চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরী: চট্টগ্রাম উন্নয়ন-আন্দোলনের প্রতিভাস

ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ৮:২৬ অপরাহ্ণ

­১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম সফরে ডিসি হিলে অবস্থানকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘চক্রবাক’ কাব্যগ্রন্থের ‘বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি নিবন্ধের সূচনায় উপস্থাপন করতে চাই।

‘বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী!/ ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হয়ে এল বিদায়ের রাতি!/ আজ হ’তে হ’ল বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি,/ আজ হ’তে হ’ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি।’ কবিতায় কবি নজরুল যে নিরিবিলি আলাপনের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন; প্রাসঙ্গিকতায় একই সূত্রগাঁথায় কালের আবর্তনে নিরন্তর অত্যুজ্জ্বল প্রচেতায় চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরীর কর্ম ও জীবন নতুন প্রেরণার ব্যঞ্জনা যুগিয়েছে। দ্বার উম্মোচন করেছে নবজাতকের আধুনিক ধারার চক্রবাক। বস্তুতপক্ষে উল্লেখ্য অমিয় সত্যের অবগাহনে চট্টলমানস ইউসুফ চৌধুরীকে আবিষ্কার করা না হলে ইতিহাসে শুধু খন্ডিত অধ্যায় রচিত হবে।

বাংলাদেশের আধুনিক সংবাদপত্রের পথিকৃৎ ও দেশসেরা আঞ্চলিকের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা সৃজন-মননশীল সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রয়াত ইউসুফ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে তাঁর পূত-পবিত্র স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সাংবাদিকতা-ব্যবসা-সমাজসেবা-সমাজ সংস্কার ইত্যাদি যুগান্তকারী কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর হৃদয় গভীরে কর্ম-প্রেরণার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে জাগরুক রয়েছেন এবং চিরকাল থাকবেন। দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার প্রকাশনা, প্রচার-প্রসারে বিধেয় কর্তুকাম সম্পন্নে ক্ষণজন্মা এই মহান ব্যক্তির নিরলস পরিশ্রম, মেধা-প্রজ্ঞার সমীকরণ বীর চট্টলাকে শুধু দেশে নয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চট্টলার প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য-কৃষ্টি, বাণিজ্য-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিনোদন ইত্যাদির অবারিত জানালার উন্মুক্তকরণে অনবদ্য ভূমিকায় মর্যাদাসীন করেছে। চট্টলা হয়েছে গৌরবদীপ্ত, তেজস্বী ও সর্বত্র জ্যোতির্ময়।

এটি সর্বজনবিদিত যে, উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামের জীবন ও সংস্কৃতি ছিল গ্রামীণ। ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে ইংরেজ বণিকগোষ্ঠী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে ইংরেজ শাসিত ভারতীয় ভূখন্ডে সামাজিক ধনোৎপাদন ও বন্টনে আমূল পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটে। ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রামেও একটি ভূম্যধিকারী শ্রেণি ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। আধুনিক সমাজ চেতনা ও সমাজকাঠামো এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়েরই অবদান। নব উদ্ভূত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের সংস্পর্শে আসায় ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সন্তানদের চেতনায় যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা তারা সমাজ গঠনেও প্রয়োগ করার প্রয়াস পায়।

চট্টগ্রামের জনগণের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া-প্রতিবাদ-আবেদন-নিবেদনের মুখপাত্র হিসেবে স্বদেশপ্রেমী প্রগতিশীল ইংরেজি শিক্ষিত ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষতকায় ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি গঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন’। শুধু চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন নয়; আঠার শতকের শেষ ২৫ বছর ধরে ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নারীশিক্ষার বিস্তার, নারী সংগঠন গড়ে তোলা, দেশীয় শিল্প রক্ষার উদ্যোগ, প্রথম মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন, সংবাদপত্র প্রকাশ ইত্যাদি সমাজগঠনমূলক নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলমান থাকে।

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা স্বদেশী আন্দোলনের একযুগ আগে নলিনীকান্ত সেনের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামে ‘অধ্যয়নী সম্মিলনী’ নামে একটি পাঠাগার স্থাপিত হয় যেটি চট্টগ্রামের প্রথম লাইব্রেরী। ঐ সময়েই আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের উদ্যোগে প্রাচীন বিলুপ্ত পুঁথি উদ্ধার করার কাজ শুরু হয় এবং ‘প্রাচীন সাহিত্য সংগ্রহ সমিতি’ গঠনের মধ্যদিয়ে ‘প্রত্ন সাহিত্যিক লাইব্রেরী’ প্রতিষ্ঠার কর্মকান্ড অব্যাহত থাকে। বাংলাকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরে চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবীরা বঙ্গ বিভাগের সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বেই ‘চট্টল হিতসাধিনী সভা’ নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করেন। চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন ও চট্টল হিতসাধিনী সভা- এই দুই সাংস্কৃতিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামে শুরু হয় স্বদেশী আন্দোলন। স্বদেশী আন্দোলনে চট্টগ্রামের জনগণের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নিষ্ঠা সেসময় অবিভক্ত বাংলার প্রশংসা ছিল উচ্চকিত।

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন রবীন্দ্রনাথের চট্টগ্রাম আগমনের অন্যতম কারণ চট্টগ্রামের স্বদেশী আন্দোলন-মেলার সাফল্য। কালক্রমে বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামে মহাত্মা গান্ধী, মওলানা শওকত আলী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সহ উপমহাদেশের বিখ্যাত বিপুলসংখ্যক নেতা চট্টগ্রামে এসেছেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রাজনৈতিক কাজে চট্টগ্রাম আসলে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ কবির সংবর্ধনার আয়োজন করেন।

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভিক্টোরিয়া ইসলামি হোস্টেল ও মুসলিম শিক্ষা সমিতির ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে যোগদান উপলক্ষ্যে দ্বিতীয়বার চট্টগ্রাম আসলে কাট্টলীর ইউনিয়ন ক্লাব কবিকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য বিশাল জনসভার আয়োজন করে এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে রাউজান সাহিত্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে কবি নজরুল ইসলাম তৃতীয়বার চট্টগ্রামে আগমন করেন। চট্টগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের আগমন বরাবরই চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। সংস্কৃতিমনা শ্রদ্ধেয় ইউসুফ চৌধুরী কবি নজরুলের আগমনস্থল নিজ বাড়িতে নজরুল মেলার আয়োজন ও নজরুল পাঠাগার স্থাপন করে নজরুল স্মৃতি রক্ষার জন্য কর্মযোগী মানুষ হিসেবে পরিখ্যাত অধ্যায় নির্মাণ করেছেন।

এছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে অতি সুপ্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাস স্বমহিমায় ভাস্বর। সমুদ্র বন্দরের কল্যাণে ‘Gate way of the East’ খ্যাত চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ অব্দ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকের আগমন, বাণিজ্য ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ব্রিটিশ ভারতে ভৌগোলিক অবকাঠামোগত কারণে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল অতি তাৎপর্যমন্ডিত। স্বাধীনতা অব্যবহিত পরে দেশের প্রথম ইপিজেড, কাফকোসহ বিপুল দেশি-বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শিল্প এস্টেট-পার্কসহ কর্ণফুলী নদীর অপরপাড়ে স্যাটেলাইট টাউন স্থাপন চট্টগ্রাম বিশ্ববাণিজ্যের প্রসারকে প্রচন্ড শক্তিমান করেছিল। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যক রাজধানী ঘোষণার পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ চট্টগ্রামের শিল্প-বাণিজ্যিক অপার সম্ভাবনার নতুনদ্বার উম্মোচিত হয়েছিল। সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ, চট্টগ্রামের নানামুখী উন্নয়নে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা প্রষ্ঠিত হয়। তথাপিও চট্টগ্রাম ছিল দীর্ঘসময় ধরে অবহেলিত।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসেবে চট্টগ্রামবাসীর সার্বিক দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, পানি সঙ্কটসহ নানা সমস্যা চিহ্নিতকরণে প্রয়াত ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন অগ্রগন্য। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে কর্মোদ্যোগ গ্রহণ, হালদা নদীতে মৎস প্রজননের উপযোগী সংস্কার এবং উন্নয়ন, কর্ণফুলী নদীকে দখল-পরিবেশ দূষণ মুক্ত করে পরিকল্পিত নগরী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে জনগণকে সচেতন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং যুগোপযোগী কর্মকৌশল আধুনিকায়নে উচ্চকিত কন্ঠস্বর ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি হালদা নদী নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

২০০২ সালে হালদা নদীর সোনাইচর বাঁক কাটার প্রেক্ষিতে হালদার পরিবেশ রক্ষায় পূর্বকোণ পত্রিকার মাধ্যমে প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রয়াত ইউসুফ চৌধুরী। চট্টগ্রামের জনদুর্ভোগ সৃষ্টিতে দৃশ্যমান সঙ্কটগুলোকে সুস্পষ্টভাবে জনসম্মুখে প্রতিস্থাপন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে দৈনিক পূর্বকোণের অনবদ্য ভূমিকা ও এর গ্রহণযোগ্যতা চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে প্রীয়মাণ হতে সহায়ক হয়েছে। সমস্যার স্বরূপ উম্মোচন ও সমাধানের কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণে দৈনিক পূর্বকোণের লেখনি-প্রতিবেদন যুগান্তকারী অবদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

১৯৯২ সাল থেকে ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্প আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে চট্টগ্রামের প্রায় চারশত খামার এবং প্রথম গবাদি পশুর মেলার প্রধান উদ্যোক্তা খ্যাতিতে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। ডেইরি শিল্পের বিকাশে চট্টগ্রামে প্রথম তাঁর নেতৃত্বে রুগ্ন গরু নিয়ে মিছিল করা হয়। তিনি ছিলেন ডেইরি ও পোলট্রি ফার্ম এসোসিয়েশনের আমৃত্যু সভাপতি। চট্টগ্রামের বিআইটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, ভেটেরিনারী কলেজ স্থাপন এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর নিরলস জোরালো ভূমিকা পালনের জন্য ‘চট্টলদরদী’ উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি সর্বোচ্চ নিষ্ঠা-পরিশ্রম-প্রজ্ঞা-দক্ষতা-সততা ও দেশপ্রেমের অপূর্ব সম্মিলনে নিজেকে এক স্বতন্ত্র মানসপটে চিত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অসাধারণ গুণের সমীকরণে একজন সফল-সার্থক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বত্রই সমাদৃত।

১৯২১ সালের ১৯ সেপ্টম্বর চট্টগ্রামের বিখ্যাত রাউজানের ঢেউয়া হাজিপাড়া নামক অজপাড়াগাঁয়ে পিতা আলহাজ দুলামিয়া এবং মাতা আজিজা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয়া এই মহান ব্যক্তিটি অবিচল নিষ্ঠা-অক্লান্ত পরিশ্রম-সময়ানুবর্তিতা ও নিবিড় অধ্যাবসায়ের বীজাঙ্কুর চেতনায় নিজের অবস্থানকে দীপ্তিময় আলোবর্তিকায় সমাসীন করতে পেরেছিলেন। ১৯৪৩ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে উচ্চ-মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত প্রয়াত ইউসুফ চাচা জীবনে প্রথম কর্মবীর হতে পেরেছেন রাউজানের ফকিরহাটে ‘ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরি’র মাধ্যমে বইয়ের ব্যবসা শুরু করে। সেই ব্যবসায় সফল না হয়ে চট্টগ্রাম নগরের জুবলী রোডে ‘অরিয়েন্ট স্টোর’ নামে স্টেশনারি দোকান প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৪৯ সালের শেষ পর্যায়ে ‘ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব পাকিস্তান’র এজেন্সি গ্রহণ এবং সংবাদপত্র ও বই বিপণন ব্যবসায় মনোযোগী হন। পরবর্তীতে তিনি ‘নিউজ উইক’-‘রিডার্স ডাইজেস্ট’-‘উইকলি টাইম দ্য ডেইলি ডন’ পত্রিকাসমূহের এজেন্সি প্রাপ্ত হন। ‘নিউজফ্রন্ট’ নামক পুস্তক প্রতিষ্ঠান, ১৯৬১ সালে প্যাকেজিং শিল্পের উদ্যোগ, ১৯৮৪ সালে সিগনেটবক্স স্থাপনের আরাধ্য অভিজ্ঞতায় ১৯৮৬ সালে আধুনিক সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশনা ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের বিজয়বাহন। অত্যধিক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়; তিনি ‘নিউজফ্রন্ট’ থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘জীবন নির্ভর’ নাটক এবং অধ্যাপক আবুল ফজলের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ বই প্রকাশ করেন। চট্টগ্রাম তথা দেশের কৃষি-সংস্কৃতি সৃজনেও তাঁর কার্যকর অবদান সর্বত্রই গ্রহণযোগ্য।

নৈকষ্য চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরী ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পবিত্র মক্কানগরীতে ওমরাহ পালনকালে অন্তিমযাত্রার সারথি হয়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের মতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে পুণ্যতার সর্বোচ্চ আসনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। মাটি ও মানুষের প্রতি প্রগাঢ় মমত্ব-দায়িত্ববোধ জন্ম-জন্মান্তরে সময়-কালের পরিক্রমায় নতুন ধারার স্রষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে প্রয়াত ইউসুফ চৌধুরী উঁচুমার্গে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন। পরম শ্রদ্ধেয় ইউসুফ চৌধুরীর সফল ও স্বার্থক স্মারক হচ্ছে; বিবেক-আবেগ-দেশপ্রেমের চন্দ্রাতপ আচ্ছাদনে অকৃত্রিম নিষ্ঠা-মেধা-শ্রমের পরিচর্যায় নিজের আবক্ষ অপরূপ শৈলীতে নিজেই তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

উঁচুমাত্রিকতায় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের প্রণিধি অভিভাবক ও অফুরন্ত উদ্ভাবনী দীপনে কৃতাহ্নিক দেশ-সমাজ উন্নয়নে মানবিক প্রকৌশলী হিসেবে প্রয়াত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর দীপ্যমান প্রকাশ গৌরবদীপ্ত মহিমায় শুধু চট্টগ্রাম নয়; পুরো বাঙালি জাতিরাষ্ট্রকে করেছে অপরিমেয় আলোকোজ্জ্বল। আজকের দিনে মহান স্রষ্টার দরবারে তাঁর আত্মার সর্বোচ্চ শান্তির প্রার্থনা নিবেদন করছি।

লেখক: ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট