চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সহযোগিতা পেলে ফলন আরো বাড়বে

হাটহাজারীর পশ্চিমে পাহাড়ি অঞ্চলে নীরব সবজি বিপ্লব

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, হাটহাজারী

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলা সদরের পশ্চিমে ঠা-াছড়ি, জঙ্গল শিলছড়ি দুর্গম পাহাড়গুলো ও পাহাড়ের মোহনার জমিতে বর্তমানে নানাজাতের সবজি উৎপাদনের এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে। হাটহাজারীর পাহাড়ে উৎপাদিত শাকসবজি এখন সারাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করে সবজিখাতে বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে আসছে। পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন ধরনের শাক, বরবটি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পটল, বেগুন, ঢেড়শ, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি বাধাকপি, ধনিয়াপাতা, হলূদ, বেগুন ও শসাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি উৎপাদন হচ্ছে। পাহাড়ে স্থানীয়ভাবে যে হারে সবজি উৎপাদন হচ্ছে এতে সরকারি সহযোগিতা পেলে কৃষকরা সবজি চাষে আরও বেশি লাভবান হতো বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। কৃষি বিভাগ পাহাড়ের সবজি চাষে নজর দিলে ফলন আরো কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একসময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি এনে হাটহাজারীতে বিক্রি করা হতো। এখন অন্য জেলার নির্ভরতা কাটিয়ে হাটহাজারীতে উৎপাদন হওয়াতে সবজির সংকট নেই। কৃষিকাজ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা। বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষের মৌসুমে কৃষকরা ব্যয়ের পরিমাণ হিসাব করে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয় করতে না পেরে তারা ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে আবার চাল বা খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই। ধান চাষের থেকে কৃষকরা বর্তমানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে উৎপাদন মূল্য কম হওয়ায় অনেকেই চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি বর্গা কৃষকরা জমি ছেড়ে মালিকদের জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে। চাষ না হওয়াতে খালি পড়ে থাকছে উপজেলার বিভিন্ন বিলের চাষের জমি। সেচ সুবিধা হতে বঞ্চিত মজুরি বেতন অতিরিক্ত শ্রম বাজারে মানুষের তীব্র সংকট ধান চাষে যেন একেবারে দুরাবস্থা দেখা দিয়েছে। বারবার লোকসানে পড়ে প্রকৃত কৃষকরা এখন ধানি জমির চাষ ছেড়ে উপজেলার পশ্চিমের পাহাড়ে সবজি চাষে জড়িয়ে পড়েছে। বিশাল পরিমাণ জায়গার ওপর কৃষকরা বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে তুলেছে। সবজি চাষে বেশি খরচ হলেও তবে সবজির ফলন বেশি ও লাভবান বেশি হওয়াতে এখন কৃষকরা রাত-দিন পাহাড়ে চাষাবাদ করে যাচ্ছে।

উপজেলা সদরের পশ্চিশে জঙ্গল শিলছড়ি, ঠা-াছড়িসহ পুরো এলাকায় শত শত একর জায়গা জুড়ে চলছে শাক সবজির আবাদ। বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙে, পটল, বেগুন, ঢেড়শ, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, ধনিয়া, হলুদ, বেগুন ও শসাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি উৎপাদন হচ্ছে এই পাহাড়ে।
পাহাড়ের কৃষকরা পরিশ্রম করে যে সবজি উৎপাদন করছে এসব সবজি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। অনেকেই এই এলাকাকে সবজি চাষের নীরব বিপ্লব বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিদিন হাটহাজারীর পশ্চিমে পাহাড়ের ওপর থেকে লাই, খাঁচা, ও বস্তায় ভরাট করে সবজিগুলো বাজারে আনে ভ্যানযোগে। পাহাড়ে উৎপাদিত সবজিগুলো বাজারে এনে বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের কাছে পাইকারি দরে কৃষকরা বিক্রি করে থাকে কৃষকরা।
সম্প্রতি ঠা-াছড়ি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির সারি-সারি ক্ষেত। কৃষকরা আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। লাল শাক, খিরা, টমেটো, ধনিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির শাকসবজির ক্ষেত দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায়। কৃষক দিল মোহাম্মদ বলেন, তিনি এককানি জমিতে ধনিয়ার চাষ করেছেন, একবার তুলে বিক্রি করে বেশ ভাল লাভ হওয়াতে তিনি পুনরায় ধনিয়া লাগিয়েছেন। খিরার ক্ষেতে কাজ করছিলেন কৃষক মোবারক। তিনি বলেন, দুই কানি জমিতে খিরা লাগিয়েছেন। ফলন ভাল হওয়াতে তিনি লাভের আশা করছেন।

সবজির প্রতি ঝুঁকে পড়ায় বর্তমান হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার ধানি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। এই কারণে ধান চাষ মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। ধানের চাষ করতে গিয়ে কৃষকদের বর্তমানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। পাহাড়ের মোহনায় নানা প্রজাতির সবজি উৎপাদন হয়ে নীরব বিপ্লব ঘটলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের এদিকে তেমন দৃষ্টি নেই। কৃষিবিভাগ এদিকে নজর দিলে পাহাড়ের সবজি উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট