চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ভর্তি ফি আদায়ে লাগাম নেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কোনো ভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তি ফি’র। ভর্তি নীতিমালা উপেক্ষা করে বেসরকারি স্কুলগুলো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছে মত ফি আদায় করছে। কোন কোন স্কুলে এই টাকার পরিমাণ ভর্তি নীতিমালার কয়েকগুণের বেশি। তবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা নিলেও বিবিধ খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। অভিভাবকদের অভিযোগ জেলা প্রশাসন ও শিক্ষাবোর্ডের কোন তদারকি না থাকায় বেসরকারি স্কুলগুলো ভর্তি ফি আদায়ে লাগামহীন হয়ে পড়েছে। তবে কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবক অভিযোগ না করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান সিদ্দিক। এ বছর নগরীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায়, জামাল খান এলাকায় এ জি চার্চ স্কুলে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি ৩ হাজার ৪০০ টাকা, অরবিট ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে মোট নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা, শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউটে নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৩২৫ টাকা এবং শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির জন্য ২০০ টাকা, খাজা আজমেরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৮৭০ টাকা। এছাড়া, নীতিমালায় এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে পুনঃভর্তির ফি

নেয়া যাবে না বলা হলেও পুনঃভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে। অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ও স্কুল ড্রেস নিজ নিজ স্কুল থেকে নেয়ার জন্য বাধ্য করা হয়।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন জানান, প্রতি বছর নগরীর বিভিন্ন স্কুলে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করা হয়। এ বছরও অনেকগুলো স্কুলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভর্তি ফি নেয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এরমধ্যে বেপজা স্কুল এন্ড কলেজে ১০ হাজার ৯৪৫ টাকা, উত্তর পতেঙ্গার টিএসপি এমপ্লেক্স ম্যাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৬০০ টাকা, ইয়াং ওমেন’স ক্রিস্টিয়ান এসোসিয়েশন (ওয়াইডাব্লিউসিএ) ৬ হাজার ৭৫০ টাকা এবং হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ৫ হাজার ৬৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন, শিক্ষা অফিস, শিক্ষা বোর্ড ও ক্যাব মিলে ৫টি টিম গঠন করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করি। অতিরিক্ত অর্থ নেয়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের চাপে অতিরিক্ত ফি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া, সে সময় অতিরিক্ত ফি নেয়ার দায়ে ৫টি স্কুলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বর্তমানে শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সেভাবে ভূমিকা রাখছে না। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিন দিন ব্যবসায় মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

এ সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান ছিদ্দিক বলেন, অতিরিক্ত ফি নেয়ার ব্যাপারে আমরা কোন তথ্য পাইনি। এছাড়া কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবক ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। আর যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায়ের তথ্য পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ভর্তি কি নিয়েছে তাদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। যেহেতু নীতিমালা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষা নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিও বাতিলের সুপারিশ করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বেসরকারি স্কুল/স্কুল এন্ড কলেজ মাধ্যমিক, নি¤œ মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা এবং ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন চার্জ নেয়া গেলেও পুনঃভর্তির ফি নেয়া যাবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট