চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেগে উঠা চরে আশার আলো

সন্দ্বীপ সংবাদদাতা

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:১০ অপরাহ্ণ

তিন পাশে নদী ও দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। সন্দ্বীপের চারপাশে বিপুল পরিমাণ নতুন চর জেগে উঠেছে। এসব চরকে ঘিরে রয়েছে গবাদিপশু পালনের অপার সম্ভাবনা। সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে এসব চরের আংশিক ভূমি চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে কেমিক্যাল ও কৃত্রিম খাদ্য মুক্ত অর্গানিক মাংস রপ্তানির অন্যতম অঞ্চল।

 

প্রায় অর্ধশত বছর পূর্বে ৬০ মৌজার সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি, আমিরাবাদ, বাটাজোড়া, ইজ্জতপুর, শ্রীরামপুর, চরবদু, কাজীর খিল, চরলক্ষ্মী, দীর্ঘাপাড় ও রুহিনী ইউনিয়ন মেঘনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের দিকে বিভিন্ন এলাকায় নতুন চর জাগতে শুরু করে। ২০০৫ সালের পরে সবুজ চর, ঠোঙ্গার চর (বর্তমান নোয়াখালীর ভাসানচর) জেগে উঠে। গত এক দশকে নদী ভাঙন বন্ধ হয়ে কালাপানিয়া, পৌরসভা, বাউরিয়া, রহমতপুর, আজিমপুর, মুছাপুর, মাইটভাঙ্গা, সারিকাইত ও মগধরায় নতুন চর জেগে উঠেছে। দু-তিন বছর ধরে মগধরা ও সারিকাইত ইউনিয়নের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দশ কিলোমিটার ডুবোচর দেখা দিয়েছে। এখন প্রতিদিন এই চরের পরিধি ক্রমাগত বাড়ছে।

 

জেগে উঠা স্থায়ী চরের বিশাল অংশ বিভিন্ন জটিলতায় নোয়াখালীর আওতায় পড়েছে। সাবেক ন্যায়ামস্তি ইউনিয়ন বর্তমানে ভাসানচর নামে পরিচিত। সেখানে এক লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। জাহাইজ্জা চর (স্বর্ণদ্বীপ) ও সবুজ চরে একসাথে জেগে উঠেছে প্রায় ৪ হাজার একর ভূমি। এরমধ্যে জাহাইজ্জার চরের ১২টি মৌজায় প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমি সন্দ্বীপের অংশে পড়েছে। দীর্ঘাপাড়, সন্তোষপুর ও আমানউল্লা ইউনিয়নে সবুজ চরে রয়েছে প্রায় ২শ একর ভূমি। বাকি ৩শ একর কালাপানিয়া, পৌরসভা, রহমতপুর, আজিমপুরসহ কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। এছাড়াও সারিকাইত, মাইটভাঙ্গা, মগধরাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নদীর কূলে প্রতিদিন ডুবোচর জাগছে।

 

জেগে উঠা নতুন চর গবাদিপশুর চারণভূমির কাজে ব্যবহার হয়। নতুন চরে সবুজ মিষ্টি ঘাসকে কেন্দ্র করে বাড়ছে গরু, মহিষ ও ভেড়া পালন। প্রথমে এসব চর নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা গেলেও নানা প্রতিবন্ধকতা এখন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে চর দখল ও বিশুদ্ধ পানির অভাব অন্যতম। ভূমি ভাঙনের আগে এখানে যাদের বাড়িঘর ছিল তারা চর জাগার পর সেখানে দখল নিতে ঘেরা দেওয়া শুরু করেছে। এছাড়া প্রভাবশালীরা নতুন চরের উপরের মাটি কেটে অনায়াসে বিক্রি করে চারণভূমি নষ্ট করছে। বিস্তীর্ণ চরে গবাদিপশুর সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। জোয়ারের সাথে আসা লবণাক্ত পানি গবাদিপশুর পান করার একমাত্র উৎস। অনেক সময় এসব লবণাক্ত পানি পান করে গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও চরের গবাদিপশু পালনের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাবে সন্দ্বীপে প্রায় ৫৮ হাজার গরু, ৭ হাজার মহিষ, ১২ হাজার ভেড়া ও ১০ হাজার ছাগল পালন করা হচ্ছে। এগুলোর শতকরা ৪০ ভাগ গরু ও ২০ ভাগ অন্যান্য গবাদিপশু লোকালয়ে পালন করা হয়। বাকি গবাদিপশুর পালন নতুন চরের চারণভূমির উপর নির্ভরশীল। সন্দ্বীপে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লিটার গরুর, ১৩হাজার লিটার মহিষের এবং ৩হাজার লিটার ছাগলের দুধ উৎপাদন হয়। দ্বীপের প্রায় ৩২হাজার পরিবার গবাদিপশু পালনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।

 

প্রায় চারশ’ মহিষের মালিক উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, পশুখাদ্যের যে পরিমাণ দাম তা কিনে পোষানো সম্ভব নয়। গরু-মহিষ পালন করতে আমরা চরের ঘাসের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে আমরা চরে গরু-মহিষ পালন করতে হিমশিম খেতে হয়। সরকার বন্যার সময় গরু-মহিষের আশ্রয়ের জন্য মুজিব কিল্লা করে দিয়েছে। যদি পুকুর কেটে পানির ব্যবস্থা করে দেয় তা হলে গরু-মহিষের পালন আরো কয়েক গুণ বাড়বে।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী আজম বলেন, ‘সন্দ্বীপে গবাদিপশু পালনের অপার সম্ভবনা রয়েছে। সরকারিভাবে নতুন চরের বভিন্ন অংশে কিছু ভূমি গবাদি পশুর চারণভূমির জন্য উন্মুক্ত করে সেখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সন্দ্বীপ থেকে দেশে ও দেশের বাহিরে অর্গানিক মাংস রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট