চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ভাস্কর্য শিল্পীরা মানুষের অদেখা ভাবনাগুলোকে তুলে আনে
ভাস্কর্য শিল্পীরা মানুষের অদেখা ভাবনাগুলোকে তুলে আনে

‘নমনীয় ও কঠিন’ ভাস্কর্য প্রদর্শনীর শেষদিন আজ

ভাস্কর্য শিল্পীরা মানুষের অদেখা ভাবনাগুলোকে তুলে আনে

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২ মার্চ, ২০২০ | ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

মানব ও দানব এক সৃষ্টিকর্তার তৈরি। মানুষের জীবনে এমন অনেক বিষয় আছে যা খালি চোখে দেখা যায় না। আবার মুখে বলেও বুঝানো যায় না। কিন্তু একজন শিল্পী তাঁর শিল্প চোখ দিয়ে সেই অদেখা বস্তু বা বিষয়কে দেখতে পায়। শিল্পের চোখ দিয়ে যা দেখা যায় তাই শিল্পীকে তার শিল্পকর্ম দিয়ে ফুটিয়ে তুলা আর সাধারণের সামনে অর্থবহুল করানোই একজন শিল্পীর ধর্ম। আমরা ভাস্কর্য শিল্পীরা সেই চিন্তায় পোড়ামাটি ও সিরামিকের ব্যবহারে তৈরি করেছি মানুষের অদেখা ভাবনাগুলোকে। যেকেউ প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখলেই তারাও কল্পনায় থাকা সেই অদেখা ভাবনাকে দেখতে পারবে। এমন অনেকগুলো ভাবনা ও বিষয় নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখতে দেখতে গল্পের মত কথাগুলো বলেন বিখ্যাত ভাস্কর শিল্পী নীলুফার চামান। শুক্রবার বিকেলে ভাস্কর্য কেন্দ্র চট্টগ্রাম ‘নমনীয় ও কঠিন’ শিরোনামে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারিতে যৌর্থ ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে। চার দিনের এ ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আজ শেষ দিন। প্রদর্শনীতে প্রায় ত্রিশজন শিল্পীর ৩২টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এ ভাস্কর্য শিল্পকর্মে প্রদর্শিত শিল্পকর্মগুলো তৈরি করা হয়েছে

পোড়ামাটির পলক ও সিরামিক দিয়ে। প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, বিখ্যাত ভাস্কর শিল্পী অলক রায়ের ‘হেলেন কেলারের স্মরণে’ একটি আঙ্গুল। এটি তৈরি করা হয়েছে পোড়ামাটি আর সিরামিকের ব্যবহারে।

ভাস্কর্য কেন্দ্র চট্টগ্রামের সভাপতি ভাস্কর অলক রায় বলেন, শিল্প এমন একটি জগত যেখানে নিজের মনের কথা নিজের শিল্পকর্ম দিয়ে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এটি কঠিন সাধনার বিষয়। যার জন্য তপস্যা করতে হয়। আর এর জন্য ভালোবাসাও থাকতে হয়। শিল্পের মূল্য কোনো কিছু দিয়ে করা যায় না।

নীলুফার চামানের সাথে আলাপে তিনি বলেন, এই যে দেখা যাচ্ছে ঘণ্টা! এরই নিচে জ্বলছে একটি প্রদীপ শিখা। এটি কিন্তু খালি চোখে দেখলে মনে হয় শুধু একটি

প্রদীপ আর টুং টাং ঘণ্টা বাজছে। কিন্তু যদি ভাবনার চোখে দেখা হয়, তাহলে এটি শুধু একটি ঘণ্টা বা প্রদীপ শিখাই নয়। আমি কিন্তু এটি দ্বারা বুঝাতে চাইছি এপারে অনেক যন্ত্রনা। সুখ-দুঃখ, কষ্ট, হাসি-কান্না আরো কত ঝামেলা। কিন্তু ওপারে আছে অনেক শান্তি। যেখানে ভগবান বাস করে। তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এই ঘণ্টা দ্বারা ওপারে বাস করা ভগবানের ঘুম ভাঙাতে হবে। তাই আমি এটির নাম দিয়েছি ‘ব্রহ্মা এখন ঘুমাইতেছেন’।

ভাস্কর অলক রায় বলেন, বোবা ও অন্ধ মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে আঙ্গুল। বোবা হাতের আঙ্গুল দিয়ে তার মনের সকল ভাষা অন্যকে বুঝায়। বিখ্যাত ব্যক্তি হেলেন কেলার ছিলেন বোবা। তিনি তার মনের প্রতিটি ভাষা এই আঙ্গুলের সাহায্যে বুঝাতেন। এছাড়া তার আরেকটি শিল্পকর্ম ‘গতির অগতি’। আরো দেখা যায় নীলুফার চামানের ‘ব্রহ্মা এখন ঘুমাইতেছেন’, অলোক কুমার সরকারের ‘তরঙ্গ’, সেলিনা বেগমের ‘মাটির স্পন্দন’, সামিনা এস করিমের ‘শ্রাবিত আত্মা’, তপন ঘোষের ‘একতা’, রেহানা শিলার ‘শিকড়’, মুজাহিদ মুসার ‘বাতাসের কান্না’, মো. রুহুল কুদ্দুস কনকের ‘করলা’ অনুপ রায়ের ‘পাখি ও আমি’, মো. আনোয়ারুল হকের ‘ছন্দ’, মো. ফজলুল হকের ‘সম্পর্ক’ ও সঙ্গীতার ‘গতিবিধি’ সহ আরো কিছু রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট