চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

কেয়ামতের বার্তাবাহক ইমাম মাহদি আসবেন আহলে বাইত থেকে

৩০ আগস্ট, ২০২২ | ৮:০১ অপরাহ্ণ

পৃথিবী যখন জুলুম, পাপাচার, অন্যায়, অবিচারসহ নানা অপরাধে ভরে যাবে, তখন আহলে বাইত থেকে একজন লোক পাঠাবেন আল্লাহপাক। সারা পৃথিবীর মানুষকে শান্তি প্রদানের জন্য আসবেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তবে তাঁকে সবাই চিনবেন ইমাম মাহদি নামে। তিনি ৫০০ বছর বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। তার আগমনের মাধ্যমে কেয়ামতের আগাম বার্তা পাওয়া যাবে। এরপর অভ্যুদয় হবে দাজ্জালের। এরপর ক্রমান্বয়ে আসবেন ঈসা (আ.), ইয়াজুজ ও মাজুজ।

হাদীসের মধ্যে এসেছে, ইমাম মাহদি এসে অশান্তির ধারক-বাহকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। সেখানে সিরিয়া ও খোরাসানের বাহিনী তাঁর অনুসারী হবে। সিরিয়া বলতে বর্তমান সিরিয়া নয়। ফিলিস্তিন, জর্ডান, ইসরায়েল নিয়ে তৎকালীন সিরিয়া ব্যাপক এলাকা জুড়ে ছিল। এছাড়া আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ছিল তৎকালীন খোরাসনের অংশ। তারা সারা বিশ্বে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যোগ দেবে।

আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) বলেন, কারবালার যুদ্ধে হোসাইন (রা.)-এর শিশুপুত্র জয়নুল আবেদিন জীবিত ছিলেন। তার বংশ থেকে পৃথিবীতে আসবেন মাহদি। রাসূল (সা.) আহলে বাইতকে মহব্বত করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিনগণ সত্যিকার আহলে বাইতকে অবশ্যই মহব্বত করবে। এটি ঈমানের অংশ। তাই আহলে বাইত আমাদের কাছে মহব্বত প্রাপ্য।

আমরা যখন নবীর (সা.) জন্য দোয়া করি, সেখানে আহলে বাইতকেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তাদের ও রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণ এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা তাদের হক। এর মাধ্যমেই সহীহ আকিদার উপর থাকা যাবে। নিচের তিনটি শর্ত পাওয়া গেলে তারা আহলে বাইত বলে বিবেচিত হবেন-

১. সনদের মাধ্যমে আহলে বাইত প্রমাণিত হতে হবে। যে কেউ দাবি করতে পারে আমি রাসূলের (সা.) বংশধর। কারণ কিছু কিছু মানুষ রাসূলের ইন্তেকালের পর নিজেদের আহলে বাইত দাবি করে। ফাতেমী যুগে মর্যাদা পাওয়ার জন্য ভণ্ড মানুষরা নিজেদের ফাতেমী বংশধর বলে দাবি করত। আব্বাসীয় যুগে মিশরে ফাতেমী শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যত কুসংস্কার-বিদআত আছে সব চালু করেছিল তারা।

২. ঈমানদার হতে হবে। রাসূলের (সা.) বংশের মধ্যে কাফের থাকতে পারে। আবু লাহাবের ছেলে কাফির ছিল। তাদের বংশ থাকতে পারে। তারা মর্যাদার যোগ্য নয়।

৩. তাদের জীবন পরিচালিত হবে কোরআন–সুন্নাহ অনুযায়ী। রাসূলের (সা.) কোন বংশধর যদি ভ্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে তা অনুসরণযোগ্য নয়। যেখানে নবী নূহ (আ.)-এর ছেলে কেনান কাফের ছিল। নবীর ছেলে হলেও সে সম্মানের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এরকম নবী-রাসূলদের কিছু স্ত্রী-সন্তানও ইসলাম গ্রহণ করেনি। ইব্রাহিম (আ.)-এর পিতা আজর ইসলাম গ্রহণ করেননি। তাই তিনিও সম্মানের পাত্র নয়।

কোরআনে আছে, তোমরা যদি আল্লাহকে মহব্বত কর, মহানবীকে অনুসরণ কর।

আহলে বাইতের প্রধান হলেন- ফাতেমা (রা.)। রাসূল (সা.) তার কন্যাকেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে ফাতেমা, আল্লাহর আজাব থেকে আমি তোমাতে বাঁচাতে পারব না। যদি তোমার আমলের মধ্যে যদি ত্রুটি থাকে। তোমরা আমার বংশধর হওয়ার কারণে আমি, তোমাদের বাঁচাব, সেই বিশ্বাস তোমরা করো না। বরং তোমরা ঈমান ও আমার আদর্শের উপর অটল থাক। তাহলে তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারবো’।

বর্তমান বিশ্বে দেখা যায়, কিছু মানুষ সীমালঙ্ঘন করে অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে অন্যকে নবীর মর্যাদায় নিয়ে যায়। যেমন শিয়ারা মনে করে রাসূলের (সা.) বংশধর নিষ্পাপ। যত গুনাহ করুক, সাত খুন মাফ। এটা শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা। তাই কারবালা ট্র্যাজেডি এলে তারা বিভিন্ন ধরণের কুফরি, শিরকে লিপ্ত হয়। তারা মনে করে পৃথিবীর মাটি খাওয়া হারাম, কিন্তু হোসাইনের (রা.) কবরের মাটি খাওয়া জায়েজ। এটি অতিভক্তি। পৃথিবীতে কাবা ঘর ছাড়া কোন ঘর তাওয়াফ করা জায়েজ নয়। কিন্তু তাদের মতে, হোসাইন (রা.)-এর কবর তাওয়াফ করা যাবে। তারা তাজিয়া মিছিলে শোক করে নিজের শরীর রক্তাক্ত করারা মাধ্যমে জুলুম করে। এটা তাদের অতিভক্তি।

আবার কিছু মানুষ আছেন, যারা আহলে বাইতকে মর্যাদা দিতে রাজি নন। তারা আয়েশা (রা.)-এর সমালোচনা করেন। যারা সহীহ আকিদার ওপর আছেন তাদেরও সমালোচনা করেন কেউ কেউ। এরা ভ্রান্ত ধারণায় অর্ন্তভুক্ত। আমরা হলাম মধ্যমপন্থী। ইসলাম মধ্যমপন্থায় বিশ্বাস করে। আহলে বাইতদের মধ্যে যারা হক্কানী আহলে বাইত, কোরআন-সুন্নাহ মতো নিজের জীবন পরিচালনা করেন আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।

আল্লাহপাক বলেছেন, হে নবী, আপনার উম্মতকে বলে দিন, তাদের কাছ থেকে আপনি কোন প্রতিদান চান না। তবে আপনার বংশকে তারা যেন মহব্বত করে।

আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য দুটি বিষয় রেখে গেলাম। একটি হলো আল্লাহর কিতাব কোরআন এবং অপরটি হলো আহলে বাইত। কিন্তু অন্য হাদিসে আছে আমার সুন্নত’।

আমাদের আমলের মাপকাঠি হলো কোরআন-সুন্নাহ। সাহাবীরাও কোরআন-সুন্নাহ অনুসারে জীবন পরিচালনা করেছেন। ভ্রান্ত আহলে বাইত আমাদের হেদায়েতের মাপকাঠি হতে পারে না। তদরূপ আমাদের আলেম–ওলামা কেউ যদি কোরআন-সুন্নাহর ভেতর না থাকেন, আমরা তার অনুসরণ করতে পারি না। তাদের অনুসরণ আমাদের জন্য হারাম। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সঠিক আহলে বাইতকে অনুসরণ, তাদের জন্য দোয়া করা এবং তাদের আদর্শমতো জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট