চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

আমি ষড়যন্ত্রের শিকার : নাছির

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের(চসিক) মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে রাজনীতি করেছি, আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ধারণ করেছি। কিন্তু আজ আমার বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো চাওয়া পাওয়াই নেই উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আমি এবাদত হিসেবে নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করেছি সেখানে মেয়র পদটা আমার জন্য বড় না। রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়। কেউ যদি আমাকে এসে বলতো যে ভাই আমার মেয়রের পদ দরকার আছে, তুমি সরে যাও, আমি তো উইলিংলি ছেড়ে দিব। গতবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেয়র পদে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সুযোগ পেয়েছি, আমি চেষ্টা করেছি।

সিটি মেয়র বলেন, কারও যদি এটার দরকার ছিল তো এত মিথ্যাচারের কোনো প্রয়োজন নেই। এত অপপ্রচার, অপরাজনীতির প্রয়োজন নেই। এগুলো করতে গিয়ে দলই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরেকজন আ জ ম নাছির উদ্দীন তৈরি করা তো অনেক বছরের সাধনার বিষয়। আমি তো দুঃসময়ের পরীক্ষিত একজন কর্মী। আমাদের তো নতুন করে পরীক্ষা দেয়ার কোনো কিছু নাই। ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অপপ্রচারে মনে কষ্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ছবি দেখে কষ্ট পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনদিন আগে তিনি ছবিটি দেখেন। একটা ছবিকে গোল চিহ্ন করেছে। সেটা হলো একরাম খান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি একরাম কুমিল্লার একটি কলেজের অধ্যক্ষ ও কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। তিনি ওখানকার থানা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। ছাত্রলীগের একই কমিটিতে থাকা টিপু নামে এক ব্যাংকারের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া একরাম কোনো এক চরম দুঃসময়ে তাকে ও টিপুকে দেড়-দুমাস আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে যোগাযোগ। তার একটা ব্যবসা উদ্বোধন করার অনুরোধ করলে আমি সেখানে গিয়ে একটা কেক কেটে চলে আসি। ওইসময় পাশে কে দাঁড়িয়েছে না দাঁড়িয়েছে তার জানা নেই উল্লেখ করে বলেন, শাহরিয়ার রশিদ খানের ভাই যাকে বলা হয়েছে তাকে তিনি জীবনেও দেখেননি। তার সাথে দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই।

নিজে একজন রাজনৈতিক কর্মী উল্লেখ করে মেয়র বলেন, স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করি। খেলাধুলার জগতে ছিলাম। পুরোপুরি ওইদিকে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছি। দুঃসময়ে রাজনীতি করেছি। ৭৫ এর পর সর্বপ্রথম আমরা চার-পাঁচজন ছেলে একত্রিত হয়ে মিছিল করেছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে চন্দনপুরা দিয়ে চলে গেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিলো।। ¯্রােতের প্রতিকূলে সেই থেকে পথচলা শুরু। অনেকবার মৃত্যুর মুখে পড়েছি। আমি যে বেঁচে আছি সেটাই মিরাকল। চট্টগ্রামে ফ্রিডম পার্টির সমাবেশ প- করার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সেদিন শফিকুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা বাচ্চু (প্রয়াত), আমিনুল ইসলাম, আইয়ুব, রাশেদ, শফিক আদনান, কলিম, আরো অনেকে। তাদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিকল্পনা করে ‘ব্রাশফায়ার’ করে পুরো মিটিং প- করা হয়। তারপর থেকে এই শহরে যেখানে ফ্রিডম পার্টির সংবাদ পাওয়া গেছে প্রত্যেকটা জায়গায় হামলা করে করে, তাদের কোথাও দাঁড়াতে দিইনি। এই শহরকে শিবিরমুক্ত করার পেছনে প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি অগ্রণী দাবি করে বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন।

তিনি বলেন, রাজনীতিকে এবাদত হিসেবে নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য জীবনের যে ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করেছি সেখানে ছোট্ট একটা মেয়র! মেয়র পদটা আমার জন্য বড় না। রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়। একশতে একশভাগ একটা মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো মানে হতে পারে না।
সততার সাথে স্বচ্ছতার সাথে চসিক পরিচালনা করেছি। চেষ্টা করেছি নগরবাসীকে সেবা দেয়ার জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো প্রকল্প দেয়ায় কাজ করা সম্ভব হয়েছে। পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়ন করাই লক্ষ্য ছিল। নগরবাসীর বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিয়েও বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নে সময় লাগছে।

নিজের অতীত রাজনৈতিক ভূমিকার তুলে ধরে নাছির বলেন, গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদরা বায়তুল মোকাররমে জামাতি ইসলামের সভা করে ফাঁসির প্ল্যাকার্ড বহন করে আমার ফাঁসি দাবি করেছে। অপারেশ ক্লিন হার্টের সময় তাকে হত্যার প্রচেষ্টা সবাই জানেনই। ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে পর্যন্ত আটকে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী করতে শতভাগ কাজ করবেন জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি সবাইকে বলছি তোমরা আমাকে নির্বাচিত করার জন্য যেভাবে কাজ করতে, শতভাগ উজাড় করে দেবে।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজে’র সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজে’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ম. শামশুল ইসলাম, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য কাজী আবুল মনসুর প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট