চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

ভয়ংকর মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে যৌতুক প্রথা

২১ নভেম্বর, ২০২৩ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

যৌতুক প্রথা অতীতকাল থেকেই সমাজে ছিল এবং আছে। সাধারণভাবে বলা যায়, বিয়েতে কনে বাড়ি থেকে ছেলে পক্ষের বাড়িতে যা দেয় তাই যৌতুক। আবার বরকে দামি পোশাক, নগদ টাকা, গাড়ি ইত্যাদিও কিন্তু এই যৌতুকের মধ্যে পড়ে।

এবার আসি বরযাত্রী খাওয়ানোতে। এটা নিয়ে অন্যান্য জেলার বিয়েতে তেমন কোনো বাড়াবাড়ি না থাকলেও আমাদের চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের কনে পক্ষের বেশির ভাগ সময়ই নাজেহাল অবস্থা হয়। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষকেও ৫০০ থেকে ৭০০ বরযাত্রী খাওয়াতে হবে। এবং বিয়ের আগে পরে সামাজিকতার দোহাই দিয়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানও করতে হয়।

উচ্চবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্তরা হাজারখানেক মানুষ খাওয়ানো বা ভালো ক্লাবে বিয়ে না হলে নিজের তথাকথিত মান-সম্মানের সাংঘাতিক অবমাননা বলে মনে করেন অনেকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি এমন একটি সামাজিক ব্যাধি যে, বিয়েতে মেয়েকে খুশি রাখার জন্য বিভিন্ন কিছু দিয়েছি বা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে নিজের মানসম্মান উঁচুতে রাখতেই বিভিন্ন উপঢৌকন পাঠিয়েছি। এই এমন ধারনাই পোষণ করেন বেশিরভাগ লোক।

উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের দেখাদেখি মধ্যবিত্ত বা সাধারণ মানুষও মনে করেন, অমুক মেয়ের বিয়েতে কত কিছু দিয়েছে, আমাকেও যতটা সম্ভব বিভিন্ন জিনিসপত্র মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে দিতেই হবে। আমি অনেক আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে দেখলাম ছেলেপক্ষ সরাসরি কোন যৌতুক দাবি না করলেও মেয়ের বাড়ি থেকে পাঠানো নানা জিনিসপত্র, আসবাবপত্র ও উপঢৌকনে বেশ খুশি তারা। আবার নিজেকে বড় মনের মানুষ জাহির করতে বলেন- আমাদের কোন কিছু কি দরকার আছে? নিজের মেয়ের জন্যই তো তারা সোফা, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়েছেন।

এই যৌতুকের কুপ্রথা শুধু সামাজিক ব্যাধি হয়ে আর নেই। পরিণত হয়েছে একটি ভয়ংকর মানসিক ব্যাধিতেও। তাই সাধারণ লেখাপড়া জানা মেয়ে থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মেয়ের মা-বাবাও এই মানসিক ব্যাধিতে ভুগে অনেক সময় সাধ্যের বাইরে গিয়েও ঋণ করে হলেও অনেক জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বিয়ে দেন মেয়েকে। কোন ধর্মীয় রীতিতে যৌতুক দিয়ে বিয়ের কথা বলা না থাকলেও হর হামেশা শতকরা ৯০ জনই এটাই স্বাভাবিক নিয়ম বলে মনে গেঁথে নিয়েছেন। তাই এই যৌতুক প্রথা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক ভয়ংকর মানসিক ব্যাধিও হয়ে গেছে। বিয়েতে দুটি পরিবারের মধ্যে নতুন আত্মীয়তার মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। যৌতুকের মত এই কুপ্রথার কারণে ও সংস্কারের দোহাই দিয়ে বিয়েতে পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। তাই আমাদের মন-মানসিকতার বিশেষ পরিবর্তন দরকার। আরো দরকার লোভ-লালসা ত্যাগ করে শুধু বাহ্যিকভাবে আধুনিক না হয়ে সুন্দর মানসিকতার পরিচয় দেওয়া। তাহলে এই কুপ্রথা ও মানসিক ব্যাধি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট