ওমর কায়সার, কবি ও প্রাবন্ধিক। দীর্ঘদিন ধরে কবিতার সাথে বসবাস । প্রকাশিত হয়েছে বেশ কটি বইও। এবারের বইমেলায় প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবিতাগ্রন্থÑ ‘আমিহীন আমার ছায়াগুলো’। বইমেলাকে কেন্দ্র করে পূর্বকোণের পক্ষ থেকে কবিকে কিছু প্রশ্ন করা হয়। কবি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রশ্নগ্রলোর উত্তর দিয়েছেন। পূর্বকোণের পাঠকদের জন্য উত্তরগুলো তুলে ধরা হল।
কেন বই প্রকাশ করেন প্রশ্নের জবাবে কবি জানানÑ ‘অনেকে যে কারণে করে সে কারণেই আমার বই করা।’ প্রথম বই প্রকাশ আর বর্তমান বই প্রকাশের অনুভূতি নিয়ে জানানÑ
‘আমার প্রথম বইয়ের নাম ‘প্রাগৈতিহাসিক দুঃখ’। ১৯৮৮ সালে অচিরা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায়। আমার বন্ধু কবি, বর্তমানে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত খুব যতœ করে ঢাকায় বইটির মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করেছিল। এই বইটি প্রকাশের পর আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম। বাংলাদেশের সব পত্রিকায় বড় বড় করে এই বইয়ের আলোচনা হয়েছে। ভারতে পশ্চিম বঙ্গ থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকায় এই বইয়ের আেেলাচনা করেছিলেন দেবাঞ্জলি মুখোপাধ্যায়। তখনকার চট্টগ্রামের পাবলিক লাইব্রেরি মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আমার আর বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার প্রাণের জল শ্যাওলা শরীরে’ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এই সব আয়োজনের জন্য আমাদের কিছুই করতে হয়নি। সবাই স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের মতো সেই সময়ের তরুণদের প্রেরণা দিতেই এই কাজগুলো যে যার নিজের ক্ষেত্র থেকে করেছিলেন। এর পরের বইগুলো যখন প্রকাশিত হয় তখন আর প্রথম বইটির মতো এত আলোড়ন হয়নি। তবে পাঠকের সাড়া পেয়েছি।
তবে আমার সর্বশেষ কবিতার বই ‘আমিহীন আমার ছায়াগুলো’ প্রকাশের পর সেই প্রথম বারের মতো ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। অনেকেই পড়ে আমাকে ব্যক্তিগত অনুভূতি জানিয়েছেন।’
বই প্রকাশে জটিলতা নিয়ে বলেনÑ ‘আমার এবারের বই বের করতে কোনো জটিলতা হয়নি। বরং সবচেয়ে সহজভাবে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমা প্রকাশন সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছে।’
বই বিক্রি না হলে অনেক লেখক হতাশ হন সে বিষয়কে কবি জানানÑ ‘লেখক হতাশ হন, একথাটি আপনাকে কে বলেছে? লেখক বই লিখে শেষ করেন। প্রকাশক তা বের করেন। কবিতার বই এমনিতেই কম বিক্রি হয়। বই বিক্রি হওয়ার ওপর এর গুনাগুন বিচার হয় না। ’
বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে খুব বেশি গুরুত্ব দেন প্রশ্নে জানানÑ ‘যখন বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই তখন যে কোনো প্রকাশককে দেয়ার আগে খুব যাচাই-বাছাই করে দিই। ভাষার ভুল আছে কিনা, বানান ভুল আছে কিনা, কোথাও অসঙ্গতি আছে কিনা ভালোভাবে দেখি। তারপরও ভুল থেকে যায়।’
তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেনÑ ‘তরুণ অনেক লেখক আমার খুব প্রিয়। তাদের কবিতা আমাকে নাড়া দেয়। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ সময় যেন অযথা কাজে তারা নষ্ট না করে। যে যার বিষয় বা মাধ্যম নিয়ে লেগে থাকে। তাদের কাব্যচর্চাকে তারা যেন সাধনার মতো নেয়।’
বইমেলার পরিসরে নিয়ে কবি জানানÑ ‘গত বছর থেকে চট্টগ্রামে সমন্বিতভাবে বইমেলার আয়োজন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গতবারের চাইতে এবারের মেলার পরিসর আরও বড়। তার জন্য বইমেলায় ঢুকেই দৃষ্টির আরাম পাওয়া যায়। আমাদের চট্টগ্রামের বইমেলায় চট্টগ্রামের সবকটাতো আছেই, ঢাকার বড় বড় প্রকাশকগুলো অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ বইমেলায় আসছে। এ বড় আনন্দের খবর। আমি সিটি করপোরেশনকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাই।’