চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ । কবিতা

১৪ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:৫৫ অপরাহ্ণ

আহমেদ শরীফ শুভ

অলৌকিক কাবিন

 

মোহর কুড়াতে গেছি

লগ্নের গাড়ি স্থির কুম্ভের কানে

ঘাটে ঘাটে পেরেশান কোথাও অনল পাই

কোথাও সলিল

একসাথে দেখা নেই, নদী যায় ভিনপথে

আমার বকেয়া থাকে কাজির দলিল

 

যদিও মোহর নেই, মোহরানা ঢেলে দেই

যখনই জ্বেলেছো ঘরে জলের আগুন

কিংবা ফাগুন

এনেছো ডেকে ফিঙে আর জোৎস্নার বাঁকে

হয়তো কাবিনে লেখা, হাতে দম দমকলে

কখনো নেভানো সুর কখনোবা দাবানলে

মিলে মিশে একাকার জলের কামান

গিরিখাত খুঁড়ে দেখি স্রোতের নামতা পড়ে

আমার উঠোনজুড়ে ঝড় তুলে ঝরে যায়

কোন এক পূর্ণিমার চাঁদ

 

কাজির দলিল ভুলে ঘামের বিন্দু জমে

আমাদের রূপকথা-কাবিন পাতায়

ঈশ্বর দেয় বর

জলের কামানে চাখি আগুনের স্বাদ।

 

 

ওমর কায়সার

শালিকছানা

 

গাছের কোটরে দুইটি শালিক শিশু

কিছু দূর থেকে শকুন তাদের দেখেছে

কখন যে তারা ঘুমিয়ে পড়বে শেষে

আড়ালে আড়ালে সেটাই নজরে রেখেছে।

 

যুদ্ধ হয়নি প্রতিরোধ নেই কোনো

ঘুমন্ত ছানা হয়েছে ছিন্ন ভিন্ন

এই ঘটনার সাক্ষী হবে না কেউ

শুধু শালিকের বুকে আছে তার চিহ্ন।

 

 

সাজিদুল হক

কেবল শোকের চাষাবাদ

 

মানুষই করে কেবল শোকের চাষাবাদ

মানুষ মানুষের শত্রু চিরকালের প্রবাদ

ঘৃণায় ফিরিয়ে দেয় অপার ভালোবাসা

প্রতিদিন সূর্য উঠে এটাই মূর্খদের আশা

মানুষ জন্ম দেয় ক্লান্তিতে ভরা দীর্ঘ রাত

ঈশান কোলে মেঘ দেখা হয় না সুপ্রভাত

মানুষের মুখ আসলে ঢেকে রাখা মুখোশ

অন্ধদের চোরাগলিতে চলে শুধু আপোষ

জলের কাছে কিছুই না শেখা এই মানুষ

কখনও কী ফিরে পাবে  মৃত্যুর পূর্বে হুশ।

 

 

জিললুর রহমান

চড়াই

 

উদ্ভ্রান্ত বটের ঝুড়ি পাগলীর আলুথালু চুল

তার ফাঁকে মায়া চাঁদে হেমন্তের প্রেমের ইশারা

ওদিকে বিলাপরত পাতাং ঝিরির কালো জল

তুমি কথা বলে যাও নায়েগ্রার প্রপাতের ধারা

 

পাহাড়ি সর্পিল পথ থামার ফুরসত নেই কোনো

থুরঙে চাপিয়ে শস্য চলে ক্ষীণ কটি তরুণীরা

পাশ ঘেঁষে বেয়ে ওঠে মারমা যুবার দল যতো

তোমার বকবক শুধু যাত্রাপথে নিয়ত প্রেরণা

 

কতো নাম না-জানা পাখির কন্ঠ করে যায় হল্লা

হাতছানি দিয়ে ডাকে সিয়ামের বাঁশের মাচাং

তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই কেবল চূড়ার দিকে চলা

পাহাড়ে ফুটেছে ফুল আর ফল জাতের নানান

 

আমাদের যেতে হবে আরও দূর চড়াই উৎরাই

যেমন জীবনভর তোমার শরীরে সাঁতরাই

 

 

ভাগ্যধন বড়ুয়া

এসো বৈশাখ, থাকো ভালোবেসে

 

বৈশাখী বাতাসে ফিরে রঙিন শৈশব

ঘুড়ি ওড়া দিন, মাতামুহুরীর মেলা,

শেফালী ঘোষের গান, আমের মুকুল ঘ্রাণ,

হালখাতা কাল, ক্ষয়িত বসন্ত কুহু…

 

ঋতুরাজ ভীতু মনে হারায় আদল

সম্মুখে হাজির হয় অচেনা বৈশাখ

কখনও মাতাল মন কখনও সুরের তাল

অনুরাগ ও বদরাগে বিভ্রান্ত বিশ্বাস!

 

সাদা মেঘ ভেসে গেলে পাখিরা আনন্দে

মেঘ যদি কালো হয় আকাশও কাঁদে

কাল থাবা যদি আসে সমুদ্রের রাগে

বসতি বিরান মাঠ ভাঙাচোরা ঘর!

 

বৈশাখ;

এসো হে, থাকো ভালোবেসে

ভেসে নিও না শেষে বসতি উঠোন

ঘরহারা হলে পরে,

ঋতুর কামড় জানে কূলের মানুষ!

দিও না দুঃখ,

সহায়-সম্বল বলতে ঘর ছাড়া বেশি কিছু নেই আর!

 

 

শেখর দেব

ঘর ও কবর

 

বাড়ি ভেঙে গেলে হয় মাটির জমিন

মরে গেলে মনু পায় কাঠের কফিন

 

তবু কেন বাড়ি বাড়ি করো দিবারাত

মিছে মায়া নিয়ে আজ বৃথা অশ্রুপাত

 

হায় হায় করে যাই নাই কতো কিছু

এভাবে জীবন ছুটে মরণের পিছু

 

সুখের লাগিয়া মন বাঁধো ওগো ঘর

কবরের ঘরে দেখো সবাই তো পর

 

দারুণ দখিনা বায়ু বয় কতো সুখে

জীবন মুছিয়া যায় পৃথিবীর বুকে

 

মরণ মরণ করে দাও কেন ফাঁকি

জীবনের জন্য তুমি কী রেখেছো বাকি?

 

 

আজিজ কাজল

কৈ গান

 

সন্ধ্যা হয়েছে বলে আমিও থেমে নেই, প্রতিদিন তোমার

কুমড়োলতার ফুল, রসুইঘরের লবণ, আমার বাউলতা

ধ্যানের গলা ধরে আসে।

 

মাঝে মাঝে শ্যাওলা পাতাও দেয় ডুব বিনিদ্র হরফে

এই করে আমলকি পাতায় ধরেছো নতুন স্বপ্ন দেখা

ছলনার কৈ-গানে বাজে ত্রিবেণি অক্ষর-

এসো, তোমার ঝলমে পেতে রাখো ধ্যানের নতুন গল্প।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট