রায়হান আজাদ

পবিত্র রমজান মাসে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতাবস্থা নেই। দ্রব্যমূল্যের ক্রমশ ঊর্ধ্বগতি নিম্ন আয়ের মানুষদের অস্থির করে তোলেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর খাদ্য সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। আকাশ ছোঁয়া দামে রোজাদারের সিয়াম সাধনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে ক্ষুদ্র পুঁজির সাধারণ ব্যবসায়ীরাও বেকায়দায় রয়েছেন। পাইকারের গুদামজাতকরণ-দুর্নীতি-চাঁদাবাজির জন্য বড় দায়ী। এমতাবস্থায় মাহে রমজানে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার কথা ছিল সেক্ষেত্রে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম। দেশের সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণ সবাই মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত মুনাফা আয়ের যে অশুভ তৎপরতা চলমান তা যেমনি হতবাক করার মতো তেমনি চরম নৈতিক অধঃপতনের পরিচায়কও বটে।

আরবদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ভাইয়ের রোজা পালনের সুবিধার্থে পণ্য মূল্য স্বাভাবিক রাখা এবং সহজ উপায়ে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা সকল মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব ছিল।
শেষ নবী (দ.) বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মজুদদারী,দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, প্রতারণা, ভেজাল দেয়া ও অন্যায়ভাবে মূল্য নির্ধারণ কঠোরভাবে হারাম।

দেখা যায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী ওজনে কম দেয়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, “দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষদের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পুরোপুরি আদায় করে। আবার নিজেরা যখন অন্যের জন্য ওজন কিংবা পরিমাপ করে তখন কম দেয়। ” (সুরা আল মোতাফ্ফেফীন: ০১-০৩) “ন্যায়ের সাথে ওজন কর, দাঁড়িপাল্লাকে উঁচু নিচু করো না। ”(সুরা আর রহমান-০৯)। উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কোন ব্যক্তিকে ইসলামী শরীয়তে পণ্যে সব ধরনের ভেজাল দেয়া নিষিদ্ধ। হোটেলে বাসি ও পঁচা খাবার পরিবেশন দণ্ডনীয় অপরাধ। খোলাফায়ে রাশেদার আমলে এধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির প্রচলন ছিল। কুরআনে কারীমে এসেছে,“ মানুষকে খারাপ বা ত্রুটিযুক্ত জিনিস দিও না, দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। ”( সুরা শুয়ারা-১৮৩)

আশা করছি, রোজার মৌলিক শিক্ষা সংযম ও খোদাভীতি অর্জন করত আমাদের ব্যবসায়ীসমাজ গ্রাহকদের কোনভাবেই ঠকাবেন না, তারা নৈতিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত হবেন। দ্রব্য মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে রোজাদারদের প্রতি সহানুভূতিশীলতা দেখাবেন, ইনশাল্লাহ। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দান করুন। আমীন।

পূর্বকোণ/এস