বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের ৫৩তম শাহাদাতবার্ষিকী মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর)। বিজয়ের ঠিক ছয়দিন আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে খুলনার রূপসা নদীতে রণতরী পলাশে যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জঙ্গি বিমানের গোলার আঘাতে শহীদ হন তিনি।
১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। তিনি ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একদিন সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি বের হয়ে যান নৌঘাঁটি থেকে। পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে চলে যান ত্রিপুরা এবং যোগ দেন দুই নম্বর সেক্টরে।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে বাফার গান ও মাইন-পড জুড়ে গানবোটে রূপান্তর করে নামকরণ হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার হিসেবে।
একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর পদ্মা, পলাশ এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট ‘পানভেল’ খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঁঘাটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে অনেক উঁচুতে তিনটি জঙ্গি বিমান উড়তে দেখা যায়। শত্রুর বিমান অনুধাবন করে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্র নাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।
এর কিছুক্ষণ পর বিমানগুলো থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সৈন্যরা নিচে নেমে আসে এবং আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। গোলা সরাসরি ‘পদ্মা’র ইঞ্জিনরুমে আঘাত করলে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। এ সময় হতাহত হন অনেক নাবিক।
‘পদ্মা’র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুঁড়তে বলে তিনি ইঞ্জিনরুমে ফিরে আসেন।
কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলো চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। শহীদ হন রুহুল আমিন। পরে রূপসা নদীর পাড়ে তাকে সমাহিত করা হয়।
পূর্বকোণ/মাহমুদ