চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মাসে ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি

চকবাজার এলাকা হ টমটমে মাসে চাঁদাবাজি ১২ লাখ হ সড়ক-ফুটপাতের দোকানদারদের দৌরাত্ম্যে নতুন ভবনে দোকান চালু করতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চকবাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে কারাবন্দি নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারীরা। অভিযোগ উঠেছে টিনুর অনুসারী ছাড়াও এ চাঁদার ভাগ যাচ্ছে থানা পুলিশের কাছেও। চকবাজার কেবি আমান আলী রোডের ধুনির পুল থেকে ফুলতলা বাজার ফুটপাতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভাসমান হকারদের সিটি কর্পোরেশন বার বার উচ্ছেদ করলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি দিনের বেলায় অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ করলেও রাত পোহাতেই পুরো এলাকা ফের দখলে চলে যায় অবৈধ সবজি ব্যবসায়ীদের হাতে। তা ছাড়া অবৈধ টমটমের দৌরাত্ম্য রয়েছেই। এতে সড়কটিতে দিনভর লেগে থাকা যানজটে সাধারণ লোকজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বছরের পর বছর।

অথচ ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্মাণ করেছে চকবাজার কাঁচাবাজার ভবন। চকবাজার এলাকায় সড়ক ও ফুটপাতে গড়ে উঠা অবৈধ দোকানদারদের দৌরাত্ম্যে নতুন ভবনটিতে দোকান চালু করতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা। ভবনটিতে ১৮০ জন ব্যবসায়ীর বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামশুদ্দোহা জানান, অবৈধভাবে সেখানে কাউকে বসতে দেয়া হবে না। কয়দিন আগে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। প্রয়োজনে আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
ফুটপাতে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি : বার বার উচ্ছেদ করার পরও কে বি আমান আলী রোডে অবৈধ সবজি ব্যবসায়ীদের স্থায়ীভাবে কেন উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় মাসে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির তথ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সবজি ব্যবসায়ী জানান, দৈনিক চাঁদা দেয়ার বিনিময়ে তারা কে বি আমান আলী রোডের ধুনিরপুল থেকে ফুলতলা পর্যন্ত সড়কের একপাশ অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করছেন। মাঝে মাঝে সিটি কর্পোরেশন উচ্ছেদ করলেও চাঁদা আদায়কারীদের সহায়তায় ফের ব্যবসা শুরু করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর অস্ত্র ও গুলিসহ নুর মোস্তফা টিনু গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি থাকলেও বন্ধ হয়নি তার চাঁদাবাজি। কারাগারে বসেই দিব্যি চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। চাঁদাবাজির খাতগুলো হলো চকবাজার কাঁচা বাজার, চকবাজার কেন্দ্রিক পোশাক কারখানার জুট ব্যবসা, কোচিং সেন্টার, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, টমটম ও নির্মাণাধীন ভবন।

গতকাল রবিবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২২ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন তাদের উচ্ছেদ করলেও চাঁদা আদায়কারীদের সহায়তায় তারা যথারীতি ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছেন। সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, দৈনিক যারা চাঁদা নিচ্ছেন তারা সবাই কারাবন্দি নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী। শতাধিক অনুসারী থাকলেও চাঁদাবাজির পুরো গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন এম এ বক্কর, এস এম সামাদ, অভিক দাশ গুপ্ত, বিপ্লব দে, নুরুন্নবী, সোহেল ও রাসেল। এরমধ্যে নুরুন্নবী গার্মেন্টসের জুট ব্যবসা, নাহিদুল ইসলাম জাবেদ ও বিপ্লব ফুটপাতে ভাসমান সবজির দোকান, অভিক দাশ গুপ্ত কোচিং সেন্টার, বেসরকারি স্কুল-কলেজ থেকে টিনুর পক্ষে চাঁদা তোলার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে কেউ রাজি নন।

ভাসমান ব্যবসায়ীরা জানান, ধুনিরপুল থেকে ফুলতলা বাজার, সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ লেন, হাসমত উল্লাহ মুন্সেফ লেন, মৌলানা মোহাম্মদ আলি শাহ বাইলেইনে শতাধিক অবৈধ সবজি দোকানদার রয়েছে। যারা দৈনিক চাঁদার ভিত্তিতে ব্যবসা করছেন বছরের পর বছর। সেখানে ফুটপাতের প্রতিটি সবজি দোকান থেকে দৈনিক ২০০ টাকা হিসাবে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা করে মাসে ৬ লাখ, প্রতি দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুতের একটি বাল্ব ৪০ টাকা হিসাবে দৈনিক ৪০০০ টাকা করে মাসে এক লাখ ২০ হাজার, প্রতি দোকান থেকে চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির নামে ২০, থানার নামে ৫০ ও টহল পুলিশের নামে ১০ টাকা হিসাবে প্রতিদিন ৮ হাজার টাকা হিসাবে মাসে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা তোলা হয়। ফুটপাতে ভাসমান হকারের কাছ থেকেই সব মিলিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করেন টিনুর অনুসারীরা।

জানতে চাইলে চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম জানান, অবৈধ হকারদের কয়দিন আগেই উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তারা আবার সড়কের পাশ দখল করে বসেছে। তবে সেখানে কারা চাঁদাবাজি করে তা আমার জানা নেই। চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাকে কেউ কখনো বলেনি। বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখবো।

টমটমে মাসে চাঁদাবাজি ১২ লাখ : স্থানীয় লোকজন জানান, চাঁদাবাজি ফুটপাতে সীমাবদ্ধ তা নয়। রাহাত্তারপুল থেকে চকবাজার ধুনিরপুল পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ অবৈধ টমটম চলাচল করছে। প্রতিটি টমটম থেকে চাঁদা নেয়া হয় ২০০ টাকা। চকবাজার, ধুনিরপুল ও ফুলতলা সড়কের আশপাশের এলাকা যেন অঘোষিত টমচটম স্ট্যান্ড। সকাল আটটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অবৈধ টমটম গুলো চলাচল করছে। টমটমে নিয়মিত চাঁদা তোলেন টিনুর অনুসারী অভিক দাশ গুপ্ত, এস এম মুনির, ও জাহেদুল ইসলাম। চাঁদা তোলার জন্য রুবেল নামের একজন লাইনম্যানও রেখেছেন। রুবেলের দৈনিক বেতন ৫’শ টাকা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট