চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বর্ষার আগেই উন্মুক্ত নালাখালে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিন, নগরবাসীকে বাঁচান

২৯ মার্চ, ২০২২ | ৮:১৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। মশার যন্ত্রণা, ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণ, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, চাঁদাবাজি, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যানজট, ধুলোবালি, ভাঙা গর্তেভরা রাস্তা, জলাবদ্ধতা। এর সাথে যোগ হয়েছে অরক্ষিত খোলা খাল-নালায় পড়ে পথচারীর মৃত্যু এবং নিখোঁজ হওয়া।

নগরবাসীর বড় কষ্ট এবং ক্ষোভের বিষয় হলো, নালায় পড়ে নিখোঁজ কিংবা মৃত্যুর দায় সংশ্লিষ্ট কোন সংস্থা নিতে চায় না, নেয় না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ মিলে নাগরিক নিরাপত্তা চিন্তা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তা না, উল্টো এক সংস্থা অন্য সংস্থার প্রতি বিষোদগার এবং দোষ চাপিয়ে দেয়। মাঝখানে পথচারী নিখোঁজ বা মারা যাওয়ার কোন বিচার বা সুরাহা হয় না।

গত বছর জুনে ষোলশহর উন্মুক্ত খালে পড়ে অটোরিকশা চালক এবং একজন নারী যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরপর গত বছর আগস্টে মাইজভাণ্ডার শরীফ যাওয়ার পথে মুরাদপুরে খোলা অরক্ষিত খালে পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমদ নামক একজন ব্যবসায়ী। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার লাশটি পর্যন্ত এখনো পাওয়া গেল না। বহুল আলোচিত এই ঘটনাটিতেও কোন সংস্থা দায় নেয়নি।

এর পরপরই গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘটে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। নগরীর আগ্রাবাদে নানার সাথে যাওয়ার পথে সাদিয়া নামক একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খোলা নালায় পড়ে মারা যান। সেই ছাত্রীর পরিবারের সে কী আহাজারি কান্না। সেই পরিবারটির কান্নায় পুরো শহরবাসীর মায়া হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থা দুটির মায়া হলো না। এই ঘটনাতেও উভয় সংস্থা দায় এড়িয়ে গেলেন।

গেল ডিসেম্বরে নগরীর চশমা খালে পড়ে নিখোঁজ হন কামাল নামক একজন শিশু। পরে তিনদিন পর শিশু কামালের লাশ পাওয়া যায় মির্জা খালে।

গত কয়েকদিন আগে নগরীর পুরাতন চাঁন্দগাও এলাকায় দুইজন মহিলার সাথে এক শিশু হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ শিশুটি নালার খোলা অংশে পড়ে যায়। সাথে থাকা মহিলারা এবং আশপাশের মানুষজন এসে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। ভাগ্য ভালো নালায় পানির স্রোত ছিল না। পানির স্রোত থাকলে হয়তো নগরবাসী আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংবাদ পেত। তখনও হয়তো কোন সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের দোষ স্বীকার করতো না।

গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্মুক্ত নালা খালে পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। তবে এখনো পর্যন্ত সালেহ আহমদ নামক একজনের লাশ পাওয়া যায়নি। সামনেই আসছে বর্ষাকাল। জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য এমনিতেই আতঙ্ক দুর্ভোগের। বর্ষা হলেই হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানিতে ডুবে চট্টগ্রাম শহর। সিডিএর তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য খালে বাঁধ দেওয়ায় এবার গলা সমান পানি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন খোদ সিটি মেয়র।

মেয়রের আশঙ্কা যদি সত্যি হয়, তাহলে বর্ষা শুরুর আগেই উন্মুক্ত নালা খালে নিরাপত্তা বেষ্টনী দ্রুত নিশ্চিত করা উচিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। না হলে খোলা নালায় খালে পড়ে বহু পথচারীর মৃত্যু হতে পারে এমন আশঙ্কা নগরবাসীর। তাছাড়া নগরীর ফুটপাতের অনেক স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, থাকলেও ভাঙা।

গতকাল সোমবার (২৮ মার্চ) হাবিবুর রহমান তারেক নামে একজন যুবক ভাঙা ম্যানহোলে পা পিছলে পড়ে আঘাত পান। তার ফেসবুক আইডিতে তার বিস্তারিত লিখে পোস্টও করেন। ছোট্ট শিশু হলে বড় দুর্ঘটনা হতে পারত বলে আশঙ্কাও করেন তিনি। এভাবেই প্রতিনিয়ত ভাঙা খোলা ম্যানহোলে পড়ে আহত হচ্ছেন পথচারীরা। তার কিঞ্চিতও খবরে আসছে না।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একে অপরের প্রতি বিষোদগার কিংবা দোষারোপ না করে, উভয় সংস্থা মিলে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই দ্রুত খোলা নালা খালে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও খালের বাঁধগুলো কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করণ, ফুটপাতের প্রতিটি ম্যানহোলের ঢাকনা প্রতিস্থাপন সংস্কার নিশ্চিত,  সর্বোপরি জলাবদ্ধতা থেকে এবং অনাকাঙিক্ষত মৃত্যু থেকে নগরবাসীকে বাঁচাবে এমনটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর।

 

লেখক: সংগঠক

 

পূর্বকোণ/পিআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট