চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বুড়িঘাটে ৮ স্পিডবোট ও দুই লঞ্চের বিরুদ্ধে একাই লড়ে শহীদ হন মুন্সি আবদুর রউফ

পূর্বকোণ প্রতিনিধি, রাঙামাটি অফিস

১৯ মার্চ, ২০২৩ | ৪:৫৩ অপরাহ্ণ

রাঙামাটির বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল চৌধুরীর জন্ম কাপ্তাই বাঁধ সৃষ্টির পূর্বে বর্তমান হ্রদের নিচে পুরাতন রাঙামাটির খচ্চর ঘাটা এলাকায়। তাঁর বর্তমান বয়স ৬৯ বছর। পিতা শশী কুমার বন বিভাগে চাকরি করতেন। পরিমল চৌধুরীদের স্থায়ী ঠিকানা বর্তমান রাঙামাটি (নিউ রাঙামাটি) শহরের মাঝিবস্তি এলাকায়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এইচ টি ইমাম ও এসপি ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম গ্রুপে ৩৩ জনের সাথে তিনি ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ মহালছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি পৌঁছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সংগঠক দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুরী স্থানীয় হাইস্কুলে খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে তিন জন পালিয়ে যান। স্কুল মাঠে লাইনে দাঁড় করিয়ে একে একে সকলের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সেখানে জনৈক নুরুল ইসলাম নামে একজনকে বাদ দেওয়া হয়।
পরে ২৯ জন নিয়ে রাতে চাঁদের গাড়ি (জিপ গাড়ি) করে আমাদেরকে রামগড় ইপিআর ক্যাম্পের ভিতর দিয়ে খাল পার করে বিএসএফ ক্যাম্পে নেয়া হয়। সেখান থেকে দুইটি ট্রাকে করে বগাপা বিএসএফ ৯২ ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে বিএসএফ সুবেদার ডিসি দাস পূর্বেই তাবু টাঙান আমাদের জন্য। পরদিন থেকে আমাদের ট্রেনিং দেন বিএসএফ হাবিলদার মেজর পি এন পান্ডে, দুলাল পোকান ও নির্মল সেন। এক সপ্তাহ ট্রেনিংশেষে আমাদেরকে সাব্রæম বর্ডারে নিয়ে আসা হয়।
এখানে ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের চৌধুরী আমাদের সীমান্ত পার করে রামগড় হাইস্কুলে নিয়ে আসেন। এটি ছিল মুক্তি বাহিনীর একটি বড় ক্যাম্প। এর ৬/৭ দিন পর আমাদের রাঙামাটি যাওয়ার হুকুম হয়। এরপর মহালছড়ি হয়ে দুইটি নৌকায় আমরা রাঙামাটির উদ্যেশ্যে রওনা দিই। রাঙামাটি আসার পথে আমাদের নৌকাটি ছিল পিছনে, অপর নৌকাটি আগে। ডিসি বাংলো পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করা পাক হানাদার বাহিনীর ব্রাসফায়ারে ১৫ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। পরে আমাদের নৌকাটি জালিয়াপাড়া থেকে পিছনে ফিরে যায়। এরপর ২০ এপ্রিল বুড়িঘাটে সহকর্মীদের রক্ষার জন্য পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এসময় পাক বাহিনীর আটটি স্পিড বোট ও দুই লঞ্চ রেঞ্জের মধ্যে আসলে মুন্সি আবদুর রউফ ফায়ার শুরু করে ডুবিয়ে দেয়। পরে পাক হানাদার বাহিনীর মটার শেলের আঘাতে মুন্সি আবদুর রউফ শহীদ হন। এরপর আমরা আবার মহালছড়ির দিকে যাওয়ার সময় শিঙিনালা থেকে পাকিস্থানের পক্ষে ভারতের বিচ্ছন্নতাবাদী মিজো সৈন্যরা আমাদের উপর হামলা করে। এতে ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর আমরা দ্বিতীয়বার পানছড়ি-তবলছড়ি বর্ডার দিয়ে ভারতের শীলছড়িতে (ত্রিপুরা) পৌঁছি। সেখানে কাঠালিয়াছড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে আবারো ট্রেনিং গ্রহণ করি। আমরা বাংলাদেশে চলে আসি। ডিসেম্বরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর তিব্বতীয় সৈন্যরা চলে আসে। এরপর দেশ স্বাধীন হয়। আমরা পরে চট্টগ্রাম কলেজ সেন্টারে গিয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে রাঙামাটি ফিরে আসি।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট