চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ও সাহায্য করা সওয়াবের কাজ

অনলাইন ডেস্ক

২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১১:২২ অপরাহ্ণ

মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ঋতুর পালাবদল ঘটে। ঋতুর পালাবদলে অনেক সময় মানুষের অসহায়ত্ব ও সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এখন সারা দেশে শীত জেঁকে বসেছে। হাড় কাঁপানো তীব্র শীতের বাতাসে জবুথবু দেশ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া দায়। কোনো কোনো এলাকায় সূর্যের দেখাও মিলছে না। শীত দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য হতদরিদ্র মানুষের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র নেই। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করে। অনেক ছিন্নমূল মানুষ পথেঘাটে ও ফুটপাতে ছেঁড়া কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। মাথা গোঁজার একটুখানি ঠাঁই নেই তাদের। তথ্যসূত্র : দেশ রূপান্তর।

দুর্যোগ-দুর্বিপাক মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়। তাই শীত, ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যাসহ প্রাকৃতিক সব ধরনের বিপর্যয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের আবশ্যিক কর্তব্য। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করা খুবই জরুরি।

আর্তমানবতার সেবায় ইসলামের ভূমিকা সর্বাগ্রে। ইসলাম এক্ষেত্রে জোর তাগিদ ও উৎসাহ দিয়েছে। বিপদগ্রস্তর সাহায্য ও অসহায়ের সহযোগিতা করা ইসলামের মহৎ ও মৌলিক শিক্ষা। মানবতাবোধ, সহমর্মিতা, স্বার্থহীন পরোপকার ও সহানুভূতি ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানবজাতির পথপ্রদর্শক প্রিয়নবী (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির করুণাস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামের বিধান। টাকা-পয়সা, খাদ্য-বস্ত্র, পানীয় ও ওষুধ– নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার সময় এখনই। কারণ তাদের কাছে একেকটি দিন যেন এখন ‘দুর্বিষহ কষ্টের সময়’।

‘দীনে করো দান’ সওয়াব মিলবে অফুরান

শীতার্ত ও অসহায়দের সেবায় প্রতিটি সামর্থ্যবান ব্যক্তির এগিয়ে আসা উচিত। তুলনামূলক বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা সর্বোচ্চ প্রতিদান দেবেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ। প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)

অসহায়দের সাহায্যে বিপুল সওয়াব

দারিদ্র্যক্লিষ্ট বনি আদম ও অসহায় নারীদের সাহায্য করতে প্রিয়নবী (সা.) অনেক বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবং সে ওই নামাজ আদায়কারীর মতো যার ক্লান্তি নেই এবং ওই রোজা পালনকারীর মতো, যার রোজায় বিরাম নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০০৭)

অসহায়কে সাহায্যের বিনিময় দেবেন আল্লাহ

শীতার্ত, অসহায়, পীড়িত, ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত ও বিপদাক্রান্ত মানুষকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ উভয় জগতে প্রতিদান দেবেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মুমিন কোনো মুমিনের ক্ষুধা নিবারণ করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনের তৃষ্ণা দূর করেছে, আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন মোহরাঙ্কৃত জান্নাতি সুধা থেকে পান করাবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের উন্নতমানের সবুজ কাপড় পরাবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮৬)

মানবসেবায় ইসলামের উৎসাহ-তাগিদ

মানবসেবা, দুস্থদের সাহায্য ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ইসলামের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব। আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আমি আপনার শুশ্রষা করব? তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার শুশ্রষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আপনাকে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানো না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে আজ তা পেতে? হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক, কীভাবে আপনাকে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয়ই আজ তা পেতে।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৭২১)

তাই আসুন, এই নিদারুণ শীতে মানুষের সাহায্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করি। ইসলামের নির্দেশনা মেনে মানুষের সাহায্যে তার পাশে দাঁড়াই। যথাসাধ্য সহায়তা-সহযোগিতা করে তাদের কষ্ট লাঘব করি। বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে প্রতিদান দেবেন।

 

পূর্বকোণ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট