চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্রিকেটযুদ্ধ শুরু আজ

মিটু বিভাস

৩০ মে, ২০১৯ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

ক্ষণগণনা শেষ। আজ বিকাল সাড়ে তিনটায় লন্ডনের ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ^কাপের ময়দানী লড়াই। আগামী দেড়মাস বিশ^ শিরোপার জন্য মাঠের যুদ্ধে লড়বে বর্তমান ক্রিকেটের সেরা ১০ দল। কুড়ি বছর পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট হচ্ছে জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। সবশেষ ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ইংল্যান্ডে। এই বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে শুধু ইংলিশরাই নয়, রোমাঞ্চিত গোটা ক্রিকেট দুনিয়াও। ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞকে সফল করতে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে ইংল্যান্ড। নতুন ফরম্যাটে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায়, আইসিসির নানা আয়োজনে এবার আসরটি বিশ্ব ক্রিকেটকেই চমকে দিবে এমন প্রত্যাশা সবার।
উদ্বোধনী ম্যাচে আজ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে স্বাগতিকতার জোরে ইংল্যান্ডকেই ফেবারিট ধরছে সবাই। একে দেশের মাটিতে ক্রিকেটের মহোৎসব, অন্যদিকে দুর্দান্ত ফর্ম র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা মরগানদের। গত এগারো আসরে অধরা থাকা বিশ্বকাপটা জিততে স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাসের পারদটাও আকাশ ছুঁয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বকাপে ‘চোকার’ বদনাম ঘোচাতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকা এবারো কম যাচ্ছে না। উপভোগের মন্ত্র নিয়ে খেলতে আসা ফাফ ডু প্লেসিসরাও যে কোন ছাড় দেবেন না প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। র‌্যাংকিংয়ের তিনে থেকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আসা প্রোটিয়াদের মূল পরীক্ষাটা হবে স্বাগতিকদের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই।
এছাড়া মাঠের লড়াইয়ের জন্য নিজেদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাকি আট দল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান। এখন প্রতীক্ষা মূল লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলও প্রস্তুত সে যুদ্ধে। সেই লক্ষ্যেই কার্ডিফ থেকে গতকাল লন্ডনে পৌঁছেছে টাইগাররা। এখানে ২ জুন কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নামবে স্টিভ রোডস শিষ্যরা। গত কয়েকবছর ধরে ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলছে বাংলাদেশ। দলের অভিজ্ঞ ও তরুণ সব ক্রিকেটাররাই রয়েছেন দারুণ ফর্মে। ফলে সমর্থকদের প্রত্যাশার মাত্রাটাও অনেক বেশী। বিশ্বসেরা সব দলের সঙ্গে এ খেলায় বাংলাদেশ নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবে শিরোপা জয়ের- ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে সেই জল্পনা-কল্পনা। টাইগাররা জাতির জন্য অর্জন করে আনবে আনন্দের উপলক্ষ, বাংলাদেশেই আসবে বিশ্বকাপ- এমন স্বপ্ন ইতোমধ্যে দেখতে শুরু করেছেন ক্রীড়ামোদিরা। টাইগাররা সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে খেললে এবং সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে অবশ্যই তা সম্ভব। আকাঙ্খার পালে হাওয়া দিচ্ছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ‘বিদায়ের’ সিদ্ধান্ত। সতীর্থরা তার বিদায়ী বিশ^কাপটা অবশ্যই স্মরণীয় করতে চাইবেন। তবে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সাথে থাকা বাংলাদেশ বিশে^র অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি দলগুলোর বিপক্ষে মাঠের লড়াইয়ে কতটুকু সাফল্য বয়ে আনবেন সেটা সময়েই বলে দিবে। যদিও সাবেক গ্রেটদের অনেকেই বিশ^কাপের ফাইনালে দেখছেন বাংলাদেশকে।
১৯৯২ সালের পর এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট হতে যাচ্ছে লিগ ফরম্যাটে। প্রতিটি দলই লড়বে একে অপরের বিপক্ষে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পর্যান্ত। ম্যাচের ভেনু, অনুশীলনের মাঠ, খেলোয়াড়দের আসা-যাওয়ার পথ এবং হোটেলগুলোতেও থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। এছাড়া আইসিসি’র দুর্নীতি দমন ইউনিট-আকসুর নজরদাড়িতে থাকবে ক্রিকেটাররা। খেলোয়াড়দের ফিক্সিং থেকে দূরে রাখতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে আইসিসি। ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ক্রিকেট এরই মধ্যে উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ইংল্যান্ডে জড়ো হচ্ছেন ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞ উপভোগ করতে। ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ ম্যাচের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ জুলাই ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে ক্রিকেটের বিশ্ব মহারণের। সময়ের আবর্তে প্রতিটি বিশ^কাপেই খেলাই কিছুটা পরিবর্তান আসে। তবে এবার বিশ^কাপে পরিবর্তন অনেক বেশি। আইসিসি জানিয়েছে, প্রযুক্তি এবং ক্যামেরা ব্যবহারের দিক থেকে এবারের বিশ্বকাপের কাভারেজ হবে অভূতপূর্ব। যেটাকে তারা বলছে ‘স্টেট-অব-দি-আর্ট’। এই প্রথমবারের মতো ম্যাচের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর রি-প্লে এবং সেই সাথে বিশ্লেষণ এমনভাবে এবার টিভি দর্শকরা দেখবেন যে অভিজ্ঞতা আগে তাদের কখনো হয়নি। এতে ৩৬০ ডিগ্রি রিপ্লেতে কয়েকটি ক্যামেরার ফুটেজ যোগ করা হবে। প্রতিটি ম্যাচে মাঠে কমপক্ষে ৩২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে যেগুলোর আটটি থাকবে ‘আলট্রা-মোশন হক-আই’ ক্যামেরা। স্ট্যাম্পের সামনে এবং পেছনে দুদিকেই ক্যামেরা থাকবে। সেইসাথে মাঠের ওপর থাকবে চলমান ‘স্পাইডার ক্যামেরা’। আকাশে থাকবে ড্রোন চালিত ক্যামেরা যা দিয়ে ওপর থেকে পুরো স্টেডিয়াম এবং আশপাশের ছবি দেখবেন দর্শকরা।
এবারের বিশ^কাপে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রাইজমানি দেয়া হচ্ছে। এতে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ ডলার, আর রানার্স আপ পাবে দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলার। হেরে যাওয়া সেমিফাইনালিস্টরা পাবে ৮ লাখ ডলার করে। গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবার প্রাইজমানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। সর্বমোট প্রাইজমানি দেয়া হচ্ছে ১৪ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে এবার বিশ^কাপে কমেছে দলের সংখ্যা। গত দুটি বিশ্বকাপে অর্থাৎ ২০১১ এবং ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। এবার মাত্র ১০টি। প্রতিটি দলই একবার করে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবে। এর পর সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া চারটি দল খেলবে সেমিফাইনাল পর্বে। এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যেখানে টেস্ট মর্যাদার অধিকারী হয়েও খেলতে পারছে না আয়ারল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ে। ১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম জিম্বাবুয়ে। একই সাথে এবার প্রথম ক্রিকেট বিশ^কাপ যেখানে নেই কোন সহযোগী সদস্য দেশ।
এবার বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের উইকেট থাকবে ব্যাটিং বান্ধব। যেখানে রানের ফুলঝুড়ি ফোটাবেন ব্যাটসম্যানরা। তবে ব্যাটসম্যানরা ব্যাটে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন ন। এবার বিশ^কাপে ব্যাটের সাইজেও আসছে পরিবর্তন। এখনকার ব্যাটসম্যানরা যে ব্যাট ব্যবহার করেন তা আকারে আগের চাইতে অনেক মোটা যা দিয়ে বলকে অনেক জোরে আঘাত করা যায়। উনিশশ সত্তর বা আশির দশকেও ব্যাটের কিনারা মাত্র ১৫-১৬ মিলিমিটার চওড়া হতো। কিন্তু এ যুগে ডেভিড ওয়ার্নারের মত কোনো কোনো ক্রিকেটার তো এমন ব্যাট ব্যবহার করছিলেন- যার কিনারা মাঝ বরাবর ৫০-৫৫ মিলিমিটার পর্যন্ত চওড়া ছিল। ২০১৭ সালের অক্টোবরে নতুন নিয়মে ব্যাটের আকৃতি কি হবে- তার একটা সীমা বেঁধে দেয় আইসিসি। এখন ব্যাটের কিনারা সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটার হতে পারবে। চওড়া হবে সর্বোচ্চ ১০৮ মিলিমিটার আর গভীরতা হবে ৬৭ মিলিমিটার। এই নিয়ম কার্যকর হবার পর এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। এবার ব্যাটসম্যানদের নতুন নিয়মমাফিক ব্যাট নিয়েই মাঠে নামতে হবে। এছাড়া রানআউট, ক্যাচসহ ফিল্ডিংয়েও থাকে নতুন নিয়ম। এছাড়া মাঠে ক্রিকেটারদের খারাপ ব্যবহার ঠেকানোর জন্য ‘লাল কার্ড’ অর্থাৎ খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে বের করে দেয়া এবং বিপক্ষ দলকে পাঁচ রান বোনাস দেয়ার আইন থাকছে বিশ্বকাপে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট