চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আউটার স্টেডিয়ামস্থ সুইমিংপুল যাত্রা শুরু হচ্ছে আগস্টেই

হুমায়ুন কবির কিরণ

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

ইট পাথরের নগরীতে শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখার সুযোগ নেই। বর্ষা মৌসুমে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উৎকন্ঠায় থাকেন অভিভাবকরা। শুধু শিশুরাই নয়, নগরজীবনে বড়দের অনেকেও সাঁতার জানেন না। অবশেষে চট্টগ্রামে সাঁতার শেখার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামে নবনির্মিত সুইমিং পুল। দীর্ঘ অপেক্ষা, অনেক নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত শুধু কোনমতে সাঁতার কাটার জন্য জলাধার নয়-আন্তর্জাতিকমানের সুইমিং পুলই পেয়েছে চট্টগ্রাম। দীর্ঘসময় ধরে নামমাত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকা চট্টগ্রামের সাঁতার এখন শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয় বিশ^ দরবারে নিজেদের তুলে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ক’দিন বাদেই আগেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে যাওয়া এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন সুইমিং পুলটি পুরোদমে যাত্রা শুরু করবে। তথ্যটি জানিয়েছেন সিজেকেএস সাঁতার কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আসলাম মোর্শেদ। এই প্রতিবদককে তিনি বলেন, ২৫ জুলাই নীতিমালা ও করনীয় বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সর্বসাধারনের জন্য নিয়ম-নীতি প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, সিটি মেয়র ও সিজেকেএস সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছিরউদ্দিন আসছে আগস্টেই সুইমিং পুলের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে বদ্ধ পরিকর।
এই নগরীতে আক্ষরিক অর্থে সাঁতার শেখার তেমন কোন সুযোগ নেই। পুকুর-দীঘির অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। যেগুলো রয়েছে সেগুলোরও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা নেই। বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিতে ডুবে যায় নিচু এলাকা। পানি এমনই প্রবাহিত হয় যে, সড়ক আর ড্রেন আলাদা করে কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া ছুটিতে সাঁতার না জানা শিশুদের নিয়ে শহরের বাইরে যাওয়া অভিভাবকরাও সবর্দা থাকেন উদ্বিগ্ন। নগরীতে এবং নগরীর বাইরে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা অনেক। নগরীতে বাড়তে থাকা আবাসন কমিয়ে দিচ্ছে জলাধার। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আউটার স্টেডিয়ামে নির্মিত সুইমিং পুলে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা হতে যাচ্ছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন শুধু সাঁতার প্রতিযোগিতাই নয়, সমাজের দরিদ্র শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখাতেও বদ্ধ পরিকর। যতদূর জানা যায়, এই নগরীর আগ্রহী সকল শিশু-কিশোরদের সাঁতারে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের সেরা সাঁতারু তৈরির জন্য করনীয় সবকিছুই করবেন সিজেকেএস সাধারন সম্পাদক।
সিজেকেএস সাঁতার কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আসলাম মোরশেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের একান্ত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম পুর্ণাঙ্গ একটি সুইমিং কমপ্লেক্স পাওয়ার সুবিধা ভোগ করবেন নগরীর সকলে। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ে সাঁতারে চট্টগ্রামের অবস্থান ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে। আগে কোনমতে অংশগ্রহন থাকলেও এখন থেকে নিয়মিত স্কুল, বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও লিগসহ বছরে অন্তত তিন-চারটি নিয়মিত আয়োজন থাকবে। তিনি বলেন, সিটি মেয়রের চাওয়া আরও বিস্তৃত। তিনি চান, এখান থেকে ভালো ও জাতীয় মানের সাঁতারু বের করে আনতে।
অনেকেই হয়তো মনে করছেন আউটার স্টেডিয়ামে যখন এলাম পুলে নেমে একটু সাঁতরে নিই। এমনটা হলে হয়তো নিত্যদিন দূরন্ত কিশোরের মত গ্রামের বাড়ির পুকুরে ঝড় তোলার অনুভূতি মিলতো। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং কমপ্লেক্স কি এভাবে ব্যবহার করা যায়। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুইমিং পুল কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন দু’দফায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুলে সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মাঝে ২ ঘন্টা বিরতি থাকবে। সাঁতার শিখতে যারা ইচ্ছুক তাদের নির্ধারিত একটি ফি দিয়ে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধিতরা একঘন্টা করে সপ্তাহে ৫ দিন সাঁতার কাটতে পারবে। মেয়েদের জন্য থাকবে মহিলা ট্রেনার। সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থাপনায় তারা দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সাঁতার শিখতে পারবে। আর গরিব এবং পথশিশুদের কোন ধরনের ফি ছাড়াই সাঁতার শেখার ব্যবস্থা থাকছে। তাদের জন্যও দিনের একটি সময় নির্ধারণ করে দেয়া হবে। অবশ্য এর কোনটিই চূড়ান্ত নয়, ২৫ জুলাইর সভার পর বিস্তারিত জানা যাবে। এক বছর আগেও নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াস্থ আউটার স্টেডিয়ামের পাশের এলাকাটি জঞ্জালে ভরা ছিল। নেশাখোর, ভবঘুরে আর ভাসমানদের দখলে থাকা আউটার স্টেডিয়ামের দক্ষিণাংশ ছিল অপরাধের আঁখড়া। রাত হলেই সে এলাকা দিয়ে হেঁটে যেতে ভয় পেত মানুষ। আর এখন সে এলাকাটি আলো ঝলমলে এক দর্শনীয় স্থান। নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পার্শ্বে এক একরেরও বেশি জায়গার উপর নির্মিত এই সুইমিং কমপ্লেক্সে পুলের সাইজ ১১০০ বর্গ মিটার। যার দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার, রয়েছে ৮টি লেইন। প্রায় ২০ লাখ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পুলের গড় গভীরতা ২ মিটার। যা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের একটি সুইমিং পুল। পুলটির মূল প্রবেশ পথ পূর্ব দিকে। যার পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাশে রয়েছে গ্যালারি। যেখানে বসতে পারবে দেড় হাজার দর্শক। নিচে রয়েছে ডিপ টিউবওয়েল, ফিল্টেশন প্লান্ট এবং ২৫০ কেভি সাবস্টেশন। এছাড়া পশ্চিম পাশে রয়েছে ওয়াটার রিজার্ভার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট