চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতিবন্ধী এতিম কলেজ ছাত্রী

চৈতালি চাকমার জীবনসংগ্রাম অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত

অভাবের সংসার চালাতে চাহিদা শুধু একটি সেলাই মেশিন

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:২১ পূর্বাহ্ণ

পানছড়ি সদর ইউপির মির্জিটিলা মধুমঙ্গলপাড়া গ্রামের মেয়ে চৈতালি চাকমা। জন্ম থেকেই সে প্রতিবন্ধী। তার বাম পায়ের হাঁটু থেকে নিচের অংশ একেবারে চিকন আর বাঁকানো। তাই হাঁটিহাঁটি পা পা বয়সেই রপ্ত করে নেয় লাঠিতে ভর দিয়ে চলা। আর সেই লাঠির উপর ভর করেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গ-ী পার হয়ে এখন ডিগ্রি ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। তার মা ইন্দ্রমুখী চাকমা ও প্রতিবন্ধী বাবা সুখ রঞ্জন চাকমা যথাক্রমে ২০১৪ ও ১৬ সালে মারা যায়। বাবার রেখে যাওয়া ঘরে একমাত্র বড় ভাই অমর কান্তি চাকমার সাথেই তার বসবাস। ঘরভিটা ছাড়া বাবার আর কোন জায়গা-জমি না থাকায় পরের জমি বর্গাচাষ আর দিন মজুরি করেই চলছে ভাইয়ের সংসার।

মিষ্টিভাষী চৈতালি জানায়, লাঠি ভর করেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে পানছড়ি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩.৮১ নিয়ে এসএসসি ও ২০১৪-১৫ সালে ঢাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩.৩৮ নিয়ে এইচএসসি পাস করে। বর্তমানে সে পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের আওতাধীন সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণরত। নিজের সেলাই মেশিন থাকলে গ্রামের ছোট-খাট সেলাই কাজগুলো করে নিজ খরচের টাকাগুলো জোগাড় হয়ে যেত বলে জানায় সে। বর্তমানে তিন মাস পর পর প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ২২৫০ টাকাই তার একমাত্র সম্বল। তার বড় ভাই কষ্ট করে হলেও তার ভরণপোষণ, পড়ালেখা, পোশাকাদির চাহিদা মেটায়। তাছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা তাকে লেখাপড়ার ব্যাপারে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।

পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র চাকমা জানায়, অত্যন্ত গরিব পরিবারের মেয়ে চৈতালি। পড়ালেখার প্রতি তার খুব আগ্রহ। নতুন প্রজন্মের কাছে সে একটি দৃষ্টান্ত। পানছড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা জানান, মেয়েটি লাঠিতে ভর করে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কলেজে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। তাকে কলেজের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বিত্তবানরা তাকে একটি সেলাই মেশিন দিলে হয়তো ঘরে বসে তার খরচাদির টাকাগুলো নিজেই আয় করতে পারবে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী অফিসার মো. শাহজাহান জানান, মেয়েটির মেধার কথা শুনে ভালোই লাগছে। লাঠি ভর করে ডিগ্রি ৩য় বর্ষের ছাত্রী চৈতালি চাকমাকে আইডল বলা চলে। একটি আবেদন নিয়ে গেলে তার সেলাই মেশিনের ব্যাপারটি আন্তরিকতার সহিত দেখবেন বলে জানান তিনি।
পানছড়ি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মেয়েটি এতিম, তবে মেধাবী। তার প্রতি বিত্তবানরা একটু নজর দিলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহ পাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট