চট্টগ্রাম শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে চার চাকার ম্যাজিকের দাপট মহাসড়কে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চার চাকার মিনি পিকআপ। যাত্রীবহনকারী এ যানবাহন কারো কাছে চার চাকার ম্যাজিক আবার লেগুনা হিসাবে পরিচিত। চট্টগ্রাম কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কে লেগুনার দাপটে অসহায় দূরপাল্লার বাস চালকরা। ২০২০ সালের ২১ মার্চ রাতে লোহাগাড়ার চুনতি ফরেস্ট অফিস এলাকায় চার চাকার ম্যাজিক (লেগুনা) ও ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনায় থাকা ১৫ জন যাত্রী নিহত হয়। ওই লেগুনার ছিল না রেজিস্ট্রেশন নম্বর কিংবা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স।

 

অভিযোগ রয়েছে মাসোহারা দিয়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করছে লেগুনা। তবে  মাসোহারা না পেলে মাঝে মাঝে এসব যানবাহন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দেয় হাইওয়ে পুলিশ কিংবা ট্রাফিক সার্জেন্ট। সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে চন্দনাইশের রৌশনহাট এবং লোহাগাড়া রুটে প্রায় সাড়ে ৩শ লেগুনা চলাচল করে। অধিকাংশ লেগুনার নেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অথচ এসব গাড়ি দাপিয়ে চলছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে।

 

বাসচালক মোহাম্মদ ইসহাক জানান, ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে গাড়ি চালাচ্ছি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার সড়কে লেগুনা এবং সিএনজি ট্যাক্সির সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। এসব ছোট যানবাহনের কারণে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শাহ আমানত সেতুর মইজ্জ্যারটেক থেকে লোহাগাড়ার সীমান্তবর্তী চকরিযা পর্যন্ত শত শত সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করে সড়কে। চন্দনাইশের রৌশনহাট থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত সিএনজি ট্যাক্সির পাশপাশি কয়েকশ লেগুনা চলাচল করে। অথচ এসব ছোট যানবাহন মহাসড়কের চলাচল করার কথা নয়।

 

প্রতিদিন শত শত ট্যাক্সি চলাচল করলেও পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) স্নেহাংসু বিকাশ সরকার জানান, মহাসড়ক কিংবা আঞ্চলিক মহাসড়কে সিএনজি চলাচলের নিয়ম নেই। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে ফিডার রোড থেকে মাঝে মাঝে কিছু সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করে। ট্যাক্সিগুলোতে মামলা দেয়া হয় মাঝে মাঝে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কের চন্দনাইশের রৌশনহাট-সাতকানিয়া- লোহাগাড়া রুটে তিন শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকরা এসব লেগুনা চালাচ্ছে। মহাসড়কের যানবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার দায়িত্বে হাইওয়ে এবং ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে থাকলে তা মাসোহারা নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন লেগুনা চালকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, লেগুনার কাগজপত্র থাক বা না থাক গাড়ি চালাতে হলে লাইন খরচের নামে মাসে ৩ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতেই হবে। মাসে প্রতি গাড়ি ৩ হাজার টাকা হিসাবে ৩শ লেগুনা থেকে মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ এবং যারা লাইন পরিচালনা করেন তারা এসব টাকা ভাগভাটোয়ারা করেন। সবচেয়ে বেশি মাসোহারা দিতে হয় দোহাজারী হাইওয়ে  থানার যার পরিমাণ লাখ টাকারও বেশি।

 

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের ওসি খান মোহাম্মদ এরফান জানান, অবৈধ লেগুনা চালকের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দিয়ে থাকি। প্রতিমাসে চাঁদা নেয়ার বিয়ষটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

 

কেরানীহাট থেকে চন্দনাইশ ও লোহাগাড়াগামী লেগুনা মাসিক চাঁদা তোলার দেখভাল করেন জাহাঙ্গীর ও লোহাগাড়া থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চলাচলকারী লেগুনা দেখভাল করেন যুবলীগ নামধারী লোহাগাড়ার জনৈক ছরওয়ার। মহাসড়কের এ রুটে  প্রায় তিন শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। জাহাঙ্গীরের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে লেগুনার লাইন পরিচালনা করছেন জানে আলম। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জানে আলম জানান, ৩শ নয়। গাড়ি আরেকটু কম হবে। প্রতি গাড়ি থেকে ৩ হাজার নয় মাসে আড়াই হাজার টাকা লাইন খরচ নেয়ার কথা স্বীকার করে জানে আলম জানান,  লাইনম্যান, স্থানীয় কিছু নেতাসহ আনুসাঙ্গিক খাতে এসব টাকা খরচ হয়।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট