শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং প্রতিটি রুমে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে তারা আমার ছোট ছেলে ও
পুত্রবধূকে মারধর করতে থাকে। আমি পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তারা আমার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে টানা-হেঁছড়া করে।
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির ছেলে এম কে মো. মিরাজ বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা কাইছারের ইন্ধনে পুলিশরা আমার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর চালায়, মারধরে আহত করে। এসময় বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার খোয়া যায়। তবে এসব কে নিয়েছে আমি জানিনা। আমার মা দেখলে চিনবে। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করবো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পুরো ঘটনার ব্যাপারে ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত শুরু হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজি মো. মতিউল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সবাইকে শান্ত থাকার জন্য বলেছি। এদিকে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।
এসময় তারা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, অবশ্যই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

পূর্বকোণ/ জাহেদ-এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট