চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

সম্পর্কের ‘কালো মেঘ’ দূর করতে চায় বাংলাদেশ-ভারত

অনলাইন ডেস্ক

৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:২৮ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে যে কালো মেঘ তৈরি হয়েছে সেটি দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দুই দেশ। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক শেষে বাংলাদেশের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভারতীয় সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের মধ্যে যে মেঘ এসেছে, এ মেঘটা দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি, মেঘটা দূর করতে হবে। দুপক্ষ একমত হয়েছি, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

 

সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

 

এর আগে, বিকালে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি। দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ১৯ কূটনীতিক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। দুটো বৈঠকের বিষয়ে যমুনার গেটে ব্রিফ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির বৈঠকের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং আরও জোরদার করতে আগ্রহী। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ভারত মনিটর করেছে, দেখেছে এবং অবগত। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার্ককে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চাই। আমরা যে একসঙ্গে বিমসটেকে আছি সেটাও বলেছি। আমাদের বিষয়ে বিভিন্ন যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলার মাধ্যমে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ আমাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এগুলোর বিষয়ে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ভারতীয় সরকার কোনোভাবে দায়ী না। সরকার এগুলো করছে না, ‘ওন’ও করছে না। এগুলো মিডিয়া ও সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।

 

ভিসার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ তারা গ্রহণ করবেন।

 

বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে সৈয়দা হাসান বলেন, উপ-হাইকমিশনে সহিংস আচরণের বিষয়ে আমরা আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। আজকে যেহেতু তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও জোরদার করার কথা বলছেন, তাই আমরা ধরেই নেবো সে ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশের অবস্থানে তারা এখনও আছে। নতুন করে এটা বলা হয়নি।

 

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যে শঙ্কার কথা বলেছেন এবং অপ্রচারের জবাব বাংলাদেশ কীভাবে দিয়েছে– এমন প্রশ্নে সৈয়দা হাসান বলেন, প্রোপাগান্ডার জবাব লিখিত ও মৌখিক বহুভাবে বলেছি। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলো সাম্প্রদায়িক হিসেবে দেখানোর সুযোগ কম। সেগুলো ব্যক্তিগত এবং বেশির ভাগ রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এটার অংশ না, এবং কোনও ঘটনা বরদাস্ত করছে না, অভিযোগ এলে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে মেঘ এসেছে, এটা দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি এ মেঘটা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে দুপক্ষ একমত হয়েছি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও অনেক বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

 

তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছি। নির্বাচন অবাধ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে এবং একটা গণতান্ত্রিক দেশের দিকে যাত্রা শুরুর জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে সকলেই আমাদের পাশে থাকবে। সহায়তা করবে এবং একসঙ্গে কাজ করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

 

ইইউভুক্ত দেশের ১৯ কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠককে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আমরা কেবল বাংলাদেশে যেসব ইউরোপীয় দূতাবাস রয়েছে তাদের সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু আজকের বৈঠকে দিল্লিতে আছেন এমন রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি যে ইইউ একটি ইউনিয়ন হিসেবে এত রাষ্ট্রদূত-প্রতিনিধি কোনও সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন। নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় এটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি এবং বিশ্বাস করি।

 

বৈঠকে দুপক্ষ কথা বলেছেন জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটাবে, সে জন্য ইইউ থেকে বাণিজ্য সুবিধা তাদের মার্কেটে প্রাপ্তির ব্যাপারে কথা বলেছি। জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কথা বলেছি।

 

তিনি বলেন, তারা আমাদের কাছে মানবাধিকারের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। উত্তরে আমরা বলেছি প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অবশ্যই একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে যাবো।

 

রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইসিটি আদালতের কথা জানিয়েছি। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন কোন কোন ক্ষেত্রে কী পদ্ধতিতে কাজ করছে তা জানিয়েছি। শ্রম অধিকার নিয়ে ইইউকে বলেছি, সেখানে একটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে আর সস্তা শ্রমের দেশ শুনতে না হয়, বরং শ্রমিক স্বার্থ সুসংহত থাকে, সেটি কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবো।

 

ইইউভুক্ত অনেক দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে দিল্লিতে যেতে হয়। এটা অনেক সময় ঝামেলা হয়ে যায়। তাদের কাছে সুস্পষ্ট অনুরোধ ছিল তারা যেন ভিসা সেন্টারগুলো দিল্লি থেকে অন্যত্র স্থাপন করে।

 

বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমাগত অপপ্রচারের বিষয়ে ইইউকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কেন জুলাইয়ে বিপ্লব হলো, তার আকাঙ্ক্ষা কী? সেটাকে ধারণ করে বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা হচ্ছে, সেটি জানানো হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট