চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চাকরিজীবীদের আয়কর হিসেবের নিয়মকানুন

এবার অর্ধেক টিআইএনধারী রিটার্ন দেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১০:৫৯ অপরাহ্ণ

আয়কর খাতে রাজস্ব বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তাতে ফল পাচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নির্ধারিত বেতনের বেশি চাকরিজীবী ছাড়াও কর দিতে সক্ষম ব্যক্তির খোঁজে নানা তৎপরতার মাধ্যমে এক বছরে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর সময়সীমা শেষ হলেও ই-টিআইএনধারীর অর্ধেকের বেশি রিটার্ন দাখিল করেননি। যদিও এবার গত বছরের তুলনায়  কর আদায় কিছুটা বেড়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা শেষ হলেও ৪৬ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ২২ লাখেরও কম। দেশে বর্তমানে ৪৬ লাখের বেশি ই-টিআইএনধারী রয়েছেন। সব ই-টিআইএনধারীরই প্রতি বছর তাদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এর মধ্যে যাদের করযোগ্য আয় আছে, কেবল তাদেরই আয়কর জমা দিতে হয়।  সেক্ষেত্রে এ বছর ই-টিআইএনধারীর বড় অংশই তাদের আয়কর বিবরণী জমা দেননি।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, গত করবর্ষে রিটার্ন জমা হয়েছিল ২২ লাখ। সেই হিসাবে এবার রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও বাড়েনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থদণ্ড থাকলেও তা সত্ত্বেও করদাতার সংখ্যা না বাড়ায় চিন্তিত খোদ এনবিআর। আয় বাড়াতে না পারায় সরকারের নীতি-নির্ধারকদের চাপের মুখে রয়েছে সংস্থাটি। লক্ষ মাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় না হওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ধার করে দৈনন্দিন কার্যক্রম ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালাতে হচ্ছে সরকারকে।

এদিকে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কর কর্মকর্তাদের যথাযথ ভূমিকার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার করদাতাদের মধ্যে করভীতি থাকায়, বাধ্য না হলে তারা করের আওতায় আসতে চাইছেন না।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, করদাতাদের একটি অংশ নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দিতে না পারায় পরে জমা দেবেন বলে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। এই সংখ্যা লক্ষাধিক। তাদেরকে সম্ভাব্য রিটার্ন দাখিলকারী হিসাব করেই মূল সংখ্যা প্রায় ২২ লাখে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত বছর ২২ লাখ বলা হলেও এই সংখ্যা আসলে ২০ লাখের মতো ছিল। সেই হিসাবে এবার রিটার্ন দাখিলকারী বেড়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত বছর আয়কর দিবস পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের বিপরীতে কর আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। আর এবার কর আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। কর আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। অবশ্য এনবিআর আশা করছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল ২৩ লাখ হতে পারে।

আয়কর বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, আগেও ম্যানুয়াল পদ্ধতির টিআইএনের ক্ষেত্রে অনেকেই বছর শেষে রিটার্ন জমা দিতেন না। ওইসব টিআইএন বিভিন্ন প্রয়োজনে নেয়া হতো, কিংবা ভুয়া টিআইএন থাকত। ম্যানুয়াল পদ্ধতির হওয়ায় ওইসব ব্যক্তিকে শনাক্তও করা যেত না। টিআইএনধারীদের শনাক্ত করার কাজটি সহজ করতে অনলাইন ব্যবস্থায় টিআইএন বা ই-টিআইএন দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে এনবিআর। এতে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র যুক্ত করা হয়। ফলে এক ব্যক্তির একাধিক টিআইএন নেয়া প্রতিরোধ করার পাশাপাশি তাকে শনাক্ত করা সহজ হবে বলে মনে করেন এনবিআর। তবে বাস্তবে সেটি সম্ভব হয়নি।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দুই বছর আগে এনবিআর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে তাদের টিআইএন নিতে হবে।

এর ফলে বিশালসংখ্যক লোককে টিআইএন নিতে হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে বড় অংশেরই করযোগ্য আয় নেই। ফলে তারা রিটার্ন দিচ্ছে না। আবার টিআইএনধারীদের মধ্যে একটি অংশ মারা গেলেও কিন্তু তাদের টিআইএন বন্ধ হয়নি। কেউ চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন কিংবা কারও ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। ফলে তাদের রিটার্ন জমা হচ্ছে না কিন্তু হিসাব থেকে টিআইএন বাদ যায়নি।

অন্যদিকে জমি নিবন্ধন, ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকে বাধ্য হয়ে টিআইএন নিলেও তারা রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। এসব কারণে টিআইএন ও রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে ব্যবধান রয়ে গেছে। তবে তিনি মনে করেন, চাইলে রিটার্ন না দেয়া টিআইএনধারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট