চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। ঠিকমত এ বিধান পালন করলে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও চিরস্থায়ী জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ বিশ্বাসীরা অবশ্যই সফলকাম, যারা বিনয়াবনত তাদের নামাজে।’ –(সূরা মুমিনুন, আয়াত, ২৩)

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে-পরে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে, যার গুরুত্ব অপরিসীম। শরীয়তের পরিভাষায় সুন্নত বলা হয়, ওই আদেশমূলক বিধানকে, যা ফরজ-ওয়াজিবের মতো অপরিহার্য না হলেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত আমল থেকে তা প্রমাণিত। -(ফিকহুস সুন্নাহ, ১৬০)

সুন্নত নামাজের গুরুত্ব

সুন্নত নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন কারও ফরজ নামাজে ঘাটতি থাকলে, এ নামাজ দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সেই ঘাটতি পূরণ করবেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সবার আগে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হল নামাজ। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নইলে (নামাজ ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরজ নামাজে কোনও কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনও নফল (নামাজ) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। তারপর অন্য আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে।’ -(সুনানে আবু দাউদ, ৭৭০, তিরমিজি, ৩৩৭, ইবনে মাজাহ, ১১৭)

প্রতিদিন ফরজের আগে ও পরের সুন্নতগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় আদায় করতেন, কখনও কোনও বিশেষ কারণ ছাড়া তা আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন না এবং সাহাবায়ে কেরামকে আদায়ের নির্দেশ দিতেন।

সুন্নতের ফজিলত

উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ও দিনে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করলো, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘড় নির্মাণ করা হলো। সেগুলো হলো জোহরের (ফরজ নামাজের) পূর্বে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, ইশার পর দুই রাকাত, ফজর নামাজের পূর্বে দুই রাকাত। -(তিরমিজি, কিতাবুস সালাত, ১/ ৪৪০,৪৪৫)

আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মনিষ্ঠভাবে দিন-রাতে ১২ রাকাত নামাজ পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; জোহরের (ফরজ নামাজের) আগে চার রাোত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের (ফরজের) আগে দুই রাকাত।’-(নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ৫৭৭)

নামাজের আগে-পরে সুন্নত দুই প্রকার

যেসব সুন্নত ফরজ নামাজের আগে-পরে পড়া হয় তা হল দুই প্রকার। প্রথম প্রকার হল, সুন্নতে মুয়াক্কাদা। দ্বিতীয় হল, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা।

সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয় ওই সুন্নতকে, যার ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত এমনভাবে আমল করতেন যে তা ওজরবিহীন (বিশেষ অপারগতা) কখনও ছাড়তেন না। যেমন, পুরুষরা জামাতে নামাজ পড়া, জামাতের জন্য আজান দেওয়া, জোহরের (ফরজ নামাজের) আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের (ফরজের) আগে দুই রাকাত ইত্যাদি।

এই ইবাদতের বিধান হলো—ওজরবিহীন নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গুনাহ, তবে প্রয়োজনে হঠাৎ ছাড়তে পারে। মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনে ওজরবিহীন ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা হবে, তবে ফাসিক বা কাফির বলা যাবে না।

সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বলা হয় ওই সুন্নতকে যার ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আমল করলেও ওজরবিহীন মাঝে-মাঝে ছেড়ে দিতেন। তাকে মুস্তাহাব, নফল, মানদুবও বলা হয়।

এর বিধান হলো—এগুলোর ওপর আমল করা প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ। তবে অপ্রয়োজনে ওজরবিহীন ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা যাবে না। যথা তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য নফল নামাজ, নফল রোজা, নফল সদকা ও নফল হজ, পরোপকার করা ও জনসেবামূলক কাজ করা ইত্যাদি। তবে এ ধরনের আমলগুলোর মধ্যে কোনো কোনো আমল অন্য আমলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কোনো কোনো ওলামায়ে কেরামের মতে, মুস্তাহাব-নফলের চেয়ে সুন্নতে জায়েদা তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ। (কাশফুল আসরার : ২/৩০২)

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট