চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাবার গ্রহণে সুন্নত ও আদব

অনলাইন ডেস্ক

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আল্লাহর ইবাদত ও বান্দার হক আদায় করার জন্য শরীরে শক্তি প্রয়োজন। আর সে জন্যই আল্লাহ তায়ালা মানুষকে খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নবীজি (সা.) খাবার গ্রহণের বাস্তব নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়েছেন। নবীজির সুন্নত মোতাবেক খাবার গ্রহণে যেমন রয়েছে পরকালীন সওয়াব লাভের আশা, তেমনি পার্থিব জীবনেও অসংখ্যা কল্যাণ ও উপকার। খাবারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংক্ষেপে কিছু সুন্নত ও আদবের কথা তুলে ধরা হলো।

খাবারের শুরুতে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেওয়া। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালা বারকাতিল্লাহ’ দোয়া পড়া। রাসুল (সা.) খাবারের প্রারম্ভে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করতেন এবং তার অন্য সাথীদের খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খাও এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (মুসলিম: ২/১৭২; বুখারি : ৫১৬৭)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও তাহলে (মাঝখানে স্মরণ হলে) বলো ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ও আখিরাহ’ (রিয়াজুস সালেহিন : ৭২৯)।

খাবারের শুরুতে দস্তরখান বিছানো সুন্নত। রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় দস্তরখান বিছিয়ে খেতেন। তিনি এ ব্যাপারে অনেক যত্নশীল ছিলেন। (বুখারি : ২/৮১৮)

ডান হাত দ্বারা খাবার খাওয়া চাই। রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন। এবং বাম হাত দ্বারা খাবার খেতে মানুষকে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না এবং পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি : ১৯১২)

খাবারের মজলিসে সবচেয়ে বড় এবং মান্য ব্যক্তিকে দিয়ে আরম্ভ করা। (মুসলিম : ২/১৭১)। খাবার এক আইটেমের হলে শুধু নিজের সামনে থেকে খাওয়া। (বুখারি : ২/৮১০)। খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে সেটা উঠিয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া। (মুসলিম : ২/১৭৫)

হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া। হাদিসে খাবার গ্রহণকালে বসার তিনটি পদ্ধতির বিবরণ পাওয়া যায়- ১. উভয় হাঁটু উঠিয়ে বসা। ২. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অন্য হাঁটু মাটিতে বিছিয়ে বসা। ৩. দুই হাঁটু গেড়ে বসা। মোটকথা যেভাবেই বসুন সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বসা। (বুখারি : ২/৮১২)

অনেককে দেখা যায় খাবারের মধ্যে নানারূপ দোষ-ত্রুটি ধরে। এ নিয়ে পরিবারে ঝগড়াঝাঁটিও হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে কেবল খাবার কেন্দ্র করে। অথচ রাসুল (সা.) এর সমগ্র জীবনে কখনও খাবারের দোষ ধরেননি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনও খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। সামনে উপস্থাপিত খাবার তার পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে সেটা খেতেন না। (বুখারি : ৫১৯৮)

খাবারে ফুঁক না দেয়া। খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক দুর্ভোগ পয়দা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনও খাবারে ফুঁক  দিতেন না। ফুঁক  দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজা : ৩৪১৩)

সব শেষে হাত ও আঙ্গুল চেটে খাওয়া। রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনও হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে না।’ (বুখারি: ৫২৪৫)। আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের অধিক সম্ভাবনা থাকে। কারণ, খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ : ১৯১৪)

খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। হজরত আবু উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান তায়িবান মুবারাকান ফিহি গায়রা মাকফিইন ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি কখনও এই দোয়া পড়তেন- ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়াজায়লানা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থাৎ, ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের আহার করালেন, পানি পান করালেন এবং মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলেন।’ (বুখারি : ৫৪৫৮)

আর কারো দাওয়াতে অংশ নিয়ে খাবার গ্রহণ করলে মেজবানের জন্য এ দোয়া করা- ‘আল্লাহুম্মা আতইম মান আতআমানি ওয়াসকি মান সাকানি’, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! যিনি আমাকে খাইয়েছেন, আপনি তাকে খাওয়ান। যে আমাকে পান করিয়েছেন, আপনি তাকে পান করান।’ (মুসলিম : ২/১৮০)

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট