চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজার সওয়াব আল্লাহ কুদরতের হাতে দেবেন

২১ এপ্রিল, ২০২২ | ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

আররি ১২টি মাসের মধ্যে রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসের নাম আল্লাহপাক কোরআনে উল্লেখ করেননি। শুধুমাত্র রমজান মাসের নাম উল্লেখ করায় বোঝা যায়, এটি অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ মাস। এটি কোরআনুল করিমের মাস। এই মাসের লাইলাতুল কদরের রাতে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েতের জন্য কোরআন নাজিল করেছেন আল্লাহ।

নবীজি বলেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ। যুদ্ধের ময়দানে ঢাল যেমন নিজেকে রক্ষা করে, তেমনি সঠিকভাবে রোজা রাখলে শয়তান, নফসের ধোকা থেকে নিজেকে হেফাজত করবে’।

দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে রোজা ফরজ করা হয়। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘রোজা আমার জন্য, এর প্রতিদান আমিই দিবো।’ সুবহানাল্লাহ। বান্দার সমস্ত আমলের সওয়াব আল্লাহ প্রদান করেন ফেরেশতাদের মাধ্যমে। অর্থাৎ অন্যান্য ইবাদতের সওয়াব ফেরেশতারা দেন। রোজার সওয়াব আল্লাহ নিজেই দেবেন। কারণ ফেরেশতাদের খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস নেই। তাই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করলে মানুষের কি কষ্ট তা ফেরেশতারা মূল্যায়ন করতে পারেন না। তাই আল্লাহ রোজার সওয়াব নিজের জিম্মায় নিয়েছেন। কেয়ামতের দিন আল্লাহপাক কুদরতের হাতে বান্দাদের রোজার সওয়াব দেবেন। তবে ফেরেশতাদের শুধু গণনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। ফেরেশতারা রোজার আমলনামার তালিকা আল্লাহপাকের নিকট পেশ করবেন।

রোজা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো’। এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে তাকওয়া অর্জনের জন্য। গুনাহ বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের উপযোগী হওয়া, নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়
আমরা খলিফা ওমর (রা.) এর সময়ের একটি ঘটনা থেকে ধারণা নিতে পারি। ওই সময় এক গোয়ালা পরিবার দুধ বিক্রি করে জীবণ-যাপন করতেন। মেয়ে একদিন দুধ কম পাওয়ার কথা জানালো মাকে। মা তা শুনে মেয়েকে বললেন, পানি মিশিয়ে দিতে। মেয়ে পাল্টা মাকে বললেন, এটা জানতে পারলে খলিফা ওমর (রা.) কঠিন শাস্তি দেবেন।

মা বললেন, ওমর (রা.) জানবেন কিভাবে? কন্যা তখন বললেন, খলিফা ওমর (রা.) না দেখুক, আল্লাহপাক-তো সবকিছু দেখছেন। কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হলে তখন কি জবাব দেব।

বাস্তবে মা মেয়েকে পরীক্ষা করছিলেন, মন্দ কাজে উৎসাহিত করছিলেন না। সবকিছু তাদের ঘরের বাইরে থেকে শুনছিলেন খলিফা ওমর (রা.)। পরে তিনি গোয়ালিনীর কন্যাকে পুত্রবধূ করলেন। ওই কন্যার মাঝে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি থাকার কারণে মন্দ কাজ করতে পারেননি। আল্লাহপাক তাঁর তাকওয়া পছন্দ করেছেন।

হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’। এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্যরাও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে। কিন্তু রোজাদার ব্যতীত অন্য কাউকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
কোরাআনের মর্যাদা সমস্ত নবী-রাসূলদের উপরে। কারণ কোরআন সৃষ্টির অর্ন্তভুক্ত নয়। নবী-রাসূল সৃষ্টির অর্ন্তভুক্ত। আল্লাহর সিফাতের মর্যাদা কোরআন। এই কোরআন রমজান মাসে কদর রজনীতে আলাহপাক আমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছেন।

কোরআনের কারণে ওই রজনীকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। এটি প্রাধান্যমতে রমজানের ২৭ তারিখ। যদিও সেটা অকাট্য নয়। অকাট্য হল রমজানের শেষ দশকে অবশ্যই লাইলাতুল কদর রয়েছে।

কোরআনের কারণে কদরের মর্যাদা। কোরআনের কারণে রমজানের মর্যাদা। এই রমজান আল্লাহপাক মানুষের গুণাহ মাফের জন্য পাঠিয়েছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, দৈনিক কাফ্ফারার জন্য আল্লাহ নামাজ দিয়েছেন, এক ওয়াক্ত নামাজ পড়লে অপর ওয়াক্ত পর্যন্ত সকল পাপের মার্জনা হয়। আপনি জোহরের নামাজ পড়লে ফজর থেকে জোহর পর্যন্ত সকল পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়।

দৈনিক পাপের কাফ্ফারার জন্য আল্লাহ নামাজ ফরজ করলেন। সাপ্তাহিক কাফ্ফারার জন্য আল্লাহ আমাদের জুমার নামাজ দিয়েছেন। বাৎসরিক কাফ্ফারার জন্য আল্লাহ দিয়েছেন রমজান। এক রমজান থেকে অপর রমজান পর্যন্ত রোজা রাখলে আগের গুণাহ মাফ হয়ে যায়।

আবার সারাজীবনের কাফ্ফারারা জন্য হজ্ব প্রদান করেছেন। সারাজীবনে সামর্থ্যবানদের জন্য একবার হজ্ব ফরজ। মুহাম্মদ (সা.) জীবনে একবার হজ করেছেন এবং তিনবার ওমরাহ করেছিলেন। সেই কারণে রাসূল (সা.) রমজানের ওমরাহকে অনেক মর্যাদা দিয়েছেন।

তাই রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানে ওমরাহ করা আমার সাথে হজ করার সমান। রাসূলের সাথে হজ করলে যে সওয়াব পাওয়া যায় রমজানের ওমরায় সেই সওয়াব পাওয়া যায়। সেই কারণে সবচেয়ে বেশি মুসলিম রমজান মাসে ওমরাহ পালন করেন। এর কারণ হলো- রাসূলের সেই মর্যাদা অর্জন করার জন্য ।

তাই আল্লাহর প্রিয় হাবিব বলেন, একটি রমজানের রোজা রাখার পর পরবর্তী রমজান যখন আসলো আগের সব পাপের কাফফরা হয়ে যায়। ‘আল্লাহতায়ালা রমজান মাসে কোরআন নাযিল করলেন, রয়েছে সেখানে হেদায়েত মানুষের জন্য স্পষ্ট দলিল’।

আল্লাহপাক বলেছেন, সুতরাং যারা রমজান মাস পাবে সে বাধ্যতমূলকভাবে রোজা রাখবে। উযর (কারণ) থাকলে রোজা ছেড়ে দিয়ে পরবর্তীতে কাযা করা জায়েজ। কিন্তু উযরবিহীন রমজানের রোজা ছাড়া যাবে না। কোন মানুষ অসুস্থ হলে কিংবা সফরের মধ্যে থাকলে, রোজা রাখা সম্ভব না হলে তবে রোজা ছেড়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কাযা করে নেবেন। ঠিক মহিলারা গর্ভ ধারনের কারণে কিংবা সন্তানকে দুগ্ধপানে সমস্যা তৈরি হলে রোজা ছাড়তে পারবেন। ফলে বছরের যে কোন সময় কাযা আদায় করে নেবেন।

সব মিলিয়ে বলা যায়, রোজা শিক্ষা দেয় খাদ্যের জন্য যারা প্রতিদিন যুদ্ধ করে তাদের জীবন আসলে কতটা কঠিন। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে রোজা রাখা এবং নেক আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : ব্যুরো চিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম।

পূর্বকোণ/মামুন/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট